চলমান সংবাদ

পরিবহন ধর্মঘটের ২য় দিনে প্রায় অচল

-চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জটের শংকা

যাত্রীদের চরম ভোগান্তি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও প্রায় অচল ছিল চট্টগ্রাম। গণপরিবহন না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে কর্মজীবীদের। এদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে গতকাল শনিবারও চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল। বন্দরে কোনো কন্টেইনার আনা-নেওয়া করা যায়নি বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে; শঙ্কা তৈরি হয়েছে কন্টেইনার জট তৈরির। ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়ে নিজেরা ক্ষতির সম্মুখীন তো হবেনই, সঙ্গে ভোক্তারাও এর শিকার হবেন বলে ব্যবসায়ীদের শংকা। অন্যদিকে শনিবার (৬ নভেম্বর) গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীদের পোহাতে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। নগরের মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের। সিএনজি অটোরিকশায় যারা উঠছেন, তাদেরকে পড়তে হয়েছে শ্রমিকদের তোপের মুখে। নগরের টাইগারপাস মোড়ে সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এসময় বিভিন্ন ব্যক্তিগত পরিবহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে ট্রাফিক পুলিশ গিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। চট্টগ্রাম শহর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। নগরের অলংকার ও একে খান মোড়, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, নতুন ব্রিজ এলাকায় বাসের সব কাউন্টার বন্ধ ছিল। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ। পরিবহন বন্ধ থাকায় ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে সব পণ্যের দাম। আড়তদাররা জানান, ধর্মঘট খুলে দিলে বাজার ফের স্বাভাবিক হবে- সেই আশায় পণ্য ক্রয় বন্ধ রেখেছেন ক্রেতারা। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় পণ্য বেচা-কেনায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। চাল, ডাল, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের দাম পাইকারি বাজারে ২-৩ টাকা বাড়তি এখন। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পড়েছে বাড়তি চাপ। রেল স্টেশনে মানুষেরও উপচেপড়া ভিড়। নিজ গন্তব্যে যেতে বাস না পেয়ে তারা ছুটছেন শেষ ভরসাস্থল রেল স্টেশনে। এদিকে পরিবহণ ভোগান্তির কারণে যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেলে যোগ করা হয়েছে বাড়তি কোচ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আনসার আলী বলেন, ‘পরিবহণ বন্ধ থাকায় রেলের ওপর চাপ স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। চাপ সামাল দিতে আমরা অতিরিক্ত দুই-একটি করে বাড়তি কোচ যোগ করেছি। সামাল দেয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। তারপরও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মো. মুছা বলেন, আমাদের দাবি ডিজেলের দাম কমানো। যদি গাড়ির ভাড়া বাড়ানো হয়, সে ক্ষেত্রে শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে। যার দায় সরকার বা মালিকপক্ষ কেউ নিবে না। তাই আমাদের একটাই দাবি, ডিজেলের দামে ভর্তুকি দেওয়া হোক। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে কোনো ডেলিভারি হয়নি। বেসরকারি ডিপো থেকেও কোনো কন্টেইনারও বন্দরে আসেনি। ধর্মঘট চলতে থাকলে সামনে কন্টেইনার জট দেখা দিতে পারে। বন্দরের ক্যাপাসিটি কমবে এবং অপারেশনাল কার্যক্রমে ধীর গতি আসবে, জাহাজের গড় অবস্থানকালও বেড়ে যাবে। বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোর মালিকদের প্রতিষ্ঠান বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপো থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজারের মতো কন্টেইনার বন্দরে যাওয়া-আসা করতো, যা ধর্মঘটের কারণে কমে গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে, কন্টেইনার জট হবে। এদিকে রোববার (৭ নভেম্বর) ভোর ৬টা হতে মহানগরীতে গণপরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আগামীকাল রোববার ভোর ৬টা পর্যন্ত আমাদের গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে। ৬টার পর থেকেই আমাদের গণপরিবহণগুলো রাস্তায় নামবে। সরকার এ বিষয়ে দ্রুত একটা কার্যকরী সিদ্ধান্ত জানাবে বলে আশা করছি।
# ০৬.১১.২০২১ চট্টগ্রাম #