চলমান সংবাদ

সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিচার দাবিতে সমাবেশে বক্তারা

– ইকবালকে ‘পাগল’ সাজিয়ে আসল দুর্বৃত্তদের আড়াল করার অপচেষ্টা হচ্ছে রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

কুমিল্লার পূজামন্ডপে কোরআন শরীফ রাখা ইকবাল হোসেনকে পাগল সাজিয়ে আসল দুর্বৃত্তদের আড়াল করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত। পাশাপাশি সারাদেশে মঠ-মন্দিরে, পূজামন্ডপে হামলা-অগ্নিসংযোগ, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ঘটনা প্রতিরোধে রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তির দাবি জানান তিনি। সোমবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর আন্দকিল্লা মোড়ে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশে এসব অভিযোগ করেন তিনি। সারাদেশে মঠ-মন্দিরে ও পূজামন্ডপে হামলা, দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা-ধর্ষন এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় পূজা কমিটির সভাপতি মিলন দত্ত বলেন, কথিত ধর্মীয় অনুভূতি, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সারাদেশে হামলা হয়েছে। যারাই এই হামলার সঙ্গে জড়িত হোক না কেন, সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কুমিল্লার পূজামন্ডপে কোরআন শরীফ রাখা ইকবাল হোসেনকে পাগল সাজিয়ে আসল দুর্বৃত্তদের আড়াল করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছিল। সেই সাম্প্রদায়িক সংহিংসতা প্রতিরোধে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাস্তায় নেমেছিলেন। কিন্তু এখনকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতারা, প্রগতিশীল সুশীল সমাজ রাস্তায় নেই। সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কি ? পাকিস্তানী প্রেতাত্মা, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এসব প্রতিরোধে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের রাস্তায় নামতে হবে। কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, গত ১২ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় রয়েছে। আশা করেছিলাম, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে; সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু চিত্র ভিন্ন। এবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ আইজিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, নিরাপত্তায় কোন বিঘœ ঘটবে না। এরপরও মন্দিরে-পূজামন্ডপে হামলা হলো, অগ্নিসংযোগ হলো, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হলো। আমরা দেখেছি, নোয়াখালীতে কোন রাজনৈতিক দলের নেতা, সংসদ সদস্য, প্রশাসন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা কোথা ছিলেন ? আমরা সরকারের আশ্বাস প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই। মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, চসিক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, পুলক খাস্তগীর, মহানগর পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, সুজিত বিশ্বাস, ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ, লিলা দাশ, সদরঘাট পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাজীব নন্দী বাবুসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দির, সনাতনী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও মহানগরের অধীন বিভিন্ন থানা পূজা উদযাপন পরিদের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল সমাবেশ সঞ্চালনা করেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে থানা পূজা উদযাপন পরিষদ, সনাতনী সংগঠন ব্যানার-ফেস্টুন সম্বলিত মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়। সমাবেশ থেকে দাবি তোলা হয়- সারাদেশে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন, জড়িতদের বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করা, হামলার ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির-বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান। দাবিতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে।
# ২৫.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #