চলমান সংবাদ

হাফ ভাড়া: বাস্তবায়নে পরিবহন নেতাদের ১১ দফা সুপারিশ

হাফ ভাড়া: বাস্তবায়ন নিয়ে ১১ মত পরিবহন নেতাদের

হাফ ভাড়া নিয়ে শনিবার পরিবহন নেতাদের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা।

খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘সরকার ছাত্রদের দাবি যৌক্তিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে। ঢাকার ৮০ ভাগ মালিক গরিব। হাফ ভাড়া নিলে মালিকদের যে ক্ষতি হবে, তা সরকার কীভাবে পূরণ করবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। সবার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। গণপরিবহনে হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে পরিবহন নেতাদের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের জন্য কীভাবে হাফ ভাড়া বাস্তবায়ন হবে, সেটি নির্ধারণে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে। বিআরটিএর সঙ্গে আলোচনায় তারা ১১দফা সুপারিশ করেন। সভায় পরিবহন নেতারা জানান, হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকরা যুক্ত নন, তবে আদায়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থী এবং যাত্রীদের ক্ষোভের প্রধান টার্গেট হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। এ কারণে প্রতিদিন কিছু না কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থা থেকে পরিবহন শ্রমিকরা মুক্তি চান।

১১ সুপারিশ

বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পরিবহন নেতারা ১১টি সুপারিশ করেন। এগুলো হলো:

১. সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিসি পরিচালিত বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে কীভাবে, তা জানা থাকলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের জন্য ভালো হবে। তা না হলে ‌‌‌‌‌‌‘বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া, অন্য বাসগুলোতে কেন নয়’ বলে উত্তেজনা আরও বাড়বে।

২. হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীরা দেবে। বাকি টাকা পূরণ করা হবে কীভাবে এবং কোন তহবিল থেকে, তা স্পষ্ট করতে হবে।

৩. সারা দেশে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার জন্য বাস ব্যবহার করেন কতজন, হাফ ভাড়া নিলে ভর্তুকি কত টাকা দিতে হবে, সেটি আমলে নিতে হবে।

৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা কীভাবে কনসেশন (ছাড়) দেয়, তা জানতে হবে।

৫. শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন কার্ড চালু করা দরকার, যা প্রতিষ্ঠান দেবে। তাহলে শিক্ষার্থী কোন প্রতিষ্ঠানের সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

৬. এ বছর শিক্ষা বাজেট ৭১ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিলে মোট বাজেট দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। প্রতি বছর শিক্ষা বাজেট থেকে বেশ কিছু টাকা ফেরত যায়। এ টাকাটা পরিবহন ভর্তুকি হিসেবে দেয়া যেতে পারে।

৭. যেসব পরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর হবে, সেসব পরিবহনে কিছু বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৮. দেশে সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে। একটি যুক্তিসংগত নিয়ম কার্যকর হলে সেটি শিক্ষার্থী ও পরিবহন শ্রমিক উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

৯. বড় শহরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামেই নগর পরিবহন আছে। বাকি সারা দেশে সাধারণত স্বল্প দূরত্বে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে।

১০. সরকার, পরিবহন মালিক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে বিভিন্ন স্তরে মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে। তাহলে যেকোনো উত্তেজনা সহজেই প্রশমন করা সম্ভব হবে।

১১. সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন কম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশি। উভয় ক্ষেত্রে যারা গণপরিবহন ব্যবহার করেন তাদের জন্য পরিবহন ফি ঠিক করে সেটি দিয়ে কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করা যেতে পারে।

বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বাসে হাফ ভাড়ার সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে কনসেশন দেয়ার প্রস্তাব এসেছে। কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত ছাত্র, কতজন বাস ব্যবহার করে তার একটা পরিসংখ্যান চেয়েছেন নেতারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই তথ্য দেবে।’

টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাসে হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে পরিবহন নেতারা আন্তরিক। কিন্তু তাদের যে ক্ষতি হবে সেটি কীভাবে পূরণ করা হবে, কত ভর্তুকি দেবে, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও পরিবহনে সম্পৃক্তদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে। সরকারকে টাস্কফোর্সের বিষয়ে জানাব।’

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘সরকার ছাত্রদের দাবি যৌক্তিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে। ঢাকার ৮০ ভাগ মালিক গরিব।

‌‘হাফ ভাড়া নিলে মালিকদের যে ক্ষতি হবে, তা সরকার কীভাবে পূরণ করবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। সবার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি।’

শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে এই পরিবহন নেতা বলেন, ‘হাফ ভাড়ার দাবিতে বাস ভাঙচুর, শ্রমিকদের মারধর অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যান।’

টাস্কফোর্স কবে গঠন করা হবে, এমন প্রশ্নে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা নতুন প্রস্তাব। টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।’

শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি সুরাহা করতে শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিআরটিএ কার্যালয়ে বাসমালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে বিআরটিএসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেন।

সেখান থেকে বিষয়টি নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসার কথা ছিল।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন বাবু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, বিআরটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার মো. আশফাকসহ বিআরটিএর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।