চলমান সংবাদ

মুক্তিযোদ্ধা-সাহিত্যিক রমা চৌধুরীর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একাত্তরের জননী খ্যাত মুক্তিযোদ্ধা-সাহিত্যিক রমা চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর)। রমা চৌধুরী উনিশশো একাত্তর সালে পাকিস্তানিদের দ্বারা নির্যাতিত হন এবং তার দুই শিশু সন্তান যুদ্ধের কারণে মারা যায়। যুদ্ধের পরে এই মহিয়সী রমনী সন্তান শোকে খালি পায়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিজের লেখা বই ফেরী করে বিক্রি করেছেন কারো সহযোগীতা না নিয়ে। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ‘একাত্তরের জননী’ সহ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি। বীর মুক্তিযোদ্ধা রমা চৌধুরী একজন সর্বহারা, সন্তানহারা, যুদ্ধের তান্ডবে ভীটেমাটি পুড়ে নিশ্চিহ্ন হওয়া একাত্তরের জননী হয়েও দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ ৫০ বছরেও এখনো বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বা গেজেটে কিংবা কোন নথিতে অনুল্লেখিত রয়ে গেছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে রমা চৌধুরী স্মৃতি সংসদ। রমা চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রমা চৌধুরী স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে চট্টগ্রামে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। স্মরণানুষ্ঠানের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের সংগঠন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম’র সার্বিক সহযোগিতায় চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে নানা অনুষ্ঠান। স্মরণানুষ্ঠানে থাকবে রমা চৌধুরী’র আবক্ষ প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, রমা চৌধুরীর লেখা গান পরিবেশনা, রমা চৌধুরীর কবিতা থেকে পাঠ, আলোচনা ও একাত্তরের জননী থেকে পাঠ। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে আরও রয়েছে সকাল ৯টায় রমা চৌধুরীর সমাধি বোয়ালখালীর পোপাদিয়ায় শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন। দ্বিপ্রহরে কৈবল্যধামে ঠাকুরভোগ। সম্পূর্ণ আয়োজনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য অধ্যক্ষ রীতা দত্তকে আহ্বায়ক, শামশুজ্জোহা আজাদ পলাশকে সচিব এবং আলাউদ্দিন খোকনকে সমন্বয়কারী করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। অনুষ্ঠানে রমা চৌধুরীর ভক্ত-অনুরাগী, শুভাকাঙ্খী-শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন আয়োজকবৃন্দ। উল্লেখ্য, ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন রমা চৌধুরী। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার সাহিত্যিক রমা চৌধুরী যুদ্ধের লেলিহান শিখায় দুই সন্তানও হারান। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করা রমা চৌধুরী সারাজীবন এক কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছেন। সেই লড়াই-সংগ্রামের অস্ত্র হিসেবে তিনি হাতে নিয়েছিলেন কলম। তিনি নিজের লেখা গ্রন্থ নিজে প্রকাশ করে এবং নিজেই দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিক্রি করে এক অনন্য ইতিহাস রচনা করে গেছেন। ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে তিনি তিন সন্তানের শোকে আমৃত্যু খালি পায়ে ছিলেন। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় ১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। রমা চৌধুরীর এই জীবনসংগ্রাম দেশে-বিদেশে অনেকের কাছেই গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠে। অদম্য মানসিক প্রজ্ঞায় তিনি সব লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে এক স্বকীয় ইতিহাস রচনা করে গেছেন। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তার সঙ্গে দেখা করতে যান রমা চৌধুরী। অস্বচ্ছল জীবনযাপনকারী রমা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহযোগিতার প্রস্তাব বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেন। রমা চৌধুরী মরণোত্তর ‘বেগম রোকেয়া পদক’সহ বেশকিছু সম্মাননা ও পদক পেয়েছেন।

# ০২.০৯.২০২১ চট্টগ্রাম #