চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নাই

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ঠেকাতে কোরবানির পশুরহাট না বসানোর সুপারিশ অগ্রাহ্য করেই চট্টগ্রাম নগরীর ৬টি জায়গায় পশু বেচা-কেনার হাট বসেছে। তবে ‘করোনার প্রচন্ড ঝুঁকির’ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রবল বিরোধীতা উপক্ষো করে এই পশুর হাটের কারণে করোনা সংক্রমণের মাত্রা আরো বাড়ার আশংকা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে এসব পশুর হাটের অনুমোদন দেয়া হলেও, নগরীর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার কারোরই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। হাট ইজারার সময় প্রশাসন থেকে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সেসব নির্দেশনাও মানছেন না ইজারাদারেরা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও মুখে মাস্ক পরিধান করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও ব্যক্তিগত সচেতনার দোহাই দিয়ে দায় এড়িয়েছেন তারা। ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। কোরবানির পশুরহাটে গরু কিনতে যাওয়া ক্রেতার উপস্থিতি কম। অন্যদিকে মহামারি পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারি-বেপারিরা ও বিক্রেতারা। কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুর ভালো দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা। তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে করোনার কারণে গরু বিক্রি হয়নি। করোনায় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কোরবানিতে এবার গরু বিক্রি কম হবে বলেও আশঙ্কা তাদের। অন্যান্যবার ঠিক এই সময়ে কোরবানির পশু কিনতে ভিড় দেখা যেত হাটগুলোতে। কিন্তু এবারের চিত্র যেন ভিন্ন। করোনার প্রাদুর্ভাবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি নানা বিধিনিষেধ এসেছে হাট-বাজারগুলোতে। কোরবানি পশুর হাটের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে তিনটি স্থায়ীসহ ছয়টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক। তবে কোরবানির আর মাত্র দুই-তিনদিন বাকি থাকলেও পশুর হাটগুলো সেভাবে জমে উঠেনি। ইজাদাররা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের কোরবানি পশুর হাটে গবাদি পশুর সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে নগরীর হাটগুলোতে ক্রেতা সমাগম কম, কেনাবেচাও তেমন জমেনি। পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতাও তেমন নেই। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেয়াজুল হক জসিম বলেন, প্রতি বছর ৫-৭ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গতবছরের মতো এবারও করোনা সংক্রমণের কারণে অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়নি। কারণ কোরবানিদাতার সংখ্যা এবার তেমন বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা যাচ্ছে বিধায় বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়নি। কোরবানির পশুর হাটে দেখা যায়, পশুর হাটে একজন ক্রেতার সাথে ২ জনের বেশি না যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ১০-১৫ জনের গ্রুপ করে বাজারে ঘুরতে আসছেন অনেকে। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে নেই মাস্ক, শরীরের সঙ্গে শরীর লাগিয়ে হাটের ভিতর চলাচল করছে। শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষনীয়। নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। সব মিলিয়ে সংক্রমণ এড়াতে যেসব বিধির কথা বলা হয়েছে তার তিল পরিমাণও মানতে দেখা যাচ্ছে না পশুর হাটে। নগরের সর্ববৃহৎ কোরবানির পশুর হাট সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট, এক কিলোমিটার গরুর বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। শুধু হাটের সামনে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যানার-পোস্টার দেখে গেছে। বাজারের ভেতরে এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিভিন্ন পরামর্শ। যদিও এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই হাটে আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। হাটে প্রবেশের পথ ও বের হওয়ার পথ ভিন্ন থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। ক্রেতা-বিক্রেতার বেশির ভাগই মাস্ক রয়েছে পকেটে বা থুতনিতে। আবার অনেকের মাস্কই ছিলো না। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাগরিকা গরু বাজার বিক্রেতা সমিতির সভাপতি হাজী মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শতভাগ চেষ্টা করছি সকলে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাটে আসেন এবং ক্রয়-বিক্রয় করেন। মাইকিং করে করেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হচ্ছে। এখন কেউ যদি না মানে তাহলে আমরা কি করতে পারি!’ বিবিরহাট গরুর বাজারের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম জানান, হাটে স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার সাবান, পানির বেসিন সবকিছু আছে। আমাদের ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিদিন তিনবার করে পুরো বাজার স্প্রে করছে। স্বাস্থ্যবিধি ব্যাপারে আমরা কঠোর আছি। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ডা. মিনহাজুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট পরিচালনার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য দপ্তর। চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের হার এখন উর্ধমুখী নয়। এরমধ্যে কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়ানো হয়েছে। # ১৮.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #