শিল্প সাহিত্য

হ্যাপি ফোর্থ

– তামান্না হোসেন

আজ আমার ত্রিশ তম স্বাধীনতা দিবস
সাত সমুদ্রর তের নদীর পারের এই দেশের।বলতে কস্ট হয় তবুও বলি নিজ ভুমেই  ত্রিশ
বছরের  স্বাধীনতা দিবস পালন
করতে পারিনি।তার বেশ কয়েক
বছর আগেই নিপতিত হলাম আর এক দেশে পরাধীন হয়ে।।
ভিন্ন এক দেশের আলো হাওয়ায়
নিজেকে শক্ত করে রোপন
করার সে এক যুদ্ধে লিপ্ত হলাম।
তপ্ত রোদে পুরে
ঠান্ডা বরফে জমে
প্রচন্ড বাতাসেও  দাঁড়িয়ে.. নিজেকে গ্রথিত করলাম এই দেশে।নিজের শেঁকড় উপরে এনে অন্য মাটিতে রোপন করলেই সব চারা সহজেই অন্য মাটিকে ধারন করে না। প্রচুর পানি,সার দিতে হয়। প্রচুর মুল্যে
দিতে হয়।
প্রথম যেবার এই দেশের স্বাধীনতা দিবসের  দিনটি
পেলাম তখন আমি মিড ওয়েস্ট
ছোট্ট  একটি ছাত্র শহরে। ভেবেছিলাম সেনাবাহিনী দ্বারা অভিবাদন হবে,কুচকাওয়াজ হবে,২১ বার তোপধ্বনি হবে, যাবো, গ্যালারি তে বসে দেখবো..
কিসের কি। সূর্য মামা  যখন বাড়ি
যায়,অল্প অন্ধকার হয় তখন শুরু হয়  আতশবাজির খেলা।আর দিনটি ছুটির দিন।
পরবর্তীতে বহু শহরে থাকা
 হয়েছে।ছোট্ট সংসারের সব কিছু কাগজের বড় কারটুনে  ঢুকিয়ে গ্রে হাউন্ড বাসে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এক স্টেট থেকে আর এক স্টেট এ জীবনের নুতন  স্রোতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে।
একবার ইস্ট থেকে সাউথইস্ট  যাচ্চি গ্রে হাউন্ড বাসে।ফল সেমিস্টার এর পোস্ট গ্র‍্যাজূয়েট এর আডমিশন হয়েছে। যাওয়া হচ্ছে সেই আরাধ্য জায়গায়। ছোট্ট একটা শহরে প্রবেশ করেছে গ্রে হাউন্ড। সন্ধ্যার লাল আভা দেখা যাচ্ছে তখনও।এরি মাঝে চারপাশ প্রকম্পিত করে শুরু হল আলোর ঝলকানি। মনে এলো আজ তো ফোর্থ  অফ জুলাই। জীবনের চলার পথে উঁচু বাসের সচ্ছ কাঁচের জানালাদিয়ে দেখা  সেই আতশবাজির মুহু মুহু শব্দ, আলোর নাচন আজও অনেক বার দেখা সব আতশবাজির চেয়ে  শ্রেষ্ঠ।
নিউইয়র্কের হাডসন আর ইস্ট রিভার এর দু কুল ঘেসে এফ ডি আর  ড্রাইভ(Franklin  D. Roosevelt East River Drive) স্বাধীনতা দিবসে সেখানে যে আতশবাজি হয় আর সেটার  যাতায়াতের  যে আয়োজন সে এক মহাযজ্ঞ। দুপুরের পর থেকেই সমস্ত যান বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা। যেতে হবে পাতালরেলে আর পদ যুগলে। আতশবাজী হবে রাতে।দুপুর থেকেই শুরু হয়েছে জনাসমাগম। পাতালরেলে উপচে পড়া ভীড়। লোকজন যাচ্ছে আর যাচ্ছেই। আমরাও সেই জনস্রোতেই ছুটচি। যেতে হবে জায়গা মত, দাড়াঁতে হবে সেই স্থানে যেন আকাশে যে আলোর নাচঁন হবে,আগুনের ফুলঁকি ছুঁড়ে দেয়া হবে তার প্রতিটি সুক্ষ্ম কারুকাজ যেন পরিস্কার ভাবে দৃস্টিপাত হয় সেটা নিশ্চিত করতেই বেশ আগে,হাতে সময় নিয়ে দে ছুট। রাস্তার দুধারে মাথার ক্যাপ, জাতীয় পতাকা,রোদ চশমা,
বাদাম ভাজা,পানির বোতল,
ফলের জ্যুস, তাজা ফল আরও আরও সব কিছুরই পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।সে এক উৎসব মুখর  হই হই রই রই। সব বিক্রেতারাই  পানির বোতল হাত দিয়ে বাড়িয়েই রেখেছে। Water Water Water..পিপাসাত্ব আমি হাত বাড়িয়ে নিলাম একটা পানির বোতল।  বিস্ময়ে বিহবল
আমি।যার হাত থেকে পানি নিলাম উনি বাংগালী। এত ভীড়, এত মানুষ, এত ব্যাবসা এর মাঝেও সেই বাংগালী ভাই আমাকে জিগ্যেস করেন..আপা দেশের বাড়ি কই??।এবং যথারীতি আমার সেই পানির মুল্যে উনি গ্রহন করেননি। সেই কবে। আজও স্বাধীনতা দিবস এলেই মনে পরে ফেলে আসা দিন।সেই সময়ের আতশবাজি আর এই সময়ের আতশবাজির
ঝলকানি এক নয়। এখনের আলোর নাঁচন আর  চোখেঁ, মনে আর ঝলকে উঠে না।
আজ  ২৪৪ তম স্বাধীনতা দিবস।
আজকাল আর আতশবাজি দেখার আগ্রহ নেই।
আকাশে উড়িবার মোর
নেই আর অভিলাষ
এক বার উরেছিনু এই
মোর উল্লাস।
কিন্তু এইবার ফোর্থ  পরলো রবিবার।অনেকেই সোমবার ছুটি পেলো।আমার বসের সাথে ছুটি নিয়ে এক পশলা বচসা হয়ে গেছে। সোমবার আমার ছুটি নেই। ফোর্থ যাও গোল্লায়।
আমার মেজাজ যে সপ্তমে বস কি বুঝেছিল??  হয়তো!!!
আমার বসের ছোট্ট মেয়েটা ( সাত বছরের এমা উ, যে আমাকে বলে আমি নাকি ওর ফ্রেন্ড)আমার খুব প্রিয়।শনিবার এসেছিল ওর নানু কে নিয়ে।ওর নানুও আমাদের ক্লিনিকেরই পেশেন্ট।
এমার নানু মিস.যাওফোং  বিদায় নেবার সময় এমাকে দিয়ে আমার  জন্য একটা গিফট কারড পাঠালো।
ফোর্থ এর জন্য ছুটি না পেয়ে
 দুঃখ পেলেও সুখী হলাম জেনে.. বসের শাশুড়ীও আমাকে
ভালোবাসে।