চলমান সংবাদ

সম্পাদকীয়ঃ

-করোনা নিয়ন্ত্রণে জন প্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন ও বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহন জরুরী

উৎপল দত্ত, সম্পাদক progotirjatree.com

দেশে প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামাঞ্চলে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা, , রাজশাহী অঞ্চলে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকার ইতিমধ্যে সারা দেশে লকডাউন ঘোষনা করেছে । অন্যান্য বারের তুলনায়এবারের লকডাউনে কড়াকড়ি ও আরোপ কড়া হচ্ছে। এর জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছেন। নজরদাড়ির জন্য বিভিন্ন স্পটে তল্লাসি চৌকি বসানো হয়েছে যাতে মানুষ জরুরী কাজ ছাড়া রাস্তায় বের হতে না পারেন। লকডাউন ১৪ জুলাই শেষ হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে এর মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। এই ক্ষেত্রে আর একটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হচ্ছে সরকারকে তা হচ্ছে আগামী ২০ বা ২১ জুলাই চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল আজহা। মানুষ এই ধর্মীয় উৎসব পরিবার পরিজনের সাথে উদযাপনের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। এই সময়ে মানুষকে বিধি-নিষেধের বেড়াজালে কতটুকু আটকে রাখা যাবে তা চিন্তার বিষয়।

এইদিকে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৭৭,৫৬৮, মৃত্যু ১৫,৫৯৮ এবং সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৮৫০, ৫০২। কিন্তু পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা কমছে।

অন্যদিকে, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেন্টশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস পরস্থিতি লেভেল ৪ ( High)  ঘোষনা করা হয়েছে এবং ভ্রমণকারীদের সতর্কতার সাথে বাংলাদেশে ভ্রমণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যাকসিন না নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ না করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

দেশের কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে  কড়াকড়ির মাধ্যমে লকডাউন বজায় রাখতে পারলে, মানুষকে আর কিছুদিনের জন্য ঘরে আটকে রাখতে পারলে পরিস্থিতির সামাল দেয়া সম্ভব হতে পারে। তারা এই বিষয়ে চায়না মডেল এর কথা উল্লেখ করেন।

আবার বিশেষজ্ঞদের আর একটি দলের অভিমত বাংলাদেশে চায়না মডেল কার্যকর করা সম্ভব নয় । কেননা এই মডেল সফল করার জন্য যে ধরেণের রাজনৈতিক কাঠামো দরকার তা বাংলাদেশে নাই। চায়নাতে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ক্রিয়াশীল এবং দলের কাঠামো কঠিন শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ । এই অবস্থায় বাংলাদেশ ভারতের কেরালা মডেল অনুসরণ করতে পারে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ করে দেশের অর্থনীতি যাতে সচল থাকে, মানুষের জীবিকা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং করোনা পরিস্থিতি ও নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় এমন একটা নীতি গ্রহণ করে চলেছেন।  তবে এই নীতি বাস্তবায়নে সরকার নির্ভর করছেন আমলাতন্ত্রের উপর। জনপ্রতিনিধিদের করোনা নিয়ন্ত্রণে কোন ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এইক্ষত্রে উল্লেখ না করলেই নয়, জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা ছাড়া যে নীতিই গ্রহণ করা হোক না কেন তা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন, কেননা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে শহরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংসদ সদস্যদের সাথে মানুষের সম্পর্ক ও যোগাযোগ ।

জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে একটি মডেল তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে এবং এটি বহুল প্রশংসিত। এই কারনে অনেক দেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের কারিগরী সহায়তা গ্রহণ করছে। করোনাকেও একটি দীর্ঘ প্রলম্বিত দুর্যোগ হিসাবে গন্য করে একে নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশি মডেল এর কথা ভাবতে হবে। এর জন্য সামাজিক সংগঠন, বেসরকারী সংস্থা ও স্থানীয় সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কেননা স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে  তাদের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরী।

আমরা আশাকরছি সরকার বিষয়টি দ্রুত অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবেন।