চলমান সংবাদ

লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া: চিকিৎসক

খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)
এনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

এর আগে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই প্রথম তাঁর চিকিৎসকদের তরফ থেকে এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হলো। রবিবার সন্ধ্যায় একটি সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। তবে যে হাসপাতালে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন, বেসরকারি সেই হাসপাতালের কোন চিকিৎসক সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না। খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তারা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা করার জন্য পরিবারকে বলেছেন।

তেরই নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেই সময় থেকে তার শরীরে তিন দফায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। আবার রক্তক্ষরণ হলে তার মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে বলে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ”আমরা আশঙ্কা করছি যে, তার শরীরে আবার যদি ব্লিডিং হয়, সেটা কন্ট্রোল করা, সেটাকে বন্ধ করার মতো সাপোর্টিভ প্রযুক্তি আমাদের এখানে নেই। সেক্ষেত্রে ওনার ব্লিডিং হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে,” বলছেন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী।

লিভার সিরোসিস এমন একটি রোগ, যার ফলে লিভার বা যকৃৎ তার স্বাভাবিক কাজগুলো, যেমন বিপাক ক্রিয়া, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি, ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি করতে পারে না। লিভার সিরোসিস হলে লিভার বা যকৃতে সূক্ষ্ম সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিসের বিস্তার ঘটে। যকৃতে তখন ছোট ছোট দানা বাঁধে। আস্তে আস্তে সেটির বিস্তার ঘটতে থাকে।

ফাইব্রোসিস ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আর লিভার নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে না, ফলে লিভার সংকুচিত হয়ে পড়ে।

খালেদা জিয়া সর্বশেষ গত ১৩ই নভেম্বর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।
খালেদা জিয়া সর্বশেষ গত ১৩ই নভেম্বর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।

খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার শরীরের কোলনে রক্ত জমাট বেধে আছে। সর্বশেষ কোলনোস্কোপি করার সময় রক্ত জমাট বেধে থাকার কারণে কী কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সেই উৎসও শনাক্ত করা যায়নি। তবে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ যেটুকু করনীয় আছে, সেটা ব্যবহার করে তারা আপাতত রক্তক্ষরণ বন্ধ করেছেন। কিন্তু সেখানে আবারও রক্তক্ষরণের ঝুঁকি আছে।

” আমরা এই জন্য অনেকটা অসহায় বোধ করছি যে, ওনার তিন দফা ব্লিডিং হয়েছে। আবার ব্লিডিং হলে ওনার মতো বয়সের একজন রোগীর, যার হার্টফেইলিওর আছে, যার হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যার ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ আছে, এতো জটিল রোগীকে কীভাবে আমরা রক্ষা করবো? এখন উনি স্টেবল আছেন, কিন্তু একটা সময় আসতে পারে যে, তখন হয়তো শিফট করাটা কঠিন হয়ে যেতে পারে,” বলছেন ডা. সিদ্দিকী।

খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে এখন সাত দশমিক আটে রয়েছে।

চিকিৎিসকরা বলছেন, এখন তার চিকিৎসার জন্য TIPS নামের একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। এটির মাধ্যমে লিভারের ভিতরে খাবার পরিশোধনের যে ব্যবস্থাপনা আছে, লিভার সিরোসিসের কারণে যেখাবে বাধা বা জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেখানে একটি সংযোগ বা বাইপাস তৈরি করে দেয়া হয়। এর ফলে লিভারের ভেতরে চাপ কমে যায়, রক্তক্ষরণ হয় না।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. কিবরিয়া মহসিন, অধ্যাপক ডা. শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক ডা. মোঃ নুরুদ্দিন ও ডা. আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা