চলমান সংবাদ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুয়ার খুলছে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

শিক্ষার্থীদের কোলাহলে ফের মুখর হওয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘ প্রায় ১৭ মাস পর বন্ধ থাকার পর অবশেষে আগামী রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে সারাদেশে খুলছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎফুল্ল ভাব বিরাজ করছে। র্দীঘ দিন পর শ্রেণি কক্ষের বদ্ধ দুয়ার খুলে চলছে ঝাড়া-মোছা। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থীদের কোলাহলে ফের মুখর হওয়ার অপেক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। নগরীর বেশ কয়টি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে ক্লাস চালু উপলক্ষে সার্বিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠকও করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। এরই মাঝে ক্লাস রুটিন প্রস্তুতসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। অল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে কিছু কাজ বাকি থাকলেও তা শনিবারের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে দেশ বরণ্য শিক্ষাবিদ একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি হয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা স্কুলের পরিবেশ থেকে বঞ্চিত ছিল, সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হয়নি, খেলতে যেতে পারেনি, অনেকটা সঙ্গিহীন ছিল। এতে তাদের মধ্যে ডিপ্রেশেন দেখা গেছে। শিক্ষাখাতে ক্ষতি কাটাতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে ড. অনুপম সেন বলেন, করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি কাটিয়ে এগুতে হলে সকলকে সাথে নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বাজট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি। ড. সেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর যে মানসিক চাপ পড়েছে, তা কাটাতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার খবরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে উৎফুল্ল ভাব ফিরে এসেছে। চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনির ছাত্র সৌম্য বলেন, অনেকদিন পর স্কুলে যেতে পারবো, ভাবতেই অনেক ভালো লাগছে। বন্ধুদের সঙ্গে, স্যারদের সঙ্গে দেখা হবে। দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। বিরক্তিকর সময় পার করেছি। ক্লাস না হলে পড়াশুনাও ঠিকমতো হয়না। চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে মেরামত কাজ চলছে। যা শনিবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাস রুটিন প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকের এখনো রুটিন প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। ক্লাস রুটিনের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি গাইডলাইন (নির্দেশনা) দেয়া হবে। ওই গাইডলাইনে ক্লাস রুটিন তৈরিসহ সার্বিক নির্দেশনা থাকবে। ওই নির্দেশনা মেনেই স্কুলের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর আরিফ এলাহী বলেন, সশরীরে ক্লাস চালু হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম আগের মতো চলমান থাকবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মাউশির পক্ষ থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ওই নির্দেশনা মেনেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এর মধ্যে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কলজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে ক্লাস শুরুর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসলে আগের মতো কোলাহলমুখর পরিবেশ ফিরে আসবে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও ভালো লাগবে। হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আমিন বলেন, ক্লাস শুরু হলে এবার একটি শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে দু’ ভাগে বিভক্ত করে দুটি আলাদা কক্ষে ক্লাস নেয়া হবে। ৫ম শ্রেণিতে আমাদের ৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আগে এক কক্ষে ৮০ জনকে বসিয়ে ক্লাস নেয়া হতো। তবে এখন আমরা এদের দু ভাগে বিভক্ত করে দুটি আলাদা কক্ষে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একইভাবে প্রত্যেক শ্রেণির ক্ষেত্রেও এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহী দুল্লাহ বলেন, ক্লাস চালু উপলক্ষে স্কুলের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ক্লাস রুটিন প্রস্তুত এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ৫ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক ও স্যানিটাইজের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে হাত ধুতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বাকলিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জসিম উদ্দিন খান বলেন, সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ করেছি। শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক কেনা হয়েছে। স্যানিটাইজের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রথম দিন একটি করে মাস্ক ও কলম উপহার দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
# ১০.০৯.২০২১ চট্টগ্রাম #