চলমান সংবাদ

কোর্ট হিলের অবৈধ স্থাপনা সরাতে ২৫ দফতরের চিঠি

চট্টগ্রামের কোর্ট হিল নিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির দ্বন্দ্বের মধ্যে ওই পাহাড়ের সরকারি প্রশাসনিক কার্যালয়ের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে অপরিকল্পিত এবং অনুমোদনহীন স্থাপনাগুলো অপসারণের জন্য সরকারি ২৫টি দফতর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের দেয়া চিঠিতে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা এবং সৌন্দর্য রক্ষার্থে অপরিকল্পিত ও অনুমোদনহীন স্থাপনাগুলো অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বা সরকারি কোনও সংস্থার অনুমোদন ছাড়া ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরিকল্পিত অবৈধ স্থাপনা না গড়তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। চিঠি দেওয়া সরকারি দফতরগুলো হলো- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র- চট্টগ্রাম, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-৯, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং পুলিশ অধিদফতর। প্রসঙ্গত সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক ওই পাহাড়ের ১নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে দুইটি ভবন নির্মাণ চেষ্টার প্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারি করা পত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ১নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে নতুন কোনও ভবন নির্মাণ না করা এবং ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। আইনজীবী সমিতির নতুন দুটি ভবন নির্মাণ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি। জেলা প্রশাসন ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রস্তাবিত ভবন দুটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অনুমোদনহীন। আইনজীবী সমিতির মতে, অনুমোদন নিয়েই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে পরীর পাহাড়ে ১নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ফাঁকা জায়গায় দুটি বহুতল ভবন নির্মাণে পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দিলে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। আইনজীবীদের দরপত্র আহ্বান বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরে সরকারের ২৫টি দফতর পরীর পাহাড় থেকে অবৈধ ও অনুমোদনহীন স্থাপনা সরাতে উদ্যোগ নিয়ে কয়েক দফা চিঠি দেয়। চট্টগ্রাম আদালত এবং জেলা প্রশাসনের কার্যালয় নিয়ে থাকা পাহাড়টিকে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে উল্লেখ না করতে ১০ নভেম্বর চট্টগ্রামের দেওয়ানী আদালতের প্রথম সহকারী জজ ইসরাত জাহান অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। জানা যায়, এই পাহাড়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় প্রায় ১৩০ বছর আগে। বর্তমানে এখানে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন, আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশকিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে। এগুলো ছাড়াও এর চারদিকে অপরিকল্পিত ও অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ওই পাহাড়ে মানুষের ভিড়ের পাশপাশি রাস্তার দুইপাশে গাড়ি পার্কিং, বিভিন্ন দোকানপাট, খাবার হোটেল, কম্পিউটার দোকান, এমনকি কাঁচাবাজার ও শুঁটকির দোকান পর্যন্ত রয়েছে। নানা রকম দোকানপাট ও স্থাপনা মিলিয়ে প্রায় ৩৫০টি অবৈধ স্থাপনা আছে ঐতিহ্যবাহি পাহাড়টিতে। এসব স্থাপনা পাহাড়ের সৌন্দর্যকে ম্লান করছে, নষ্ট করছে পরিবেশ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বর্তমানে পাহাড়ে গড়ে ওঠা এসব জঞ্জাল ও স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নিলেও নানামুখি বাধা এবং দ্বন্দ্বের কারণে উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা শ্রেণির জমির কোনরূপ পরিবর্তন করা যাবে না। এটা আইনি বাধ্যবাধকতা। এই পাহাড়ে ওঠার পথে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন লাগোয়া পথের পাশে আইনজীবী সমিতির ভবন। সেখানে পরপর এনেক্স-১, এনেক্স-২, শাপলা ও দোয়েল ভবন। পাঁচটি ভবনের কোনোটিতে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। পাহাড় নিয়ে ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স এবং পরিবেশ অধিদফতর তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে আইনজীবীদের ৫টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যার ফলে সেখানে যেকোনও সময় অগ্নিকান্ড, পাহাড় ধস ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় নতুন করে আরও দুটি ভবন নির্মাণ হলে আরও ঝুঁকিতে পড়বে পাহাড়টি। যেহেতু ভবন দুটির জায়গা পাহাড় শ্রেণির জমি। তাই চাইলেও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু করা যাবে না। অবৈধ স্থাপনার কারণে এই পাহাড়ের ওঠানামার রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় অগ্নিকান্ডসহ যেকোনও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে উদ্ধারকারী টিম ও যানবাহন দ্রুততার সঙ্গে এ স্থানে আসতে পারে না। এসব অবৈধ স্থাপনা সরাতে ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
# ১১.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #