স্বাস্থ্য

ক্যান্সার ও তার প্রতিকার!

– শাহীন আকতার হামিদ

শাহীন আকতার হামিদ

ক্যান্সার কোন মরণব্যাধি নয়, আমরা নিজেরা ও আমাদের আপনজনেরা  সবাই নিজেদের শরীর সম্পর্কে খুব উদাসীন। শরীরের সাধারন সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা না করে সময়মত ডাক্তারের পরামর্শ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক ধারণা পেতে হয়।   ঠিক সময়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে তা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।

সব ধরনের ক্যান্সারের ই চারটা পর্যায় থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে এবং ঠিক ভাবে চিকিৎসা হলে এ অসুখ সম্পূর্ণভাবেই ভাল হয়ে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে যখন ক্যান্সার থাকে তখন সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যাওয়ার পরেও ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণেই   কিছুদিন পর পর পরীক্ষা করে জানতে হয় শরীরের কোন অংশে ক্যান্সার পুনরায় ফিরে আসল কিনা। চতুর্থ বা শেষ পর্যায়ে  ক্যান্সার ধরা পড়লে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে, তবে এক্ষেত্রেও সমাধান আছে।

ক্যান্সার চিকিৎসা যেমন জটিল তেমনই ব্যয় বহুল। যে সব রোগীদের অর্থনৈতিক অবস্থা  খারাপ তাদের জন্য এটা একটা মহামারি হিসাবেই দেখা দেয়।

বেশিরভাগ প্রাণীর শরীরের মধ্যে ক্যান্সার কোষ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে, ক্রমান্বয়ে খাবার ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে  তা জীবন সংহারী কোষে পরিনত হয় যা শরীর নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। এই কোষ শরীরের সব  অংশকে আক্রমন করে, যেখানে কোষগুলো ক্রমান্বয়ে  অনিয়ন্ত্রনে চলে যায়। এই অনিয়ন্ত্রিত কোষই টিউমার সৃষ্টি করে । ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তারা সাধারণ কোষকেও আক্রমন  করে এবং শেষ পর্যন্ত সমগ্র শরীরকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ফেলে। মানুষের শরীরে ২০০ র ও বেশী ধরণের কোষ আছে এবং প্রতি ধরণের কোষেই আলাদা রকমের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

যখন পরিপূর্ণ অঙ্গ তৈরি হয় তখন জন্ম হওয়া নুতন কোষ অঙ্গস্থিত অন্য ত্রুটিপূর্ণ কোষকে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গা দখল করে। কোষ বিভাজন কঠিন ভাবে নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করে। যতটা কোষ দরকার হবে ততটাই জন্ম নিবে বেশি ও নয় কম ও নয় । যে কোষের পরিবর্তে  নুতন কোষ জন্মাবে সে আগের কোষটির সবকিছুই  নিজের মধ্যে ধারন করবে। কোষেরা খুব ভাল করেই জানে কখন থামতে হবে ও কখন বিভাজন চলবে। ওরা নিজেদের মধ্যে একটা রাসায়নিক সংকেত পাঠায় এবং সে  অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবেই শরীরের অঙ্গগুলো নৃতাত্ত্বিক নিয়ম মেনে চলে!কেমন করে কোষ এতটা নিয়ম মেনে চলে তার উপর এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গবেষণা চলছে।

ক্যান্সার কোষ কোন নিয়মই মানেনা। তারা  খুব দ্রুতভাবে বাড়ে এবং সাধারণ কোষকে মেরে ফেলে। সাঙ্কেতিক আদান প্রদান নষ্ট হয়ে যায় বিধায় তাদের প্রতিবেশি কোষের সাথে কোন যোগাযোগ থাকেনা ফলে তারা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়তে থাকে। ওরা নিজেদেরকে ধবংস করেনা কিন্তু মুল ক্যান্সার কোষের প্রতিনিধি হয়ে লক্ষ্যহীন ভাবে বাড়তে থাকে। সাধারণত ওরা ভাল কোষ থেকে সঙ্কেত চুরি করে নিয়ে ভাল কোষকে ধংস করে দেয়। এরা যে নিজেদের মধ্যে কোনও সঙ্ককেত আদান প্রদান  করতে পারেনা, এর একটা বিশেষ কারণ হল ওদের উপরিস্থিত ক্ষুদ্র কণা যা সাংকেতিক মাধ্যম হিসাবে কাজ করে তা নষ্ট হয়ে যায়।

ক্যান্সারের কারন হিসাবে যে সব বিষয়গুলোকে ভাবা হয় তা হলঃ

শরীরের মধ্যে বিভিন্ন কোষ বিভিন্ন কাজ করে থাকে। তাদের সবার একটা কেন্দ্র থাকে যাকে বলা হয় নিউক্লিয়াস, এর মধ্যে যে কোড থাকে তাকে বলা হয় জিন। এই জিন বিভিন্ন সংবাদ আদান প্রদান করে। এটা মাঝে মাঝে কাজ করে , মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেয়। সাধারনত এ  জিনই কোষকে নিয়ন্ত্রন করে। তারাই সিদ্ধান্ত নেয় কখন কোষের পুনর্জন্ম হবে, কোন কাজ করবে ও কখন সে মারা যাবে। যখন এ নিয়মটা ভেঙ্গে যায় তখনি  ক্যান্সার কোষের জন্ম হয়।  আর একটু গভীরভাবে দেখলে জানতে পারা যায় জিন কোষকে বলে প্রোটিন বানাও,সে প্রোটিন বানায়, কারন জিন জানে প্রোটিনই কোষের স্বভাবটাকে নিয়ন্ত্রন করে। মানুষের শরীরের হাজার- কোটি জিনই সব কিছুর জন্য দায়ি। এসব জিনের মুল অংশ হল ডি এন এ। জিন হয় ক্রমোজম  থেকে, অর্ধেক ক্রমোজম আমরা পাই মায়ের কাছ থেকে অর্ধেক বাবার কাছ থেকে। মানুষের শরীরে ২৫০০০ জিন আছে,  বিজ্ঞানিরা ৩০০র মত জিন বের করতে পেরেছে, যার কিছু জিন ক্যান্সার বানানোর কাজ করে।

যে জিন কোষকে ক্যান্সার কোষে পরিনত করে তারা আমাদের জীবন যাপন, পারিপার্শ্বিকতা , খাবার, ও বংশানুক্রমিকতা দিয়ে প্রভাবিত হয়। এর জন্য ক্যান্সারের ডাক্তারগণ আপনাকে প্রথমে প্রশ্ন করবে ফ্যামিলিতে কারো ক্যান্সার হয়েছিল কিনা, কি ধরনের খাবার খাওয়া হচ্ছে, কি ধরনের পরিবেশে থাকা হচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পরার দিক থেকে সাধারনত দু রকম ক্যান্সার দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায় ও মেটাসটেসিস( ক্যান্সার উৎপত্তি স্থান থেকে ছড়িয়ে অন্যান্য অঙ্গকে আক্রমণ করা)।

আমাদের শরীরে প্রায় ২০০র ও বেশি ক্যান্সার হতে পারে। বেশির ভাগই স্থানীয় ক্যান্সার। এটা সাধারনত ঘটে থাকে যখন টিউমার নিজে চাপ বাড়িয়ে দেয় ও লসিকা দ্বারা অন্যান্য আশেপাশের কোষকে আক্রমন করে। এভাবেই  ক্যান্সার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।  ক্যান্সার কোষ যখন দেখা দেয় তখন সে তার আশেপাশের সরু রক্তনালিকা গুলকে মেরে ফেলে, ফলে ওই জায়গার অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ক্যান্সার কোষ খুব দ্রুতগতিতে শরীরের মধ্যে ঘোরা ঘুরি করতে পারে যা সাধারন কোষ পারেনা।

গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সার কোষ থেকে এক ধরনের পদার্থ বের হয় যা তাদেরকে জায়গা পালটাতে সাহায্য করে। ওই বিশেষ পদার্থের কারনেই ক্যান্সার স্থানীয় ভাবে ছড়ায়।  এ ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে বিজ্ঞানীরা একটা আশার আলো দেখছেন, তারা ভাবছেন কোন ভাবে যদি ওই বিশেষ পদার্থটির উৎপত্তি রহস্য উদ্ভাবন করা যায় তখন স্থানীয় ক্যান্সার চিকিৎসা সহজ হয়ে যাবে।

ছড়িয়ে পরা ক্যান্সার বা মেটাসটেসিস হওয়ার জন্য ক্যান্সার কোষ দুধরনের পথ অবলম্বন করে। একটা হল রক্তবাহী নালী ও আর একটা হল লসিকা বাহী নালি। মেটাসটেসিসের ক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষ প্রথমে নিজেকে তার উৎপত্তি স্থান থেকে আস্তে আস্তে সরে যায় রক্তনালির দিকে, এরপর রক্তনালির দেয়াল ভেদ করে ঢুকে পরে রক্ত নালিতে। ক্যান্সার কোষ রক্ত নালির সাথে প্রবাহিত হতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে আর একটা জায়গা নির্বাচন না করে। নির্বাচিত জায়গায় গিয়ে সে আবার রক্তনালির দেয়ালের দিকে সরে আসতে থাকে এবং সাধারন কোষ কে মেরে নিজে  জায়গা করে নেয় এবং বাসা বাঁধে। এ ভাবেই চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে পুরো শরীরকে  আয়ত্তে নিয়ে না আসে। সাধারনত ক্যান্সার কোষ যখন রক্তপ্রবাহ নালিতে ঢুকে পরে, তখন সাদা রক্তকনিকা ওদের মেরে ফেলার চেষ্টা করে এবং মেরে ফেলে। খুব শক্তিশালী ক্যান্সার কোষ না হলে সে টিকে থাকতে পারেনা। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন ভেঙ্গে পরে তখন ক্যান্সার কোষেরই জয় হয়। তা ছাড়া ক্যান্সার কোষ শ্বেত রক্তকণিকাকে ধোঁকা দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে অণুচক্রিকার পিঠে সওয়ার হয়ে চলে এবং তার লক্ষে পৌছায়।

কিছু কিছু স্থানীয় কান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা যখন ছড়িয়ে পরে প্রথমত তারা একটা অঙ্গকেই আক্রান্ত করে। যেমন বৃহদান্ত্রে যখন কান্সার হয় ম্যাটাটেসিসের প্রথম তারা লিভারকে আক্রমন করে। এর কারন হল বৃহদন্ত্র থেকে রক্ত লিভার হয়ে হৃদযন্ত্রে যায়, যার জন্য ওখানে প্রথম বাসা বাঁধে।

রক্তনালির মাধমে যে ভাবে ক্যান্সার ছড়ায় লসিকা নালির মাধমে একই ভাবে ছড়ায়। লসিকা রঙহীন তরল পদার্থ যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নালি দ্বারা সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। সাধারনত টিসু ও কোষ লসিকার মধ্যে ডুবে থাকে।

শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লসিকা গ্রন্থির অবস্থান এবং সেখান থেকে নালি দ্বারা লসিকা প্রবাহিত হয়। ক্যান্সার কোষ এ লসিকার মাধমে তার উৎপত্তি স্থান থেকে অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। মেটাসটেসিস হওয়ার আগেই স্থানিয় ক্যান্সারের আশেপাশে যে লসিকা নোড(লিম্ফ নোড) থাকে তারা আক্রান্ত হয়। পরে লসিকা নালীর মাধমে শরীরের অন্যান্য অংশের লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে যায়।

রক্তের ক্যান্সার অন্য বিষয়; হারের মেরুমজ্জাতে আমাদের রক্ত উৎপাদিত হয়। রক্তে তিন ধরনের উপাদান থাকে, লাল রক্ত কনিকা,সাদা রক্ত কনিকা ও অনুচক্রিকা। সাদা রক্ত কনিকার পরিমান যখন অনেক বেশি বেড়ে যায় তখন জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারনে রক্তের মধ্যে লাল কনিকা ও অনুচক্রিকার পরিমান কমে যায়। এক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  একেবারেই কমে যায় এবং মানুষ অসুস্থ হয়ে পরে। মেরুমজ্জার রক্ত উৎপাদন কারী মুল কোষের বা পাথমিক কোষের ত্রুটির কারণেই সাধারনত রক্তের ক্যান্সার হয়ে থাকে।

ক্যান্সার চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল একটা পদ্ধতি। কয়েক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে এর চিকিৎসা করা হয়। ডাক্তার ও নার্স মিলিয়ে বেশ বড় একটা দল এ চিকিৎসায় কাজ করে। সাধারণত কেমওথেরাপী, রেডিওথেরাপী ও অপারেশন করে ক্যান্সার চিকিৎসা দেয়া হয়। অনেক সময় ক্যান্সারের অবস্থান ও পর্যায়ের উপর ভিত্তি করে কেমওথেরাপী ও রেডিওথেরাপী একসাথে দেয়া হয়, এরপর অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরে দরকার হলে কেমও বা রেডিও  থেরাপি দেয়া হয়। তবে সব ধরনের চিকিৎসার আগে শরীরের নানাবিধ পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হয়। চতুর্থ পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা একটু ভিন্ন প্রকৃতির। ক্যান্সার কোষ যাতে আর বেশি বেড়ে না যায় তাদের ক্ষেত্রে সেটাই খেয়াল রাখতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদেরকে সব ধরনের চিকিৎসাই দিতে হয়। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ক্যান্সার চিকিৎসায় আরও কিছু নুতন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন বায়োলজিক্যাল থেরাপি ও হরমন থেরাপি।

রক্তের ক্যান্সারের জন্য স্টেম কোষ প্রতিস্থাপন (stem cell transplant) উপযোগী পদ্ধতি। সাধারনত নিজের ভাই- বোনদের কাছ থেকে স্টেম কোষ (stem cell) নিতে হয়। অনেক সময় stem cell দেয়ার জন্য মানুষ ভাড়া পাওয়া যায়। stem cell transplant একটি জটিল পদ্ধতি।

আমাদের দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় যে সমস্যাগুলো হয় ও তার সমাধান তা নিম্নরূপঃ

  • রোগী যখন ডাক্তারদের কাছে আসে ক্যান্সার প্রায়ই শেষ পর্যায়ে থাকে।

  • ঠিকভাবে কিছু বলতে পারেনা কোথায় কি হয়েছে।

  • রোগ সম্পর্কে বেশি প্রশ্ন করলে রোগী বলে আমরা যদি সব জানি ত টাকা খরচ করে আপনাদের কাছে আসব কেন। এ কথাগুলো নাকি বাংলাদেশের সাধারন পর্যায়ের শিক্ষিত মানুষেরাই বেশি বলে।

  • বই পড়তে না জানা মানুষেরা তো কোন কথাই বলতে পারেনা।

  • নানা ধরনের চিকিৎসা করানোর পরে আমাদের কাছে আসে।

  • আমরা বাধ্য হয়ে নানা রকমের টেস্ট দিয়ে থাকি, যার অর্ধেক টেস্টই কোন কাজে লাগেনা, কারণ তারা সমস্যার কথা ঠিকভাবে বলতে পারেনা।

  •  প্যাথলজি টেস্টের ফলাফল অনেক সময় ঠিক মত আসেনা, তার কারন প্যাথলজি সেন্টার গুলো ঠিকভাবে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করেনা ও অদক্ষ টেকনিশিয়ানরা জানেনা কি করছে।

  • টাকা পয়সার সঙ্গতি না থাকার কারনে বেশিরভাগ রোগীই মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়।

  • ক্যান্সারের চিকিৎসা হল গতানুগতিক, সার্জারি-কেমো-রেডিয়েশন। অন্য যেসব চিকিৎসা, যেমন বায়লজিক্যাল  বা হরমন থেরাপী তা এখনও আমাদের  দেশে চালু হয়নি।  রোগীরা নিজেরা ও তাদের পরিবার পরিজন যদি সচেতন হয়ে অসুখটা সম্পর্কে জানে তখন ডাক্তারদের জন্য চিকিৎসা বিষয়টা সহজ হয়।

  • রোগী ও তার পরিবার পরিজনকে আগে থেকেই সচেতন হয়ে  বুঝতে হবে কি হচ্ছে, কোথায় সমস্যা হচ্ছে?

  • সে জন্য তাদের সচেতন হতে হবে।

  • প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা  না পরার কারণই হল রোগী ও তার পরিবার পরিজন সচেতন নয়, চিকিৎসাতো আরও পরের কথা।

  • ক্যান্সার চিকিৎসা খুবই ব্যায়বহুল ও সাধারণ মানুষের আয়ত্বের বাইরে, সেক্ষেত্রে সরকার ও ধনবান মানুষদের এর দায়ভার বহন করতে হবে।

ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল কাজ হল নিজের শরীর সম্পর্কে জানা।

  • নিজের শরীরের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত প্রতিটা অংশই নিজের, যা সম্পর্কে আপনি যেভাবে বুঝবেন তা অন্য কেউ বুঝবেনা, হোক সে আপনার মা-বাবা অথবা পার্টনার।

  • স্বাভাবিকতার চেয়ে শরীরের কোন অংশ যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে তখন তার কারণ নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে।

  • ডাক্তারের কাছে যাবেন ও ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলবেন কি হয়েছে।

