কবি ফাউজুল কবিরের কবিতা
শিরিষের ছায়া আমাদের প্রাণ
আমাদের তৃষ্ণা বৃদ্ধি পায় কষ্ট হয় শ্বাস নিতে
বুকে জাগে আর্তি প্রাচীন প্রত্যাশা – শান্ত করো বুক
শিরিষের ছায়া আর দেবদারু স্নেহের আঁচলে
বসে স্নিগ্ধতার মৌলিক প্রার্থনা করতে দাও শুধু :
বৃক্ষদের নিয়ে যারা চিরকাল স্বপ্ন দেখে থাকে
সে সব মানুষ – সকলেই আমরা এই সি.আর.বিতে
মানব বন্ধন আর প্রতি্রোধে তাঁবু গেঁড়ে থাকবো :
বলবো এ মৃত্তিকা আমাদের অস্থি – এ বৃক্ষ অনন্ত
পবিত্র জীবন স্বাস্থ্যের আশ্বাস আর মানবিক
সত্তার অহং – অন্তর্গত স্মৃতি এবং গৌরব —
প্রকৃতির সব দান কোরাসের স্বরে বলে উঠবে :
সরে যাও সব লুটেরা দালাল ভূমিভূক দস্যু
স্বার্থান্ধ চামার – সযোগ সন্ধানী দুর্বৃত্তের দল
এই চট্টগ্রাম ভালোবাসা দিয়ে সি আরবি বাঁচাবে
গেয়ে উঠবে গান শিরিষের ছায়া আমাদের প্রাণ ।
আমাদের তৃষ্ণা বৃদ্ধি পায় কষ্ট হয় শ্বাস নিতে
সরাবো না চোখ সজাগ পাহারা সাত রাস্তা থেকে :
কার দুঃসাহস সুন্দরের মুখে ঐতিহ্যের বুকে
ষড়যন্ত্রে রাখে হাত লোভাতুর হায়েনার থাবা ?
মানুষের তীক্ষ্ণ বোধ ছিঁড়ে ফেলবে চক্রান্তের জাল
মানুষ সরাবে প্রকৃতি বিধ্বংসী সমস্ত জঞ্জাল ।
পৃথিবীর গোপন একতারা
মুজিব
কবি ফাউজুল কবির পরিচিতি
কবি ফাউজুল কবির বিশ্বাস করেন এবং এভাবেই বলেনঃ ‘কবিতা মূলত সৃজনের কাজ- শুধু নির্মাণ নয়। আর সৃজন হচ্ছে নির্মাণের চেয়ে অনেক বড় কিছু-আনন্দ ও কল্পনা মহৎ। নির্মাণ হচ্ছে সৃজনের কৌশলী অনুষঙ্গ মাত্র। মহৎ কবিতা সৃজনেই মুক্তি ও প্রতিজ্ঞা পায়। কবিতা শুধু মেঘ নয়- মেঘের ক্রন্দন ও উৎসব- দহনের গ্রহণের বর্ষণের বরণের কাজ-অন্তরে বাহিরে। কবিতা কবি-জীবন-সৃজন ও প্রকৃতির যৌথ আভা ধারণ করেই বলে উঠেঃ আমি কবিতা আমি কাব্য আমি শিল্প।’
ফাউজুল কবিরের জন্ম ০৭ আগস্ট ১৯৫৫ সাল। জন্মস্থান চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার উত্তর ইছাখালী গ্রামে। ফেনী নদীর ভাঙ্গনে উত্তর ইছাখালী গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে তার পিতা ১৯৭০ সালে নতুন বসতবাড়ি নির্মাণ করেন মিরসরাই উপজেলার ৭ নং কাটছড়া ইউনিয়নের তেমুহানী গ্রামে।এখানেই তার পরিবারের স্থায়ী বসবাস। পিতা আহমেদ ছোবহান এবং মাতা দেলফরোজ খানম। পিতা এবং মাতা উভয়েই প্রয়াত হয়েছেন। ফাউজুল কবির লেখাপড়া করেছেন আবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়,ফেনী কলেজ,চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক(সম্মান) সহ এম. এ ডিগ্রি অর্জন করে কলেজ শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন ১৯৮০ সালের ০৩ ডিসেম্বর। সংবাদপত্র জগতেও তিনি কাজ করেছেন। দক্ষিন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ছালেহ-নূর ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে সুদীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন। অবসর গ্রহণের পর হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজেও শিক্ষকতা করেন। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি-বাকশিস চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ফাউজুল কবির আপাদমস্তক কবি। কবিতাই তার প্রধানতম আগ্রহ ও ধ্যানের বিষয়।কবিতাকর্মের জন্য ২০০৫ সালে কবি ফাউজুল কবির তার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চট্টগ্রামের কবি-শিল্পী-নাট্যজন, শিক্ষক সমাজ ও সংস্কৃতি কর্মী এবং বন্ধু স্বজনদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে ‘রাঙ্গাও প্রাণের পরাগের রঙে জীবনের শতদল’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ধিত হয়েছেন।২০১০ সালে কবিতা কর্মের জন্য পেয়েছেন ‘মিরসরাই এসোসিয়েশন সম্মাননা’। ২০১২ সালে লাভ করে ‘মনন সাহিত্য সম্মাননা’। সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে মননশীল চিন্তায় তিনি তৈরি করেছেন এক বিশিষ্ট সম্মানের আসন।
ফাউজুল কবির একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।মুক্তিযুদ্ধখ্যাত চট্টগ্রামের মিরসরাই অঞ্চলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংবর্ধনা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। ২০১৬ সালে হুলাইয়ুন ছালেহ-নূর ডিগ্রি কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা জানানো হয়। ২০১৬ সালে তাকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা জানিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি-বাকশিস চট্টগ্রাম শাখা।
কবিতাকর্মের জন্য কবি ফাউজুল কবির ২০১৬ সালের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ‘একুশে সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন।
সৃজন ও নির্মাণকলায় প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ শানিতবোধের কবি হিসেবে কবিব্যক্তিত্বে ফাউজুল কবির অসাধারণ এবং বিশিষ্ট একজন।বাংলা কবিতায় তার ধ্যান-অনুধ্যান ও শিল্পবোধ একটি বিশিষ্ট ও স্বতন্ত্র কবিকন্ঠস্বর হিসাবে চিহ্নিত।সৃজনের উজ্জ্বলতায় প্রজ্ঞা ও প্রমায় সন্ধানে ও আবিষ্কারে ফাউজুল কবির বাংলা কবিতার এক বিশিষ্টতম কবিকন্ঠ ও কবিসম্পদ।
ফাউজুল কবিরের কাব্যগ্রন্থ সমূহঃ
আমার সুন্দর আমার টেন্টালাস [১৯৯৬]
একা হলে জলতরঙ্গ নীলকন্ঠ বাউল [১৯৯৭]
কবির বাড়ি মেঘের নীলে[২০০৯]
প্রতিন জন্মচক্র প্রতিদিন জাদুমন্ত্র [২০০৯]
মেডুসার খেলা [২০১৫]
রহস্যের চাবিকাঠি [২০১৫]
সময়ের মায়াবী রাখাল [২০১৭]
জেগে ওঠো পাখির প্রমায় [২০১৯]
শিল্প মাতালের ধন [২০২১]