চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজের তিনদিন পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার

চট্টগ্রামে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজের তিনদিন পর অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে ১০ বছরের শিশু কামালের মরদেহ। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুরে এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের পেছনে মির্জা খাল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের মির্জা খালে ভেসে উঠে শিশু কামালের মরদেহ। এর আগে গত সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর ষোলশহরে চশমা খালের ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হয় শিশু মো. কামাল। মা হারা শিশু কামালের ভবঘুরে স্বভাবের বাবা আবু কাউসারের সঙ্গে নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে ভাসমানভাবে থাকত। সন্তান নিখোঁজের ঘটনা জেনে নিজেই খালে ও সংলগ্ন নালায় ময়লা-আবর্জনার ভেতর খোঁজাখুঁজি করেন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলসহ তিনটি ইউনিটের সদস্যদের পাশপাশি তল্লাশি অভিযানে যোগ দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও। ওই ড্রেনে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা থাকায় উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে বেশ বেগ পেতে হয়। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ‘মির্জা খালে একটি মরদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। আমাদের ধারণা হয়েছিল, সেটি নিখোঁজ কামালের মরদেহ হতে পারে। পুলিশ কামালের বাবা ও একইসঙ্গে ড্রেনে ভেসে গিয়েও বেঁচে যাওয়া কামালের বন্ধু রাকিবকে ডেকে আনে। তারা লাশটি কামালের বলে শনাক্ত করে। মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় শুলকবহর ওয়ার্ডের সহকারী পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজার মো. শাহীন বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন প্রথম দেখতে পায়, উপুড় হয়ে একটি মরদেহ খালে ভাসছে। শুধু পিঠ দেখা যাচ্ছিল। তারা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমরাও ঘটনাস্থলে আসি। পুলিশ লাশ উদ্ধার শিশুটির বাবা ও তার বন্ধু রাকিবকে দেখানো হলে লাশটি কামালের বলে তারা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, লাশটি তিনদিন পানিতে থাকায় ফুলে গিয়েছিল। শিশুটি যেখানে পড়ে গিয়েছিল, তার থেকে মির্জা খালে যেখানে তার মরদেহ পাওয়া গেছে এর দূরত্ব প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার হবে। সন্তানের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামালের বাবা আবু কাউসার। মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের হাতে পোশাক দেখেই তিনি নিশ্চিত করেন, সেগুলো তার ছেলে কামালের পরনে ছিল। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কামালের বন্ধু রাকিব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলে, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে তারা ষোলশহর দুই নম্বর গেইট থেকে দক্ষিণ দিকে চশমা খালে সাঁতার কেটে যাওয়ার সময় তারা ফোম জাতীয় একটি বস্তু পায়। সেটি নিয়ে খেলতে খেলতে তারা এগিয়ে যাচ্ছিল। রেলস্টেশনের কাছে যেখানে খালের সঙ্গে নালা মিশেছে, সেখানে ¯্রােত বেশি ছিল। ¯্রােতের টানে কামাল তলিয়ে যায়। লোহার একটি খুঁটির সঙ্গে আটকে যাওয়ায় রাকিব উঠে আসতে সক্ষম হয়। প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম নগরীতে উন্মুক্ত নালা ও খালে পড়ে গত চার মাসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক’কে দায়ী করেছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে নিহত হন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯)। গত ২৫ আগস্ট ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে মুরাদপুরে নালায় পড়ে তলিয়ে যান সালেহ আহমদ নামের এক সবজি ব্যবসায়ী। যার খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ৩০ জুন চশমা খালে যাত্রীবোঝাই সিএনজি অটোরিকশা পড়ে চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগম (৬৫) নিহত হন। তারও আগে গত বছর হালিশহর ইসলামিয়া ব্রিক ফিল্ড এলাকায় মহেশখালে পড়ে দুই কিশোরীর মৃত্যু হয়।
# ০৯.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #