চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে আশংকাজনক হারে হাসপাতালে শয্যা সংকট, আইসিইউ’র জন্য হাহাকার

স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা ও ঈদ উপলক্ষে লকডাউন শিথিল করায় চট্টগ্রামে বেড়েছে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি করোনা পরবর্তী নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত অন্যান্য রোগীর সংখ্যাও তুলনামূলক বেড়েছে। ফলে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো। তবে চলমান কঠোর লকডাউনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গত দুই সপ্তাহ ধরে রেকর্ড সংখ্যক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এইসময়ে রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী মারা গেছেন। হাসপাতালগুলোতে করোনা বেডের পাশপাশি করোনা বিশেষায়িত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চলছে শয্যা সঙ্কট। সরকারি হাসপাতালের পর বেসরকারি পর্যায়েও শুরু হয়েছে আইসিইউ শয্যার হাহাকার। নগরের প্রথমসারির বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন আইসিইউ শয্যার জন্য মোটা টাকার সঙ্গে লাগছে সিরিয়ালও। সরকারি হাসপাতালের চিত্র আরও করুণ। হাতেগোনা কিছু শয্যা, তা পেতেই লম্বা সিরিয়াল। থাকে উচ্চ পর্যায়ের তদবিরও। যে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন রোগীর স্বজনরা। বর্তমানে নগরের পাশাপাশি উপজেলায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। চিকিৎসকরা বলছেন, ভারতীয় ধরনে (ডেল্টা ভেরিয়েন্ট) চট্টগ্রামে সংক্রমণ হার বাড়ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালেও রোগীর তিল ধারণের জায়গা নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে লকডাউন শিথিল করায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে এতো সংখ্যক রোগী বাড়ছে। প্রতিদিন যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হাসপাতালে শয্যা সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, করোনা রোগীর চাপ অস্বাভাকি বেড়েছে। ঈদ পরবর্তী এমন একটা অবস্থা আমরা আশঙ্কা করেছিলাম। এর পাশাপাশি অন্যান্য রোগীর চাপও বেড়েছে। আইসিইউ’তেও চাপ অনেক বেশি। আমরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে এ সংকট মোকাবেলা করছি। সরকারি হাসপাতালে এ মুহূর্তে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। রোগীদের হাই ফ্লো নজল ক্যানোলা, অক্সিজেন আর এইচডিইউ সুবিধা যতটুকু পারছি দিচ্ছি। আইসিইউতে সিট খালি হলে রোগীর অবস্থা বুঝে যার তাকে সেখানে পাঠাচ্ছি। তবে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে মানুষের চলাচল ও সরাসরি যোগাযোগ অনেকটা কমে যাবে। এতে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। এ সংকট নিয়ন্ত্রণ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না, আশা করি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর পাশাপাশি অন্যান্য রোগীর চাপও বেড়েছে। সাম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত, গ্যাস্ট্রোলিভারসহ অন্যান্য রোগীর চাপ বেড়েছে। ফলে হাসপাতালে বেড সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। এতে ভোগান্তি কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, সম্প্রতি কোভিড রোগীর চাপ বেড়েছে। একইভাবে অন্যান্য রোগীর চাপও আছে। বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, আমাদের হাসপাতালে ৬৭টি কেবিন রয়েছে। রোগী ভর্তি রয়েছে ৬৯ জন। তারমধ্যে ১০ জন রোগী আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। দৈনিক ১০-১২ জন কোভিড রোগী ভর্তির জন্য যোগাযোগ করছেন। নগরীর পাহাড়তলীতে বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১৪টি কোভিড আইসিইউ বেড আছে। এর মধ্যে ২টি আছে ভেন্টিলেশন সুবিধাসহ। কোভিড রোগীদের জন্য ৪৬টি কেবিন আছে। ২৭টি এইচডিইউ বেড আছে। ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের ফোকাল পারসন ও একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর ডা. আরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কেবিন, আইসিইউ, এইচডিইউ কোথাও খালি নেই। শুধু দুইটি আইসিইউ বেড আমরা খালি রেখেছি আমাদের রোগীদের জন্য। এদিকে করোনা রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে আরেক বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতাল করোনার বিশেষায়িত দুটি ফ্লোরের পাশাপাশি আরেকটি নতুন ফ্লোর চালু করেছে। হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক তালুকদার জিয়াউর রহমান জানান, এই হাসপাতালে করোনার ৮৪টি কেবিনেই রোগী ভর্তি রয়েছে। কোন কেবিনই খালি নেই। ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন আরও ১৫ করোনা রোগী। ১২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে একটিও খালি নেই। এরমধ্যেই দৈনিক ১৫-১৬ জন রোগীর স্বজন আইসিইউ বেডের জন্য যোগাযোগ করছেন। নগরের অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ডেলটা হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার ও এশিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতালেও করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা দীর্ঘ হচ্ছে আইসিইউতে। শনিবার (২৪ জুলাই) জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৫৬২ জন। শনাক্তের মধ্যে নগরে ৫৬ হাজার ৪৪০ জন। উপজেলায় ১৮ হাজার ১২২ জন। চট্টগ্রামে করোনায় মোট মারা গেছেন ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ৫৩৯ জন নগরের। উপজেলায় মারা গেছেন ৩৩৫ জন। দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত এরআগে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। সেসময় মার্কেট-গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা। পরে ঈদুল আযাহাকে কেন্দ্র করে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে আবার শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। এবারের বিধিনিষেধ চলাকালে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। # ২৪.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #