চলমান সংবাদ

নিষেধাজ্ঞা শেষেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গভীর সাগরে নামতে পারেছন না জেলেরা উপকূলের কাছাকাছি ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ

দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ শিকারে নামতে জেলেদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতি। সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরতে যেতে পারছে না চট্টগ্রামের বেশির ভাগ মাছ ধরার ট্রলার। সাগরপাড়ে অপেক্ষায় হাজার হাজার জেলে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল শনিবার সকালে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে নির্দেশ দিয়েছে। গভীর সমুদ্র যাত্রা আপাতত বিপজ্জনক হওয়ায় উপকূলের কাছাকাছি থেকে মাছ শিকারে নামে জেলেদের একটা অংশ। অতটুকুতেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। অন্যরা জাল, ফিশিং বোটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সাগরে নামার প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় আছেন, কখন সাগর শান্ত হবে। শনিবার (২৪ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ফিশারিঘাট এলাকায় দেখা যায়, মধ্যরাতে যারা সাগরে মাছ শিকারে নেমেছেন, তাদের জালে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ। চট্টগ্রাম সোনালি যান্ত্রিক মৎস্যশিল্প সমবায় সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের নতুন ফিসারিঘাটে ২২০টি এবং পুরোনো ফিসারিঘাটে ৬৮টি আড়তেও নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২৫ হাজার ৬৭৫ জন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরেই আছেন ৩ হাজার জেলে। সাগরে যাওয়ার জন্য নগরের ফিসারিঘাটে অপেক্ষা করছেন এমভি মোহছেন আউলিয়া ট্রলারের মাঝি মো. আলম। তিনি বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে নামার সব প্রস্তুতি থাকলেও সাগর উত্তাল। দুই/তিন দিন আমরা অপেক্ষায় থাকতে হবে। সিগন্যালের কারণে সাগরে যাইতে পারছি না। বহুদিন অভাব-অনটনে আছি। যারা উপকূলের কাছাকাছি মাছ শিকার করেন তারা সাগরে নেমেছেন। সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের সহাকারী পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, সাগরে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬৫ দিন মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে শুক্রবার মধ্যরাত ১২টায়। আমরা ১৮০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারকে সাগরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি। আর ইঞ্জিনচালিত নৌকা যেগুলোর লাইসেন্স আছে তারাও মাছ শিকার শিকারে যাবেন। সোনালি যান্ত্রিক মৎস্যশিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার বলেন, ‘মাছ ধরার কোনো ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না। হাজার হাজার জেলে সাগরপাড়ে বসে আছেন। তবে কিছু জেলে গভীর সাগরে না গেলেও তীরবর্তী এলাকায় ট্রলার নিয়ে মাছ ধরছেন। আবহাওয়া কিছুটা ভালো হলেই গভীর সমুদ্রে ছুটবেন তারা।’ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত চলছে। মৎস্য শিকারে সমুদ্রগামী সব নৌযানকে সাবধানে থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, সাগরে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এছাড়াও আশ্বিনের পূর্ণিমার চারদিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন মোট ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এই দুই দফায় বেকার হয়ে পড়া জেলেদের সরকার সহযোগিতা দিয়ে থাকে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের এই দুই দফা নিষেধাজ্ঞার কারণে সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ প্রতিনিয়তই সমৃদ্ধ হচ্ছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বঙ্গোপসাগর থেকে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯১১ মেট্রিকটন মৎস্য আহরণ হয়েছিল। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিকটন। ২০২০-২০২১-এ তা আরও সমৃদ্ধ হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
# ২৪.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #