চলমান সংবাদ

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সরকারি হিসাব নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক কেন

 

মাথাপিছু আয়ে গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। (ফাইল ফটো)
মাথাপিছু আয় যা দেখানো হয়, তাতে নিম্নআয়ের মানুষের আয়ের চিত্র পাওয়া যায় না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিবিসিকে বলেছেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস এর হিসাবে তারা দেখেছেন, এবার গড় মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করে শীঘ্রই এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এখন মাথাপিছু আয় যা বলা হচ্ছে, তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো থেকেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেশি বলে অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন। বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক হয়েছে। এবারও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। এই হিসাব কীভাবে করা হয়-এই প্রশ্নেও নানা আলোচনা রয়েছে।

বিতর্ক কেন?

মাথাপিছু আয়ের সরকারি হিসাবকে কাগজেকলমে হিসাব বলে বর্ননা করে থাকেন অর্থনীতিবিদদের অনেকে। অর্থনীতিবিদ ড: ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, এই পরিসংখ্যানে দেশের মানুষের আয়ের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। এর পেছনে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে দ্রুত ধনী এবং অতি ধনী হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একইসাথে সমাজে বৈষম্য এবং মানুষের আয়ের ফারাক অনেক বেশি হচ্ছে। “এই পরিস্থিতির প্রতিফলন সরকারি পরিসংখ্যানে বা হিসাবে আসছে না। সেজন্য তা মানুষের কাছে গুরুত্ব পায় না” বলে মন্তব্য করেন ড: ফাহামিদা খাতুন।

বাংলাদেশের টাকা, মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
গড় মাথাপিছু আয়ের সরকারি হিসাবে দেশের অগ্রগতির একটা ধারণা পাওয়া যায় বলে কর্মকর্তা মনে করেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন মাথাপিছু আয়ের পরিসংখ্যান তৈরির পদ্ধতি নিয়ে। তিনি বলেন, এক বছরে জাতীয় আয় যা আসে, সেটাকে অন্যতম ভিত্তি হিসাবে নিয়ে মাথাপিছু আয় বের করা হয়। এমন বক্তব্যের ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসাবে বলেন, “কোন বন কেটে শিল্প কারখানা করা হলে, সেই কারখানার আয় জাতীয় আয়ের হিসাবে যুক্ত করা হয়। কিন্তু বনের ক্ষতির বিষয়টা অর্থনৈতিক সেই হিসাবে আসে না। এ ধরনের অনেক বিষয় রয়েছে।” সেজন্য পরিসংখ্যান তৈরির পদ্ধতিতে গলদ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দেশে যেহেতু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক, ফলে মাথাপিছু আয়ের হিসাব নিয়ে বিভিন্ন রকম বক্তব্য আসতে পারে। তবে এর মধ্যমে একটা ধারণা পাওয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা নির্মাণ কাজ করছেন। (ফাইল ফটো)
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যে রেমিট্যান্স পাঠান, সেটা জাতীয় আয়ের অন্যতম ভিত্তি।

মাথাপিছু আয়ের হিসাব কীভাবে তৈরি করা হয়?

বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস এই হিসাব করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এক বছরে দেশজ উৎপাদন থেকে যে আয় হয়, তার সাথে রেমিট্যান্স যোগ করে জাতীয় আয় বের করা হয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে গড় মাথাপিছু বের করা হয়। যদিও এভাবে প্রকৃত চিত্র পাওয়া নিয়ে অর্থনীতিবিদের প্রশ্ন থাকছেই। কিন্তু মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এই পদ্ধতি জাতিসংঘ স্বীকৃত। বিশ্বের সব দেশেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

এবার বিতর্ক আরও বেড়েছে

অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলেছেন, গত অর্থবছরের তুলনায় এবার মাথাপিছু আয় একলাফে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ড: ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, যেহেতু ধনী এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বৈষম্য বা ফারাক অনেক বেড়েছে। ফলে এখন যে মাথাপিছু আয় দেখানো হচ্ছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকাটা স্বাভাবিক। পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রতি দশ বছর পর-পর দেশের অর্তনীতির সূচকের ভিত্তি বছর পরিবর্তন করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে নতুন ভিত্তি বছর হিসাবে ধরা হয়েছে। এতদিন এই ভিত্তি বছর ছিল ২০০৫-০৬। কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন ভিত্তি বছরে কৃষি, শিল্প, এবং ডিজিটাল খাতে উৎপাদন ও আয় বেড়েছে। এরসাথে রেমিট্যান্স বেড়েছিল। সব মিলিয়ে জাতীয় আয় বেড়ে যাওয়ায় এবার গড় মাথাপিছু আয় বেশি বেড়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, এই হিসাব দিয়ে অন্যদেশের সাথে তুলনা করা যায়। সেজন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন। মাথাপিছু আয়ের হিসাব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিভিন্ন সময় বিতর্ক হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মনে করেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক করা হয় রাজনৈতিক চিন্তা থেকে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা