চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের ‘ফাটল নেই’, তদন্ত কমিটির তিন সুপারিশ

চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ‘ফাটল নেই’ বলে মত দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক গঠিত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি। দুই সদস্যের ওই কমিটি বৃহস্পতিবার রাতে চসিক’এ তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে তিনটি সুপারিশ করা হয়। এরআগে মঙ্গলবার কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফ্লাইওভারের মূল অংশের সাথে র‌্যাম্পের পিলারের কন্সট্রাকশন জয়েন্টে ‘ফোম’ সরিয়ে যথাযথভাবে পরিষ্কার করে সে অংশটুকু ‘হাই স্ট্রেংথ থিন কংক্রিট’ দিয়ে ‘সিল’ করে দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-চুয়েট’র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইন্সটিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ’র পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, জমা দেয়া প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ দিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে বলা হযেছে। তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে যা দেখা যাচ্ছে তা, কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। ফ্লাইওয়ারের ওই র‌্যাম্পটি তৈরি করা হয়েছিল হালকা যানবাহনের জন্য। তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছি। সেখানে ভারি যানবাহন যেন না চলে। তিনি বলেন, র‌্যাম্পটি যেন কার্যকর থাকে এবং বেশিদিন যেন ব্যবহার করতে পারে সেজন্য মনিটরিং করতে হবে। এ কাজে এখন আধুনিক অনেক প্রযুক্তি আছে। মনিটরিংটা নিশ্চিত করতে বলেছি। চসিক’র প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে কোনো ক্র্যাক বা স্ট্রাকচারাল প্রবলেম নেই। ফাঁকা অংশটি হাই স্ট্রেংথ থিন কনক্রিট দিয়ে সিল করে দিতে বলেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সকে আমরা দ্রুত রিপেয়ার করতে বলে দিয়েছি। তিনি বলেন, র‌্যাম্পের নিচে এবং সংযোগ অংশে মোট তিনটি হাইট বেরিয়ার ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে যাতে ভারি যানবাহন এতে উঠতে না পারে। মেরামত কাজ শেষ হলে র‌্যাম্পটি খুলে দেয়া হবে। তদন্ত কমিটি মাঝেমাঝে ফ্লাইওভারের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেছে। গত ২৫ অক্টোবর রাতে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই ওই র‌্যাম্পে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। যানজট নিরসনে নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হস্তান্তরের পর থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় চসিক। ২৬ অক্টোবর দুপুরে ফ্লাইওভারটি পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম এবং চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ফাটল দেখে র‌্যাম্পের নির্মাণ ত্রুটি অথবা নকশাগত ত্রুটি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন। ২৬ অক্টোবর সকালে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান হালকা যানের জন্য তৈরি র‌্যাম্পে ভারি যান চলায় ফাটল হয়েছে বলে জানান। তিনি দাবি করেন, সেখানে কোনো ফাটল হয়নি। কন্সট্রাকশন জয়েন্টে থাকা ফোমের কারণে ফাটলের মত দেখাচ্ছিল। পরদিন ২৭ অক্টোবর নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্ট লিমিটেড এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের বিশেষজ্ঞরা পরিদর্শন শেষে দাবি করেন, ফ্ল্ইাওভারের পিলারে কোনো ফাটল নেই। যা দেখা যাচ্ছে তা হলো ‘কন্সট্রাকশন জয়েন্ট’। তবে র‌্যাম্পটি হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য নকশা করা হলেও সেটিতে ভারী যানবাহন চলাচল করার বিষয়টি স্বীকার করেন উভয় সংস্থা। যদিও র‌্যাম্পটিতে ‘হাইট বেরিয়ার’ না থাকার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে সরকারি সেবা সংস্থা দুটি। প্রসঙ্গত নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র‌্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথমে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৯১ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে ১০৬ কোটি টাকা করা হয়। ফের সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় ১২০ কোটি টাকা করা হয়। ১৩৩২ মিটার দৈর্ঘ্য ফ্লাইওভারটির প্রস্থ ১৪ মিটার। চার লেনের বহদ্দারহাট এ ফ্লাইওভারের দুই পিলারের দূরত্ব ১৩০ ফুট।
# ০৫.১১.২০২১ চট্টগ্রাম #