চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে পরীর পাহাড়ে ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রশাসন-আইনজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব-বিরোধ চরমে

চট্টগ্রামে আদালত ভবন এলাকায় দুইটি ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি। চেম্বারের সংখ্যা বাড়াতে আইনজীবী সমিতি আদালত ভবনের পরীর পাহাড়ে নতুন করে দুইটি ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়। সমিতির ওই দুই নতুন স্থাপনা নির্মাণকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অনুমোদনহীন বলে মন্তব্য করছে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে সমিতির দাবি, নিয়ম মেনে ‘অনুমোদন’ নিয়েই তারা ভবন করছেন। জেলা প্রশাসন এগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ ঘোষণা দিয়ে গত ২ আগস্ট গণমাধ্যমে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। পাশাপাশি ৮টি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দেয়। এরপর থেকে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি। গত বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায়ও পরীর পাহাড়ে নতুন দুটি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে ছিলেন নেতৃবৃন্দ। স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসক যে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন এবং এ সংক্রান্ত যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, সভায় তার নিন্দা জানানো হয়। ভবন দুটি নির্মাণের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে বলে সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইনজীবীদের চেম্বারের চাহিদা মেটাতে বিদ্যমান আইনজীবী ভবন (মূল ভবন) ও শাপলা ভবনের পাশে আরও দুটি নতুন ভবন করার উদ্যোগ নেয় সমিতি। প্রসঙ্গত আদালত ভবন এলাকার পরীর পাহাড়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, মুখ্য বিচারিক হাকিম ভবনসহ আইনজীবীদের পাঁচটি একাধিক ভবন ও সরকারি অফিস রয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালেও প্রধান সড়কের মুখে গেটের নামকরণ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওয়াসা ও পিডিবিকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, পরীর পাহাড়ে সরকারি ভবন ও স্থাপনা ছাড়া অন্য কোনো স্থাপনায় সংযোগ না দিতে। নতুন সংযোগে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন লাগবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দৃষ্টিনন্দন পরীর পাহাড়ের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় পরিকল্পনা ছাড়া অনুমোদন না নিয়ে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠছে। এছাড়া রাস্তার ওপর যত্রতত্র পার্কিং, স্টেশনারি দোকান, খাবার হোটেলের কারণে পাহাড় সৌন্দর্য হারিয়ে ইট পাথরের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে ভূমিকম্প, ভূমিধস ও অগ্নিকাগ্নের মত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় হতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমীক্ষায় দেখা গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবিধানের ২৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এক সময়ের সৌন্দর্যকন্যা পরীর পাহাড়ের মত ঐতিহাসিক তাৎপর্যমন্ডিত এলাকা রক্ষা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি বিধান অমান্য করে পরীর পাহাড় এলাকায় কোন ধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী, দখলবাজি, খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও নির্মাণ কাজে সহযোগিতা দন্ডনীয় অপরাধ। তাই এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ করা হলো। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়া উদ্দিন বলেন, নির্মিতব্য ভবনের জমি আইনজীবী সমিতির। ১৯৭৭ সালে সরকার থেকে এ জমি লিজ নেয়া হয়। পরে একটি মামলা করলে আমাদের সম্পত্তি কী পরিমাণ তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেসময়ের জেলা প্রশাসক আমাদের সীমানাও চিহ্নিত করে দেন। এর বাইরে আমরা যাচ্ছি না। আমাদের ভবন পাহাড়ে নয়। স্ট্রাকচারের নিচের দিকের অংশ বিশেষ ঢালু জমিতে। তাছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) অনুমোদনও দিয়েছে। প্রস্তাবিত ‘একুশে ভবন’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ভবন’ নামে নির্মিতব্য ভবন দুটিতে মোট ছয়শ চেম্বার হবে। এ জন্য গত মাসে চেম্বার বরাদ্দ দিতে আবেদন আহ্বানও করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে আদালত এলাকায় গাড়ির পার্কিং স্পেস বন্ধ করতে বাধা দেয়ায় প্রশাসন থেকে এ চিঠি দিয়েছে। আদালত চত্বরে দেড়শ বছরের পুরনো পার্কিং স্পেস ছিল। এটা জেলা প্রশাসন, আইনজীবী ও বিচারকরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু সৌন্দর্য বর্ধনের নামে পার্কিং বন্ধের চেষ্টা করে জেলা প্রশাসন। আমরা বন্ধ করতে না দেয়ায় জেলা প্রশাসক ক্ষিপ্ত হয়ে এসব করছেন।’ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ঐতিহাসিক এই পরীর পাহাড়ে নানারকম দোকানপাট ও স্থাপনা মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ অবৈধ স্থাপনা আছে। সরকারি এজেন্সিগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে এখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০০৮ অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা শ্রেণির জমির কোনো রূপ পরিবর্তন করা যাবে না। এটা আইনি বাধ্যবাধকতা। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। যেহেতু এটিও পাহাড় শ্রেণির জমি। তাই এখানেও আইনের ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।
# ১০.০৯.২০২১ চট্টগ্রাম #