শিল্প সাহিত্য

বৃত্তবন্দী

– সাবিনা পারভীন লীনা 

সাবিনা পারভীন লীনা

“একহাতে ঘর সামলাবো,অফিস ও সামলাবো,আমি আর পারবো না।ছুটির দিনে আমারও ইচ্ছে করে বেলা পর্যন্ত শুয়ে থাকি।তিন মাস ধরে একই কথা বলে আসছি কোন পাত্তাই দিচ্ছো না”।

স্বপ্নের মধ্যে না বাস্তবে কথাগুলো কেউ বলছে বুঝে উঠতে পারে না আলমগীর। কোল বালিশ জড়িয়ে পাশ ফিরবে এমন সময় রেহানার ঝাঁঝালো গলা-

” এই…এই… তোমাকে বলছি,কথা কানে যাচ্ছে না?আজ নয় কাল করে করে দিন পার করে দিলে।আজ ছুটির দিন,আজই এর একটা বিহিত করবে।পরিষ্কার বলে দিচ্ছি –রান্নাবান্না বন্ধ, সব কাজ বন্ধ, যা করার তুমিই করবে।

মুহূর্তের মধ্যে বালিশ থেকে মাথা তুলে চশমা পরতে পরতে উঠে বসে,”ওফ্ ঠিক আছে, ঠিক আছে। আজকেই একটা ব্যবস্থা করবো,নইলে আমি…

রেহানা এতোক্ষণ বকে যাচ্ছিল একা একা,প্রতিপক্ষের সাড়াশব্দ না পেয়ে জুত্ করতে পারছিল না।প্রতি উত্তর পেয়ে চাঙা হয়ে ওঠে।

“কতোদিন ধরে একই কথা বলে যাচ্ছি, কানেই ঢুকছে না।আচ্ছা শুনি,কি করলে তোমার কানে ঢুকবে?”

–বললাম তো,আজই একটা সুরাহা করবো।সকাল বেলাটা এভাবে মাটি করে দিও না,হেনা।–এই বলে আলমগীর চটি জোড়া পায়ে দিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে পড়ে,যুদ্ধ এড়ানোর জন্য।

আলমগীর হোসেন অর্থনীতিতে মাস্টার্স, সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করে।তার ধারণা একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের তুলনায় ক্যারিয়ারে অনেক পিছিয়ে সে।আমানত হলের রুমমেট, বন্ধু শওকত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এখন,বাল্যবন্ধু সবুজ স্কলারশিপ নিয়ে পি এইচ ডি করলো।এখন ইউ এন ডি পি তে কর্মরত। এইসব নিয়ে চাপা হতাশা আছে কিন্তু কখনোই হতাশাকে বাষ্প হয়ে বের হতে দেয় না।

রেহানা পারভীন সমাজতত্ত্বে মাস্টার্স, সরকারি চাকরির মোহ কাটিয়ে এখন এন জিও তে সুবিধা বঞ্চিত নারীদের সমতা আর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।

কিছুদিন ধরে মনটা ভালো যাচ্ছে না আলমগীরের,চোখের পাতা এক করতে পারেনা,সারারাত ছটফট করে,ভোরের দিকে তন্দ্রার মতো আসে। সারাদিন মাথা ঝিমঝিম করে।খাওয়া দাওয়া ভালো লাগে না,কাজে মন বসে না।ধীরে ধীরে গ্রাস করছে অবসাদ নামক অজগর, পালাবার পথ নেই। টেলিভিশনের চ্যানেলে ঘোরালেই লাশ আর লাশ।একে একে বের করে আনা হচ্ছে সাদা প্যাকেট মুড়িয়ে, এর যেন শেষ নেই। শেষ পর্যন্ত কতজনের পোড়া দেহ মিলবে? পঞ্চাশ, একশো,দেড়শো?ইচ্ছে হয়, রাস্তায় দাঁড়িয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলে,”এটা দূর্ঘটনা নয়,পরিচালিত হত্যা -গণহত্যা। “সে ভালো করেই জানে শত চেষ্টা করেও একটা শব্দ ও মুখ দিয়ে বের হবে না,যতো তোলপাড় ভিতরে ভিতরে।এই অবস্থায় যোগ হয়েছে বাসার নতুন এই অশান্তি। তিন মাস আগে আছিয়া কাজ ছেড়ে দেয়ার পর থেকে সব কাজ একাই সামলাচ্ছে রেহানা।মাঝে মাঝে ভাবে স্ত্রীকে ঘরের কাজে সাহায্য করবে,কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে না।

টুথব্রাশে পেস্ট লাগাতে লাগাতে হঠাৎ আনমনা হয়ে যায়। বাথরুমের দক্ষিণ পাশের ছোট্ট জানালা দিয়ে বাতাস এসে ডান কানে সুড়সুড়ি দিয়ে যায়।কতোদিন গ্রামে যাওয়া হয় না,মায়ের কবর জেয়ারত করা হয় না।গতমাসে হানিফ চাচা এসে বলে গেল,কবরস্থানের বেড়া ভেঙে গেছে। গরু ছাগল ঢুকে পড়ছে যখন তখন।কখন যে তার সময় হবে!

চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে। থুতনির নিচে,ঘাড়ে,কাঁধে হালকা মেদ জমেছে। বেসিনের তাক্ এ সাজানো আছে লরিয়েল শ্যাম্পু, বডিশপের লোশন, ফেসওয়াশ,মাসাজ অয়েল।এর কোনটিই অবশ্য সে কেনেনি,সব রেহানারই কেনা।

বাথরুম থেকে বের হয়ে বুঝতে পারে ঝড় থেমে গেছে, ঠান্ডা বাতাস বইছে।কোথায় যেন পড়েছিল, ঠিক মনে পড়ছে না–রাগ করা ভালো, রাগ পুষে রাখা ভালো না।রেহানার স্বভাবটা সে রকমই,রাগ করতে জানে,পুষে রাখতে জানে না।এই আগুন, পরক্ষণেই আবার পানি,যেন আগুন পানির কারবার।একে তো দেরীতে বিয়ে তার উপর স্যাটেল্ড।বিয়ে করেছে দু’বছর হতে চললো,কনসিভ করছেনা রেহানা।খুঁটিনাটি অনেক বিষয়ে বিরোধ থাকলেও সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে আলমগীর।

আজকের পত্রিকার  সাহিত্য পাতাটা পড়তে পারলে ভালো হতো কিন্তু বাধ্য ছেলের মতো ডাইনিং টেবিলে এসে বসে পড়ে।গরম চায়ে টোস্ট ভিজিয়ে হেনা মানে রেহানার শান্ত মুখের  দিকে তাকায়।

–আমি সব লিখে রেখেছি কাগজে। কাজটা শেষ করে আসার সময় মোড়ের দোকান থেকে বাজারগুলো নিয়ে আসবে। পরে কিছু মনে পড়লে ফোন করে জানাবো,মোবাইল সাথে নিও।হাতের কাগজটা থেকে মুখ তুলে প্রশ্ন করে, মালেশিয়ায় তোমার ট্রেনিং কবে থেকে যেন?

–আগামী মাসে,বিশ দিনের ট্রেনিং।ঠিক সময়ে জিও পেলেই হয়।আমাদের ডিপার্টমেন্টের যে অবস্থা!

এলাকাটা বেশ ঘিঞ্জি, বর্ষাকালে একতলা বাড়ি,দোকান ঘর সব চাক্তাই খালের নোংরা পানিতে ডুবে যায়। ঘর ভাড়াটা অন্য এলাকার চেয়ে একটু কম।মাষ্টারপুলের উপর প্রতি সন্ধ্যায় যে অস্থায়ী বাজার বসে তার বিপরীত দিকের সরু রাস্তা ধরে গেলে ছালা কলোনি। বিশাল এক বস্তি,পোকামাকড়ের মতো লাইন ধরে যেন দাঁড়িয়ে আছে ত্রাণের অপেক্ষায়। ঐ বাজারে যারা মাছ-সবজি বিক্রি করে তাদের বেশির ভাগই থাকে এই কলোনিতে। এদের সূত্র ধরে গার্মেন্টসে কাজের উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে আসে মেয়েরা,যারা চাকরি জোটাতে পারে না তারা আশেপাশের বাসাবাড়িতে ছুটা কাজ করে। সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়ে গার্মেন্টসে। কিছুদিন কাজ করে ছাটাই হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে বাসাবাড়ির কাজে।কেউ কেউ ধকল সইতে না পেরে বাসাবাড়ির কাজের মধ্যে থেকে যায়।যদি ও এই সংখ্যা খুবই কম।

আলমগীর ঘরের জামা কাপড় বদলাতে গিয়ে মনে মনে ভাবে,বের হলেই ছালা কলোনিতে ঢুঁ মারতে হবে কাজের মেয়ের সন্ধানে। মালেশিয়ায় যাওয়ার আগেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে।পত্রিকায় চোখ পড়ায় আবার সোফায় এসে বসে।গার্মেন্টস শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা কলাম পড়ার চেষ্টা করে –ডলারের ফ্লো,রেমিট্যান্স, রিজার্ভ এসব নিয়ে জট পাকিয়ে যায়।ভাবতে ভাবতে চোখ ঝাপসা হয়ে একসময় তন্দ্রার মতো এসে যায়। তন্দ্রাটা গভীর ঘুমে রূপ নিতে পারতো যদি কলিং বেল বেজে না ওঠতো।

দরজা খুলে দেখে আছিয়া দাঁড়িয়ে আছে। বাঘের তাড়া খাওয়া হরিণীর মতো চোখে মুখে রাজ্যের আতঙ্ক। ঘরে ঢোকার ইঙ্গিত করে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে–হেনা,দেখো কে এসেছে। এমন সময় অপ্রত্যাশিতভাবে যে আছিয়া এসে জুটবে রেহানা বা আলমগীর কেউ ভাবতে পারেনি।

কিছু বুঝে উঠার আগেই মরা কান্না জুড়ে দেয় আছিয়া…

আ-র গার্মেনসত কাম কইত্তাম ন।আল্লা রে আল্লা, এতগুলান মানুষ ফুইড়া ছাই হই গেল্।আল্লার গজব ফইচ্চে,গরীবের উরফে আল্লার গজব ফইচ্চে।গরীব মাইনষের আর বাঁছন নাই। ভাবী গো,আমারে বেতন বাড়াই দেওনের দরকার নাই, আগের বেতনেই ছইলব…।রান্নাঘরে ঢুকেই কাজে লেগে যায় আছিয়া।

আপাতত সমস্যার সমাধান হলো,তাকে আর বস্তিতে যেতে হবে না।আলমগীর মনে মনে ভাবে, কতো বিচিত্র এই দুনিয়া! এতো বড় দূর্যোগের কারণে তার সমস্যাটা সহজেই সমাধান হয়ে গেল।

আছিয়া যেদিন কাজ ছেড়ে দিয়েছিল,সেদিন কী বিশ্রী কান্ডই না ঘটলো।কাজকর্ম শেষ করে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে গ্রিবা বাড়িয়ে টেনে টেনে বললো,ভাবী…জিনিসফত্রের যে দাম বাইচ্ছে কুলাইত ফারিয়ের না।আঁরে আরো ফাঁশসো টেঁয়া বাড়াই দেওন লাইগব।নইলে কাম ছাড়ি দিমু।

খেঁকিয়ে উঠে রেহানা–দুই মাস আগে না তোকে পাঁচশো টাকা বাড়িয়ে দিলাম, আবার কেন টাকার কথা বলছিস?

–আফনে আমারে কয় টেঁয়া দেন,গার্মেনসে গেলেই তো ফাঁছ হাজার বেতন।আফনে ফাইরলে বাড়াই দিবেন,না ফাইরলে নাই।

–আরে, যা… যা।ভাত ছিটাইলে কাকের অভাব হয় না।

পাশের ঘরে পত্রিকা পড়তে পড়তে সব শুনে আলমগীর। রেহানার এই কুৎসিত তর্ক শুনে মনে মনে লজ্জা পায় সে। ভাবে জীবনে এমন সময়ও আসে,যখন ভাত ছিটালেও কাক পাওয়া যায় না।তার জানতে ইচ্ছে করে, গার্মেন্টসের মেয়েগুলো ঘন্টায় কতো ডলার সারপ্লাস তৈরি করছে আর সেই সারপ্লাসই বা কোথায় গিয়ে জমা হচ্ছে? ভাবতে ভাবতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলোতে ফিরে যায়। মইনুল স্যার কী সুন্দর করেই না সারপ্লাস ভ্যালু পড়াতেন পলিটিক্যাল ইকোনমির ক্লাসে।

–হঠাৎ হেঁচকা টানে হাত থেকে পত্রিকা টেনে নিয়ে রেহানা বলে,” শুনেছো,হারামিটা কি বলে? আরো পাঁচশো টাকা বাড়িয়ে না দিলে কাজ ছেড়ে দিবে।তার উপর মুখে মুখে তর্ক।

–আ হা,চাইছে যখন কিছুটা বাড়িয়ে দাও।

–তোমার ও যেমন কথা, শুনলে গা জ্বলে যায়।একটা কাজের মেয়ে কাজ না করার হুমকি দিয়ে টাকা বাড়িয়ে নিবে-এটা রীতিমতো মাস্তানী। তুমি বলছো বাড়িয়ে দিতে!

–জিনিসপত্রের দাম যা বেড়েছে, মেয়েটা হয়তো কুলাতে পারছেনা,সেজন্য চেয়েছে। তাছাড়া আমরা যে টাকা দিই সেটা তো সেই তুলনায় কমই।গার্মেন্টসে কাজ করলে এই মেয়ে কতো টাকা মজুরি পেত, জানো?

–রাখো তোমার লেকচার,এসব লেকচার বস্তিতে গিয়ে দাও,ভালো হাততালি পাবে,পারলে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যাও।আমার কাছে তোমার এসব সস্তা কথার কোন দামই নেই।

–এটা লেকচার বলছো কেন? গরীব মানুষ…।

এবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করে রেহানা।তর্কে কুলিয়ে উঠতে না পেরে সবচেয়ে কঠিন অস্ত্র শানায়,” কাজের মেয়েগুলোর প্রতি তোমার এতো টান কিসের শুনি?আমার ভাবতেও লজ্জা হয়,তোমার রুচি আর কতো নিচে নামবে? পাঁচশো কেন পাঁচ হাজার দিয়ে দাও,ইচ্ছে করলে পারমানেন্টলি ঘরে তুলে আনো।”

— ছিঃ, তুমি না সোসিওলোজির ছাত্রী, নারীর উন্নয়ন নিয়ে সারাদিন কাজ করো! গরীব একটা মেয়ের সামান্য কয়টাকা বেতন নিয়ে এতো কথা বলছো কেন,হেনা?

প্রায় তেড়ে এসে রেহানা–“এই আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না,সব জ্ঞান তোমার ছাত্র ছাত্রীদের দিও।”

এবার একেবারে কাবু হয়ে পড়ে আলমগীর। এর আগে ও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়েছে।আছিয়ার আগে যে মেয়েটি কাজ করতো তার নাম বিলকিস। কী এমন বয়স তার,বিশও পার হয়নি।কোলে ফুটফুটে বাচ্চা, সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় ফিরে যায় ঐ খুপরি ঘরে।ছেলের জ্বরের কারণে তিনদিন কাজ কামাই করেছিল, রেহানা গুণে গুণে ঐ তিনদিনের টাকা কেটে রেখেছিল।

“গরীব মানুষ, কেন খামাখা টাকা কেটে নিচ্ছ?”–এ কথা বলতেই রেহানা ফোঁস করে ওঠে।

” টাকা কেটে নেবো না? ছেলের জ্বরের অজুহাত দিয়ে ফুর্তি করবে-ওর কাজ করবো আমি, আমাকে কি পেয়েছ তুমি?”

–বাচ্চা মানুষ জ্বর হতেই পারে।আর এ কয়টা টাকা রেখে কী লাভ হবে?

আলমগীরের এ কথায় রেহানা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে ” কাজের মেয়ের দোষ না দেখে উল্টো তার পক্ষ নিয়ে সাফাই গাইছো,ব্যাপার কি!”

এ কথায় বাতাস বের হওয়া বেলুনের মতো একেবারেই চুপসে গিয়েছিল আলমগীর।

      বিশ দিনের ট্রেনিং হলেও সিঙ্গাপুর হয়ে ফিরতে পঁচিশ দিন লেগে যায়।সেদিন সন্ধ্যায় এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে সোফায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। আগের মতো মনে অস্থিরতা নেই, সময় সব ক্ষত সারিয়ে তুলে হয়তো।ব্যাগ থেকে পছন্দের জিনিসগুলো একে একে বের করছে রেহানা।লেডিস ব্যাগ,স্যান্ডেল, কসমেটিকস সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে,মনে হলো পছন্দ হয়েছে।

বেডরুমে সবকিছু রেখে হঠাৎ পেছন দিক থেকে এসে গলা জড়িয়ে ধরে আলমগীরের।

“শোন,আছিয়া মেয়েটা আসলে অনেক ভালো,ভেবেছি ওর বেতন কিছু বাড়িয়ে দিব”।

মাথা ঘুরিয়ে চোখ বড় করে তাকায় আলমগীর –আ রে বাবা,কি কথা শুনছি এটা! এখন কাজের মেয়ের সঙ্গে পিরিত কে করছে?

— রাখো এসব,কখন কি বলেছি সেটা ধরে থেকো নাতো মেয়েমানুষের মতো।আরে… শোন না,আছিয়া বলেছে এ সময়টায় কাজ ছেড়ে যাবে না “।

–কোন সময়টায়?

–আরে…বুদ্ধু, নতুন অতিথি আসছে,তুমি বাবা হচ্ছো।টেস্ট পজিটিভ এসেছে। ভাবছি ছুটিটা শেষের দিকে নেবো,আফটার ডেলিভারি লম্বা সময় পাওয়া যাবে।

সোফা থেকে উঠে রেহানাকে জড়িয়ে ধরে,

“সত্যি বলছো,আগে বলোনি কেন? খুব সাবধানে থাকতে হবে তোমাকে। আছিয়াকে এক হাজার টাকা বাড়িয়ে দিও।তোমার খেয়াল রাখবে।

রান্নাঘরে থালা বাসন ধোয়ার শব্দের সাথে আছিয়ার মোবাইল বেজে ওঠে।

–হ্যালো,বুবু।কেমুন আছো।

অপর প্রান্তের কথায় দ্রুত হেঁটে লাগোয়া বারান্দায় চলে আসে সে।

–ফ্যাক্টরি কোন্ আনে কইলা, দেয়ান হাট? হেতারা কতো দিব,কিছু জানোনি?

রেহানার দেওয়া ভাত তরকারির পুটলিটা ঐ বাসায় ফেলে এসেছে আছিয়া।অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে পড়ে, গতকাল জমিদার এসে ঘরভাড়া বাড়িয়ে দিতে বলেছে আগামী মাস থেকে।স্বামী একসিডেন্ট করে বিছানায় পড়ে আছে,সুদের টাকায় চিকিৎসা চলছে।সন্তান সম্ভবা রেহানার হাসিখুশি মুখটাও চোখে ভাসছে।গেইটের কাছে আসতেই ইলেক্ট্রিসিটি আসে, আর বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ও বেড়িয়ে আসে।