মতামত

মোঃ ফরহাদ কিভাবে ‘মোঃ ফরহাদ’ হলেন? (শেষ পর্ব)

-এম. এম. আকাশ

উপসংহারের পরিবর্তে

আমার এই নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক স্মৃতিচারণে মোহাম্মদ ফরহাদের কৃতিত্ব এবং অবদানগুলিই আমি যথাসাধ্য তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। এই প্রত্যাশা নিয়ে যে আগামী দিনের বাম আন্দোলনের কাণ্ডারীরা এ থেকে হয়তো কিছু শিক্ষনীয় পাবেন। মোঃ ফরহাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু তা নিয়ে আলোচনার যোগ্যতা আমার নেই। সেই চেষ্টাও তাই এখানে করিনি। সাধারণ ভাবে মনে করি যে, বাংলাদেশের জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব এখনও সুসম্পন্ন হয় নি। এখনো এই দেশে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সঙ্গে জনগণের আর্থসামাজিক মুক্তির বিষয়টি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত হয়েই রয়েছে। গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি এই দ্বৈতকর্তব্যের পটভূমিতে একটি বিপ্লবী স্বার্থক অর্কেষ্ট্রা রচনার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি বাংলাদেশে আছে বলেই মনে হয় অভাব শুধু সুদক্ষ অর্কেষ্ট্রা পরিচালকের, যে বা যারা এই উপাদানগুলিকে এক জায়গায় সন্নিবেশিত করে এক তালে পরিচালিত করতে সক্ষম হবেন। এ ক্ষেত্রে মোহাম্মদ ফরহাদের মত দক্ষ পরিচালকের আজ বড়ই প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্য থেকেই নতুন মোহাম্মদ ফরহাদের জন্ম হবে সেই প্রত্যাশাতেই এই লেখা লিখিত হলো। প্রায়ই নতুন প্রজন্মের প্রগতিশীল কর্মীরা আমায় জিজ্ঞাসা করেন, “মোঃ ফরহাদ কি ভাবে মোঃ ফরহাদ হলেন?” এ থেকে বুঝতে পারি তাদের একটা “রোল মডেলের” আকাংখা রয়েছে এবং সেই রোল মডেলে পরিণত হওয়ার সহজ একটি রাস্তা তারা আমাকে বাৎলে দিতে বলছে। দুর্ভাগ্য যে আমাদের এই উত্তর আধুনিক যুগে আমরা কোন রোল মডেল আমাদের তরুণদের দেখাতে পারছি না। কিন্তু এই লেখাটি যদি তারা কেউ ধৈর্য ধরে পাঠ করেন তাহলে আশা করি তারা বুঝতে পারবেন ফরহাদ যেমন তার মত করেই ফরহাদ হয়ে উঠেছিলেন অর্থাৎ যেমন ছিল তার কতকগুলি বিশিষ্ট একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথÑ তেমনি তার মধ্যে আবার কতকগুলি সাধারণ মুহুর্ত ও বিকাশের সাধারণ স্তরও ছিল বিদ্যমান। সেই সাধারণ মুহুর্তগুলিকেই এই লেখায় ‘ফোকাস’ করা হয়েছে।

আমি এই ছোট্ট প্রবন্ধে তিনটি সাধারণ স্তর বা মুহুর্তকে চিহ্নিত করার প্রয়াস পেয়েছি। প্রথম স্তরে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করা যাবে মোহাম্মদ ফরহাদের বিপ্লবী আদর্শে দীক্ষা ও বিপ্লবী হিসাবে উত্থানের মুহুর্তটি। দ্বিতীয় স্তর বা দ্বিতীয় মুহুর্তটি হচ্ছে বিপ্লবী গুনাবলীর চর্চা, তার প্রয়োগ ও নতুন গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে যুবক ফরহাদের বিপ্লবী পার্টির নেতায় পরিণত হওয়ার বিষয়টি। আর সর্বশেষ তৃতীয় স্তরে পরিণত কমরেড ফরহাদ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন “জাতীয় নেতা” হিসাবে। সেখানে তার অর্জন শুধু পার্টির নেতা হিসাবে নয়, জাতীয় নেতা হিসাবে আরো উঁচুতে প্রতিষ্ঠিত এক অর্জন। এই তিন মুহুর্ত তথা, “বিপ্লবদীক্ষা”, “বিপ্লব চর্চা”, এবং “জাতীয় নেতা হওয়া” থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনের মোহাম্মদ ফরহাদরা একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের দুঃখ ঘুচাবেন এটাই প্রত্যাশা।

লেখকঃ রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পড়ুনঃ মোঃ ফরহাদ কিভাবে ‘মোঃ ফরহাদ’ হলেন? (৩য় পর্ব)