মতামত

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা ও তার ভবিষ্যত পরিণতি (শেষ পর্ব)

—— হায়দার এ. খান

হায়দার এ. খান (ফাইল ফটো)

বিগত বছরগুলোতে আফগানিস্তানে দুর্নীতির মাত্রা ছিল বেশুমার। সরকারী হোক  আর বেসরকারী সর্বক্ষেত্রেই লাগামহীন দুর্নীতি ভয়াবহ ভাবে জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলে । বেসামরিক পর্যায়ে দুর্নীতি সম্পর্কে ধারণা পেতে আমরা সেখানকার এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারি। আমেরিকা সমর্থিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দুর্নীতির নমুনা তুলে ধরার জন্য আমার এক সময়ের  পিএইচডি এর ছাত্র আফগানিস্তানের ড: নাজিম দোস্ত এর সাথে করা যৌথ গবেষণা কর্মের দিকে আলোকপাত করতে চাই। মাঠ পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত গুলোর বিশ্লেষণের জন্য আমরা স্বীকৃত একটি গানিতিক মডেলিং এর সাহায্য নিয়েছি। আমরা দেখলাম, এনজিও গুলো তাদের বিদেশী চাকরিজীবীদের স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের চাইতে প্রায় ৩৫ গুণ বেশি বেতন দিচ্ছে। এটা স্থানীয়দের মধ্যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং তার প্রভাব পড়ে বহুদূর অব্দি। এমনকি রাষ্ট্রের শৃংখলা ও স্থিতিশীলতার উপর বড় রকমের আঘাত হানে, বর্তমানে এর ভংঙ্গুর রূপ আমাদের কাছে দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলো বেতন ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় অর্থনীতিতে তার প্রভাব নিয়ে মাঠ পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত গুলোর উপর  ভিত্তি করে আমাদের তাত্ত্বিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়। গবেষণাটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ও গবেষকদের দ্বারা প্রশংসনীয় হলেও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি।

আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিদেশী সাহায্য নির্ভর ও অস্থিতিশীল, যার কারণে পতন ছিল অনিবার্য। বিলম্বে হলেও বাইডেন সেখানকার দুর্নীতি ও পরিচালনার ক্ষেত্রে অযোগ্যতার কথা স্বীকার করেছেন। যদিও সরকারী বা বেসরকারী সংস্থার কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কারোরই এর দায় স্বীকার করতে দেখা যায়না। এমনকি এমন  বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যের কারণ নিয়ে কাউকে কোন কথা বলতে শোনা যায়না। অথচ এখনকার দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা চালু ও জারি রাখার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র পুরোমাত্রায় দায়ী।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের ভবিষ্যত কী এবং কী করণীয় তা বুঝতে হলে অবশ্যই বিগত কুড়ি বছর ধরে মার্কিন সমর্থিত শাসন ব্যবস্থার ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তালেবানদের অতীতের ভূমিকার কথা বিবেচনা করলে তাদের ওপর খুব বেশি ভরসা করা যায়না। তবে একটা বিষয় ঠিক যে, এই মুহূর্তে আফগান জনগণের কাছে বিদেশী সাহায্য ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তবে যে-ই  ক্ষমতায় থাকুক দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে হলে মানুষের বাস্তব সমস্যার সমাধান দিতে হবে। আর এই বৈরি সময়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- সেখানকার মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক চাহিদার বিদ্যমান ঘাটতি পূরণ করা। আর অবশ্যই এমন একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা  করা প্রয়োজন যেখানে জনগণ নির্ভয়ে নিজেদের অধিকার ও প্রয়োজনের কথা জানান দিতে পারবে
লেখক পরিচিতিঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক লেখক, গবেষক।
                               অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব ডেনভার,  যুক্তরাষ্ট্র ।
                               আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক এন্ড সোশাল কমিটি
অনুবাদঃ রবীন গুহ, সম্পাদক মন্ডলির সদস্য, প্রগতির যাত্রী ডট কম