  •  ডাক্তারকে বুঝিয়ে বলবেন যে আগে ক্যান্সারের টেষ্ট দিন

  • ডাক্তারগণ নানাজাতীয় রক্ত পরীক্ষা করতে দিবেন

  • রিপোর্টগুলো ডাক্তারের কাছ থেকে বুঝে নিবেন

  • প্রতিটা ক্যান্সারের চিকিৎসা আলাদা, আর চিকিৎসা করা হয় ক্যান্সারের স্টেজের উপর ভিত্তি করে

  • জেনে নিবেন স্টেজগুলো

  • শরীরে অক্সিজেনের পরিমান কত তা জেনে নিবেন

  • কোষের উপর পরিবেশ ও খাওয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সব সময় মনে রাখবেন কোষ যদি অক্সিজেন না পায় তা মরে যেতে থাকে, সুতরাং খাওয়া ও পরিবেশ দিয়ে আপনার শরীর ঠিক রাখতে হবে।

  • প্যাপিলমা ও হ্যালিকোব্যাক্টেরিয়া পাইলোরি এ দুট ব্যাক্টেরিয়া আমাদের মত দেশে অনেক ক্যান্সারের জন্য দায়ী। হাইজেন সম্পর্কে আমাদের ধারণা অনেক ক্ষেত্রেই  খুব কম। আপনি গ্রামে থাকুন, মাটি বা  খড়ের ঘরে থাকুন কিন্তু পানি ও টয়লেট সম্পরকে সচেতন থাকুন, নিয়মিত পানি ফুটিয়ে ছেকে খাবেন ও টয়লেটে জারম কিলার ব্যবহার করবেন।  মেয়ে ও ছেলেদের প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারগুলো শুরুই হয় প্যাপিলোমা ভাইরাস দিয়ে। মুখগহ্বর থেকে মলনালীর ক্যান্সার শুরু হয় পাইলরি দিয়ে। টয়লেট ও রান্নাঘর শুকনো রাখা খুব দরকার। যে ভিজা কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে আপনি  হাড়িপাতিল পরিস্কার করেন তা ভিজা থাকলে ব্যাক্টেরিয়া জমে, কথাটা সব সময় মনে রাখবেন।

ক্যান্সার নির্ণয়ে নানা ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে এম আর আই হল সবচেয়ে উপকারী। আর একটি পরীক্ষা হল বায়োপ্সী। এ ছাড়া নানাজাতীয় রক্ত পরীক্ষায় ক্যান্সার ধরা পরে।

শরীর অনেক দুর্বল থাকলে বা ক্যান্সার হলে  যে সব খাবার খেতে হবে বা তা নিম্নরূপঃ

  • প্রোটিন- ছোট মুরগি, মাছ ও অন্যান্য প্রোটিন যুক্ত খাবার তবে মসলা ছাড়া হলে ভাল হয়। যেকোন ডালে মুরগি দিয়ে রান্না করলে খেতে ভাল লাগবে, সেক্ষেত্রে মসলা দিতে হবেনা।ডালে বিভিন্ন সবজি দিয়ে সুপের মত রান্না করে দিলে ডায়াবেটিস ও লিভার ক্যান্সার দুটোরই উপকার হবে।

  • কার্বোহাইড্রেট – ভাত রুটি পরিমান মত যা ডায়াবেটিসের রোগীকে সাধারণত দেয়া হয়।

  • ফ্যাট- অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করতে পারলে ভাল হয়।

  • ভিটামিন- ডাক্তারের সাথে আলাপ করে দিতে হবে।

  • মিনারেল- ডাক্তারের সাথে আলাপ করে ক্যালসিয়াম, আয়রন, আইয়ডিনন, সেলেনিয়াম দিতে হবে।

  • ফাইবার যুক্ত খাবার- ফল, সবজি, ডাল শিমের বিচি, দিবেন। গম দিয়ে সুপের মত রান্না করে দিতে পারেন। মনে রাখবেন টেস্টিং সল্ট বা এই জাতীয় কোন রাসায়নিক জিনিস দিবেন না।

  • ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে উপরোক্ত খাবারগুল দিলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে থাকবে। একটা কথা  মনে রাখবেন ডায়াবেটিস যেন কখনও ৪ এর নিচে না নামে।

  • প্রচুর পানি পান করতে হয় ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস দু ক্ষেত্রেই।

নিজে সচেতন থাকুন ও অন্যকে সচেতন করুন!

সূত্রঃ

https://be.macmillan.org.uk/be/s-536-cancer-awareness.aspx

https://www.aacr.org/patients-caregivers/awareness-months/