চলমান সংবাদ

জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর আবারও শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

 

পুরনো ঢাকায় কেমিকেলের একটি কারখানায় আগুন নিভাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। (ফাইল ফটো)
অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই জুতা এবং কেমিকেল সহ বিভিন্ন ধরনের অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে বলে বলছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশে ঢাকার পুরনো অংশে সোয়ারীঘাট এলাকায় একটি জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেশটির ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, কারখানাটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল। এই ঘটনায় দেশটির কলকারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তার প্রশ্ন নতুন করে আবার আলোচনায় এসেছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, গার্মেন্টস শিল্পের বাইরে অন্য কারখানাগুলোতে নিরাপত্তার সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য এ মাসেই ব্যাপকভিত্তিতে জরিপ শুরু করা হচ্ছে।

কারখানা ভবনে শ্রমিকের থাকার ব্যবস্থা অবৈধ’

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কারখানাটিতে শ্রমিকের নিরাপত্তার প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘাটতি পেয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন জানিয়েছেন, ভবনের নিচতলায় ছিল কারখানা এবং তিন তলায় গোডাউন। আর মাঝে দ্বিতীয় তলাতেই ছিল শ্রমিকের থাকার ব্যবস্থা।

একটি গার্মেন্টস কারখানায় নারী পোশাক শ্রমিকরা (ফাইল ফটো)
ভয়াবহ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতাদের চাপে গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। কিন্তু অন্য কারখানার ব্যাপারে নজর কম।

সে কারণে সেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, কারখানা ভবনে শ্রমিকের থাকার ব্যবস্থা করা আইনসম্মত বা বৈধ নয়। ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, কারখানাটিতে অগ্নি নির্বাপণের কোন ব্যবস্থা ছিল না। এছাড়া জুতার কারখানায় কেমিকেল থাকে এবং সেকারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। কারখানার আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি বাজারেও কয়েকটি দোকান পুড়ে গেছে।

গ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়া হাজার হাজার কারখানা’

দেবাশীষ বর্ধন বলেছেন, “অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে দেশের আনাচে কানাচে এ ধরনের হাজার হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলো আসলে মৃত্যুকূপ ছাড়া আর কিছু না।” তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমরা এ ধরনের কারখানা বন্ধ করার পক্ষে। আমরা টিম করে এ ধরনের কারখানা পরিদর্শন করেছিলাম।” “কিন্তু পুরনো ঢাকাতেই ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না,” বলেন দেবাশীষ বর্ধন।

ধোলাইখালের একটি কারখানায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছেন একজন শ্রমিক।
ধোলাইখালের একটি কারখানায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছেন একজন শ্রমিক।

কিন্তু কলকারখানায় অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সে ব্যাপারে লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব ফায়ার সার্ভিসের। তারা সেটা নিশ্চিত করতে পারছে না কেন-এই প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দেবাশীষ বর্ধনের বক্তব্য হচ্ছে, বেসরকারি শিল্প কারখানার ব্যাপারে সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্ব রয়েছে। সেখানে সমন্বয় প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

শ্রমিক সংগঠনের উদ্বেগ

বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনও কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বামপন্থী একটি শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী জলি তালুকদার বলেছেন, তাজরিন ফ্যাশনস এবং রানা প্লাজায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতাদের চাপে গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে শ্রমিকের নিরাপত্তা প্রশ্নে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু অন্য কারখানাগুলোর দিকে কোন নজর নেই।

তিনি অভিযোগ করেন, “কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর- যেভাবে তাদের বিষয়গুলো দেখা উচিত, তাদের সেই কাজে ঘাটতি রয়েছে এবং গাফিলতিও আছে।”

শিল্পকারখানার পরিবেশ এবং শ্রমিকের অধিকার নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বিলস এর একজন কর্মকর্তা নাজমা ইয়াসমিন মনে করেন, কারখানার মানদণ্ড মানা হচ্ছে কিনা-সেটা সেভাবে তদারকি করা হচ্ছে না।

“পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে মনিটর করা উচিত।”

কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন বা অভিযোগ যে উঠেছে, সে ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে সরকারি এই অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন আহমেদ এটুকুই বলেছেন, “তারা ব্যাপক ভিত্তিতে কাজ করছেন।

এমাসেই জরিপ শুরু

এদিকে কয়েকমাস আগে নারায়ণগঞ্জে একটি জুসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে গার্মেন্টস-এর বাইরে অন্য সব ধরনের কারখানার নিরাপত্তার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সেজন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটি অনেকগুলো টিম গঠন করে সারাদেশে কারখানাগুলোতে জরিপ চালিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করবে।

এবার এই প্রক্রিয়ায় সরকারের সাথে বেসরকারি উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন এফবিসিসিআইও অংশ নিচ্ছে।

এই কমিটিতে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম।

তিনি বলেছেন, কেমিকেল এবং জুতার কারখানাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা এ মাসেই এই জরিপ শুরু করতে চাইছেন।

“গার্মেন্টস খাতের বাইরে অন্য সব ধরনের কারখানাগুলোতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়-এই জরিপ চালানো হবে” বলেন মি: নাঈম।

তিনি উল্লেখ করেন, “দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করা হবে। তার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে কারখানার মালিককে সময় দেয়া হবে। তারা ধাপে ধাপে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে-সে সব আমরা সুপারিশ করব।”

শ্রম মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই জরিপের ভিত্তিতে এবার সরকার টেকসই ব্যবস্থা নিতে চাইছে।