চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ

চট্টগ্রামে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টিকা কেন্দ্রে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। পঞ্চাশের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী ও নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের সরবরাহ করা বিশেষ টোকেন ছাড়া করোনার টিকা মেলেনি। হাজার হাজার মানুষ ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টোকেন না পেয়ে ঘরে ফিরেছেন হতাশ হয়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ঘনিষ্ঠজন ছাড়া খুব কম মানুষের ভাগেই জুটেছে টিকা। এদিকে টিকা গ্রহণ করতে শুরুতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হলেও পরে এই কর্মসূচির আওতা সীমিত হয়ে যাওয়ার বিপাকে পড়ে যায় টিকা গ্রহীতারা। কেন্দ্র প্রতি ৩০০ টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেক টিকা কেন্দ্রে হাজির ছিল হাজারের বেশি মানুষ। শনিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে নগরীর সদরঘাট মেমন হাসপাতাল কেন্দ্রে গণটিকাদান কার্যক্রমে ভিড় সামলাতে পুলিশ টিকা গ্রহীতাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। শুরু থেকে নানা অভিযোগ করে আসছিলেন টিকা প্রত্যাশীরা। নিয়মমাফিক সকালে মেমন হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিতে ভিড় জমান তারা। শুরুর দিকে শান্তিপূর্ণভাবে টিকাদান চললেও, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। জানা যায়, মেমন হাসপাতাল কেন্দ্রে অন্ততঃ হাজার খানেক মানুষ জড়ো হন। কিন্তু এত টিকার যোগান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ছিল না। একপর্যায়ে টিকা না পাওয়ার শঙ্কায় অনেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। যা হট্টগোলে রূপ নেয়। অনেকে টিকা না পেয়ে চলে যান। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। টিকার ডোজের চেয়ে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরীর সবকেন্দ্রেই কমবেশি ছিল এমন দৃশ্য। প্রচন্ড ভিড় মাড়িয়েও নানা নিয়মের ফাঁদে পড়ে টিকা না পেয়েই ফিরতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়স্বজন ও রাজনৈতিক কর্মীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে- এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। কোথাও কোথাও কাউন্সিলরদের দেওয়া বিশেষ টোকেনে মিলেছে টিকা। অনেক কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহীদের ভিড় সামলানো বিপরীতে পছন্দের মানুষকে টিকা পাওয়ার সুযোগ করে দিতে দেখা গেছে ভলেন্টিয়ারদের। শনিবার সকাল ৭টার দিকে বায়েজিদ থানার ড. মাজাহার উচ্চ বিদ্যালয়ে টিকা দিতে যান সামিনা আক্তার (৩৮)। টিকার লাইনে তার আগে ছিল ১৪ জন। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর ওই কেন্দ্রের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় শুধুমাত্র করোনার সম্মুখ সারির যোদ্ধা ও সরকারি চাকরিজীবীরাই টিকা পাবেন। বাকিরা যেন ফিরে যান। অথচ গণটিকা কর্মসূচির কোথাও এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অগত্যা সামিনা আক্তার টিকা না নিয়েই ফিরে যান বাসায়। চান্দগাঁও এলাকার সিডিএ স্কুল এন্ড কলেজ টিকা কেন্দ্রে ভোর পাঁচটা থেকে টিকার জন্য অপেক্ষা করেও টিকা পাননি সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন তালুকদার। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিলাম। কিন্তু মেসেজ আসেনি। তাই আজ জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে সবার আগে এসেছি। কিন্তু কাউন্সিলের লোকজন বলছে টোকেন নিয়ে আসতে হবে; নয়তো টিকা মিলবে না। সরকার এমন কোনো বিশেষ টোকেনের ঘোষণা দিয়েছে বলে আমার জানা নেই।’ চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘নিদের্শনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু টিকা দিতে হবে নিদিষ্ট, সে বিষয়টি ধারণা রেখে স্থানীয়দের সুবিধার কথা বিবেচনা করে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বলাও হয়েছে, যেন নির্দেশনা মোতাবেক অগ্রাধীকার ব্যক্তিরাই টিকা পান। টোকেনের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো নির্দেশনা নেই। কিন্তু নির্দেশনার বাইরে যদি কর্মকান্ড হয়ে থাকে, তাহলে সেটি অবশ্যই দুঃখজনক।সাধারণ মানুষের টিকা না পাওয়ার বিষয়টিও খুব অমানবিক।’ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আখতার চৌধুরী বলেন, প্রতি কেন্দ্রে ৩০০ জন করে টিকা নিতে পারবেন। ৩টি বুথে একদিনে ৯০০ জন টিকা পাবেন। এর বাইরে স্থায়ী ১১টি কেন্দ্রে টিকাদানও অব্যাহত ছিল।

# ০৭.০৮.২০২১ চট্টগ্রাম #