ঢাকার নিম্ন আদালতের একজন বিচারকের ক্ষমতা ‘সাময়িকভাবে প্রত্যাহার’ করা হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর এই বিচারকের সাম্প্রতিক এক রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে ওই বিচারকের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ কেড়ে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়া হবে বলে আইনমন্ত্রী বক্তব্য দেবার একদিন পরই সুপ্রিম কোর্ট এমন বিজ্ঞপ্তি দিল।

বাংলাদেশে বহুল আলোচিত বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলাটির রায় দেয়া হয় গত বৃহস্পতিবার। রায়ে অভিযুক্তদের সবাইকে খালাস দেয়া হয়। পরে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বের হয়, বিচারক ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছেন, ধর্ষণের ঘটনায় ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে যেন মামলা না নেয়া হয়।

কারণ এতে আদালতের সময় ক্ষেপণ হয়, ওই বিচারকের পর্যবেক্ষণকে উদ্ধৃত করে লিখেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম।

এ নিয়ে পরে বাংলাদেশে ব্যপক প্রতিবাদ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লেখালেখি হলে, শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন “এই পর্যবেক্ষণ অসাংবিধানিক এবং বেআইনি”। তিনি উল্লেখ করেন, তিনি ওই বিচারকের “বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিতে” প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেবেন।

এর একদিন পরই দেখা গেল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিম্ন আদালতের বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা ‘সাময়িকভাবে প্রত্যাহার’ করেছেন। তাকে তার বর্তমান কর্মস্থল থেকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সু্প্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলেন, প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সাথে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রবিবার সকাল সাড়ে নটার দিকে তাকে আদালতে না বসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তাকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

রেইনট্রি মামলার রায়:

ঢাকার বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে চার বছর আগে দু’জন তরুনীকে ধর্ষণের আলোচিত মামলায় গত বৃহস্পতিবার আদালত অভিযুক্ত আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ জন আসামীর সব ক’জনকেই খালাস দেন।

তাদের খালাস পাওয়ার ক্ষেত্রে অভিযোগের সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ার কথা বলেছে আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা দায়ের করে মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয় এবং তাতে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

ওই পর্যবেক্ষণেই আদালত ধর্ষণের ঘটনায় ৭২ ঘন্টার মধ্যে মামলা করার পরামর্শ দেন।

নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিধান বাতিলের দাবি:

বিচারকের এমন পর্যবেক্ষণের পর থেকেই নারী অধিকারকর্মীরা এর ব্যাপক সমালোচনা করেন।

এই রায় এবং আদালতের পর্যবেক্ষণে ক্ষুব্ধ নারী অধিকারকর্মীরা শুক্রবার ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো আইনের বিতর্কিত ধারাটির কারণে কোন নারী ধর্ষণের অভিযোগ তুললে, সেই নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা তাকে দুশ্চরিত্র প্রমাণের সুযোগ রয়েছে, অভিযোগ নারী অধিকারকর্মীদের।

বিতর্কের প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ আইনে ধর্ষণের অভিযোগ বিচারের ক্ষেত্রে নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে ধারা রয়েছে, সেই ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তিনি জানিয়েছেন, ধারাটি বাতিলের প্রস্তাবসহ আইনের সংশোধনী বিল তারা জানুয়ারি মাসে সংসদের অধিবেশনে উত্থাপন করবেন।