চলমান সংবাদ

নানা আয়োজনে-উৎসবে ৫৬তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত

উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ৫৬তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার কারণে সরগরম হয়ে উঠতে পারেনি চবি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিতে পুরো ক্যাম্পাস। প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর চবি যেন মিলনমেলায় পরিনত হয়। উৎসবমুখর এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নিজের পছন্দমতো সেজেছেন প্রাক্তণ-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। গানে-আড্ডায় মেতে উঠেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬তম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে এক আনন্দ র‌্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় জারুলতলায় কেক কেটে জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে এবং প্রক্টর ড. রবিউল হোসেন ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. বেনু কুমার দে, সাবেক উপাচার্য আনওয়ারুল আজিম আরিফ, ড. এম বদিউল আলম, এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি সাবেক মূখ্য সচিব ড, আবদুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম, চাকসুর সাবেক ভিপি মাজহারুল হক শাহ, চাকসুর ভিপি নাজিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার এস এম মনিরুল হাসান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. মহিবুল আজিজ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গত ৫৫ বছরের পথ চলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও জাতি গঠন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, দক্ষ জনগোষ্ঠি সৃষ্টি এবং দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। এই বিশ^বিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রী সারা বিশ্বময় ছড়িয়ে আছে, যারা মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। অনেকে রাজনীতিতেও তাদের অবস্থান সুসংহত করেছে। অনেক গবেষক গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য নয় মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ^বিদ্যালয় শুধু পাঠদান ও সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য নয়, সেখানে পাঠদান হবে, ডিগ্রি প্রদান করা হবে। সেখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, সংস্কৃতি, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তমতের চর্চা হবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের উদ্যোগ নিবে- এভাবে তাদের মেধা ও মনন শাণিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি এসব না করে তবে ঢাকা শহরের গার্মেন্টস-মার্কেটের উপরে গড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এর কোন তফাৎ থাকবে না। এখানে মুক্ত সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। ক্যাম্পাসে হিন্দি, ইংরেজি সংস্কৃতির চর্চা না করে রবীন্দ্র, নজরুল জয়ন্তী উদযাপনের অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আবহমান বাংলার সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। হিন্দি বা ইংরেজি গানের চর্চা নয়। এখানে পহেলা বৈশাখে এই ক্যাম্পাস সাজবে বর্ণিল সাজে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি জ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি। জ্ঞানভিত্তিক-ন্যায়ভিত্তিক বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া গণতন্ত্র সুসংহত হয়না, দেশ এগিয়ে যায় না। যেখানে মুক্তমতের চর্চা হয় না সেখানে সমাজ আগায় না। অনেক দেশে মুক্তমতের দমন করা হয়। আমরা চাই একটি বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রেখে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আলোকিত করবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে অনেক অম্ল মধুর স্মৃতি রয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, চাকসু ভবনের সামনে থেকে ১৯৮৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর আমাকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্ঠা চালানো হয়েছিল। তখন চট্টগ্রাম শহরে খবর রটেছিল আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার শরীরে এখনো বহু নির্যাতনের দাগ আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) না হওয়ায় আক্ষেপ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন চবি ছাত্র ছিলাম সেই ৩৩-৩৪ বছর আগে আমরাও একটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) জন্য দাবি জানিয়েছিলাম। তবে সেটি এখনও হয়নি। অন্য অ্যালামনাইদের মতো আমিও চাই চট্টগ্রাম শহরে টিএসসি করা হোক। তিনি বলেন, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সার্বিক উন্নয়ন নয়। তাই গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের। বছরে অন্তত দুইটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করা হোক।
# ১৮.১১.২০২১ চট্টগ্রাম #