চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামের জেএমসেন হলে পূজা মণ্ডপে হামলার পর প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ

– হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত শনিবার চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছেন।

আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে একদল লোক জেএমসেন হল পূজা মণ্ডপের গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় তারা ঢিল ছোড়ে এবং পূজার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং মন্ডপের গইট ভেঙে ফেলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তবে লোহার মূল ফটকের ভেতরে ঢুকতে পারেনি। চট্টগ্রামের জেএমসেন হলের এ পূজার আয়োজন করে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। হামলার পর পরিষদের নেতারা ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত’ প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতি বছর ১১টা থেকে বিসর্জনের কাজ শুরু হয়। এবার সরকারি নির্দেশনা ছিল নামাজের জন্য বেলা আড়াইটার পর থেকে পূজা মণ্ডপ থেকে বিসর্জনের জন্য বের হওয়ার। সেজন্য আমরা মণ্ডপে অপেক্ষা করে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করছিলাম। ঠিক এ সময় আমাদের এখানে হামলা হয়েছে।” আশীষ ভট্টাচার্য্য বলেন, “যেখানে মণ্ডপে এসে হামলা করছে, সেখানে সড়কে যে হামলা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? সরকার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক, তারপর আমরা প্রতিমা বিসর্জনে যাব। তার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরের কোনো মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তার ঘোষণা এলে তখন বিবেচনা করা হবে।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে জুমার নামাজ শেষে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ গেইটে একদল লোক ‘কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদ’ জানিয়ে সমাবেশ করে। সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে জেএমসেন হলের দিকে এগিয়ে যায়। মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের বেস্টনি দেওয়া থাকলেও তারা তা ভেঙে তারা এগিয়ে যেতে থাকে। জেএমসেন হল প্রাঙ্গণের প্রধান ফটক আগে থেকে বন্ধ থাকায় তারা গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় তারা ভেতরে ঢিল ছোড়ে এবং পূজার জন্য সড়কে এবং আশপাশের দেয়ালে টাঙ্গানো বিভিন্ন ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। জেএমসেন হলের পূজা মণ্ডপে তখন বিভিন্ন বয়সী নারীরা পান, তেল ও সিঁদুর দিয়ে দেবী বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাইরে হট্টগোল শুরু হলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পুলিশ এ সময় টিয়ার শেল ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হামলাকারীরা এ সময় জেএম সেন হলের পাশ দিয়ে এবং চেরাগী পাহাড় দিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে জেএমসেন হলে হামলার পর পূজা কমিটির নেতা-কর্মীরা সড়কে এসে অবস্থান নিলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ৩টার দিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জেএমসেন হলে মোড়ে এসে পূজা উদযাপন পরিষদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। জেএমসেন হল মোড়ে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “কেউ এ কর্মসূচি প্রতিহত করতে চাইলে বুকের রক্তের বিনিময়ে হলেও প্রতিরোধ করা হবে।” নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনও বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জেএমসেন হলে আসেন পরিস্থিতি দেখতে। এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।