চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা

অল্প বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম মহানগরের নিম্নাঞ্চল ডুবে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু পানিতে সড়ক, দোকানপাট ডুবে। কোথাও কোথাও কোমড় অবধি পানিতে তলিয়ে যায় এলাকা। জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজন। পানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় শত শত যানবাহনকে। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। যদিও সিটি কর্পোরেশনের কর্তারা বলছেন, নালা-নর্দমায় প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি জমলেও তা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। এদিকে নগরের মুরাদপুর এলাকায় বৃষ্টির পানির তীব্র স্রোতে নালায় পড়ে মো. সালামত (৩৪) নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কছেশ ঘণ্টার চেষ্টায়ও সন্ধান মিলেনি তার। বুধবার (২৫ আগস্ট) সকাল ১১টায় নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর পুলিশ বক্স এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত পানির স্রোতের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়। সকালে জোয়ার শুরু হওয়ায় জমে থাকা পানি নামতে দেরি হয়। টানা বৃষ্টির কারণে হাঁটু থেকে কোমর পানি পর্যন্ত ডুবেছে নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা। পানিতে ডুবেছে স্বয়ং সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িও। এছাড়া নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। অফিসগামীরা পায়ে হেঁটে ও রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে গেছেন। আবার অনেকেই পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় হাঁটুপানি মাড়িয়ে যেতে হয় কর্মস্থলে। জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন কর্মজীবী নারীরা। এদিকে নগরীর প্রধান সড়ক মুরাদপুরের নালা আর সড়ক পানিতে একাকার হযে যায়। অনেকে পায়ে হেটে যাওয়ার সময় বুধবার সকাল ১১টায় এক পথচারী নালায় ডুবে যায়। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তল্লাশি অভিযান চালায়। আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের লিডার বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, নালায় পড়ে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে সকাল ১১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েও সন্ধান মিলেনি। পরে আমরা ফিরে গেলে বেলা আড়াইটার দিকে ৯৯৯’এ েেফান করে আবারও খবর দেয় স্থানীয়রা। বিকেল ৩ টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যের ডুবুরি দল নিখোঁজ যুবককে উদ্ধারে কাজ করছে। এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ৩০ জুন ষোলশহর ২ নম্বর গেইটের মেয়র গলিতে বৃষ্টির সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নালায় পড়ে গিয়ে চালকসহ দুই জনের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হন আরও তিনজন। এদিকে আবারও নিয়ম করে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিচতলা। হাসপাতালের অনুসন্ধান বিভাগের কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সকালে শুরুতে হাসপাতালের প্রবেশমুখে পানি জমে। কিছুক্ষণের মধ্যে পানি নিচতলায় প্রবেশ করে। পরে নিচতলার সকল কার্যক্রম সরিয়ে নেয়া হয়। চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সিডিএ’র একটি প্রকল্প সরাসরি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ চললেও তার কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা জামশেদুর রহমান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই মুরাদপুরসহ আশপাশের পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। চলাচল করা যায় না। ঘরের মধ্যে পানি ওঠায় আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কছেশ বছর ধরে শুনছি, জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ চলছে। চারটি প্রকল্প চলমান। কিন্তু এসব প্রকল্পের কোন সুফল এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। নালা-খালগুলো পরিস্কার করা হয় না। জলাবদ্ধতার এউ দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি পাব ? কবে এ সমস্যা সমাধান হবে জানি না।’ সিডিএ’র জলবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্প পরিকালক আহমেদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের পাশপাশি পূর্ণিমার কারণে কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার আসায় নগরের রাস্তায় পানি বেড়ে গেছে। আশা করি দ্রুত পানি নেমে যাবে। জলবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই দুর্ভোগ থাকবে না।’ চসিক’র জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, নালা-নর্দমায় পলিথিনসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি জমেছে, জমে থাকা পানি আবার সরেও যাচ্ছে। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা প্রতিবন্ধকতা অপসারণে কাজ করছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এই বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা আরও ২ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ বলেন, ‘শহরের উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গা অংশে বৃষ্টি কম হয়েছে তবে নগরের মূল অংশে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত আগামী দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে কোনো সতর্ক সংকেত নেই।’

# ২৫.০৮.২০২১ চট্টগ্রাম #