চলমান সংবাদ

আশ্রয়ণ প্রকল্প: হাতুড়ি শাবল দিয়ে ঘর ভাঙ্গাদের তালিকা হয়েছে – শেখ হাসিনার বক্তব্য কী বার্তা দিচ্ছে?

আশ্রায়ণ প্রকল্প, গৃহহীনদের ঘর, বাংলাদেশ।
খাসজমিতে তৈরি করা হয় দুই কামরার ঘর।

বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে গৃহহীনদের দেওয়া কিছু ঘর ভেঙ্গে পড়ার পর দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, কিছু লোক হাতুড়ি শাবল দিয়ে সেগুলো ভেঙ্গে মিডিয়াতে প্রচার করেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে শেখ হাসিনা এ সম্পর্কে একটি তদন্ত রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, যারা এসব ঘর ভেঙ্গেছে তাদের তালিকা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কী বার্তা দিচ্ছে – তা নিয়ে পর্যবেষকদের মাঝে নানা আলোচনা চলছে । একজন পর্যবেক্ষক বলছেন, সরকারের সংবেদন একটি প্রকল্পে এমন নাশকতা হলে অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এপর্যন্ত দেড় লাখের মতো গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছে।

‘হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ঘর ভাঙা হয়’

বর্ষার শুরুতেই দেশের কয়েকটি জেলায় গৃহহীনদের জন্য দেয়া কিছু ঘর ভূমিধসে ভেঙে পড়ে এবং অনেক ঘরে ফাটল দেখা দেয়। তখন সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য এসব ঘর নির্মাণের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ আসে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সারাদেশে টিম পাঠিয়ে এর তদন্তও করা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাদেশে ডিসি-ইউএনও এবং সব কর্মচারীরা এসব ঘর নির্মাণে আন্তরিক ছিল। কিন্তু কিছু মানুষ হাতুড়ি শাবল দিয়ে ঘর ভেঙেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। “তিনশোটা ঘর কিছু মানুষ নিজে থেকে যেয়ে হাতুড়ি শাবল দিয়ে সেগুলো ভেঙে তারপরে মিডিয়ায় সেগুলির ছবি তুলে ফেলছে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী। তদন্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, যারা ভেঙেছে, তদন্তে তাদের সবার নাম বের করা হয়েছে। “গরীবের জন্য ঘর করে দিয়েছি। তারা এভাবে যে ভাঙতে পারে, তা ছবিগুলো দেখলে দেখা যায়।” মিডিয়ায় ঘর ভাঙার খবর প্রকাশ করার বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “সবচেয়ে অবাক লাগে যে মিডিয়া, যারা এগুলো ধারণ করে প্রচার করে, তারা কিন্তু এটা কীভাবে হলো-সেটা কিন্তু না। ” একইসাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “প্রবল বৃষ্টি হলো যখন, ঐজন্য মাটি ধসে কয়েওকটা ঘর নষ্ট হয়েছে। আর মাত্র নয়টা জায়গায় যেখানে কিছুটা দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।” “কিন্তু আমি দেখেছি যে, প্রত্যেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে,” বলেন তিনি।

সংবেদনশীল প্রকল্পে নাশকতার তথ্য কী নতুন চ্যালেঞ্জ?

সারাদেশে ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের প্রায় নয় কোটি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেয়ার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এপর্যন্ত দেড় লাখ পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পকে মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে পর্যবেক্ষক বা বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। তাদের অনেকে মনে করেন, গৃহহীনদের ঘর নির্মাাণ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে আমলাদের অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এখন সে সব চাপা পড়ে যাবে কিনা- এই প্রশ্ন তাদের রয়েছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সরকারের সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পে ঘর ভাঙার ঘটনা ঘটলে, তার বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্যটা দিয়েছেন, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা সরকারের বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল একটা প্রকল্প।” “এই প্রকল্পে ঘর ভাঙার ঘটনায় তদন্তে যে ফল বেরিয়ে এসেছে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন-সেটা হয়েছে বলে মানুষ ধরে নিতে চাইবে।” “সেক্ষেত্রে সরকারের ওপর আরেক দফা চ্যালেঞ্জ চলে আসলো। সেই চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে, হাতুড়ি শাবল দিয়ে যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ঘরগুলো ধ্বংস করেছে, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে,” বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তবে তিনি বলেছেন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গিয়ে তার অপপ্রয়োগ যাতে না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

এবছরের শুরুতে প্রথম দফায় ৬৬ হাজারের বেশি গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছিল।
এবছরের শুরুতে প্রথম দফায় ৬৬ হাজারের বেশি গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছিল।

‘যতটুকুই দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তারও বিচার হওয়া উচিত’

কয়েকমাস আগে যখন বিভিন্ন জায়গায় ঘর ভেঙেছে বা ফাটল দেখা দেয়, তখন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কয়েকজন কর্মকর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এসেছে, মাত্র নয়টি জায়গায় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্তে। মানবাধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী সুলতানা কামাল বলেছেন, যতটুকুই অনিয়ম বা দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তারও বিচার হওয়া উচিত। “যে তথ্যটা এখন আমরা পেয়েছি, সেটা যদি সত্য হয়, সেটা একদিক থেকে স্বস্তির। কারণ বিস্তর যে দুর্নিতির অভিযোগ উঠেছিল, সেটা সত্য নয়,” বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “যতটা দুর্নীতি হয়েছে তার বিচার হবে। এবং আমরা আশা করবো, দুর্বৃত্তপনার যে বিষয় এসেছে, তারও বিচার হবে।”

ভেঙে পড়া ঘরগুলো বানানো হচ্ছে নতুন করে

যে সব জায়গায় ঘর ভেঙেছে বা ঘরে ফাটল ধরেছে, সে সব ঘর নতুন করে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। দেশের উত্তরের একটি জেলায় বর্ষার শুরুতে কয়েকটি ঘর ডেবে গিয়েছিল, সেখানকার একজন নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “যে জমির ওপর ঘর করা হয়েছিল, সেই জমিটা ছিল ডোবা।” “সেখানে মাটি তুলে ঘর করা হয়েছিল, এজন্য ডেবে গিয়েছিল। ঘর ডেবে গিয়ে ফেটে গিয়েছিল। এখন সব ঘর ভেঙে অন্য জমিতে নতুন ঘরে করে দিয়েছে” বলে ঐ ব্যক্তি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্তে যে সব বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলোতে অল্প সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা