চলমান সংবাদ

অনুমোদনহীন পোড়া মোবিল রিফাইনিংয়ের কারখানা লোকালয়ে

-অপরিশোধিত বর্জ্য নিঃসরণে ঘটছে পরিবেশ দূষণ

যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছরিতে লোকালয়ে পুরোনো জাহাজের পোড়া মোবিল রিফাইনিংয়ের কারখানা গড়ে তুলেছে লুব স্টার  লুব্রিকেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটি লোকালয়ে অপরিশোধিত বর্জ্য নিঃসরণ করে এলাকার পরিবেশ দূষণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশপাশের কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন আশপাশের বাসিন্দারা। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার লালবেগ এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়ে চারদিকে টিনের উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা কারখানাটিতে নেই কোন সাইনবোর্ড। বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই ভেতরে কি চলছে। অনেক চেষ্টার পরও মেলেনি ভেতরে ঢোকার অনুমতি। কারখানাটি থেকে ক্যামিকেলের তীব্র গন্ধযুক্ত বর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে পাশের একটি ফসলি জমিতে। বৃষ্টির পানিতে বিষাক্ত বর্জ্য আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে দূষিত করছে পরিবেশ। সেলিম নামের এলাকার এক যুবক জানান, সীতাকুন্ডের উপকূলে ভাঙার জন্য আনা স্ক্র্যাপ জাহাজগুলো থেকে পোড়া মোবিল কম দামে কিনে নিয়ে সেগুলোকে নানারকম রাসায়নিক দিয়ে রিফাইন করে লুবস্টার লুব্রিকেন্ট নামে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয় কারখানাটি থেকে। কারখানার পাশেই একটি ঘরে বসবাস করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী অভিযোগ করেন, কারখানাটি থেকে নিঃসৃত বর্জ্যরে গন্ধে এলাকায় বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বর্জ্যরে তীব্র দুর্গন্ধে শিশু ও বয়স্করা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারখানা মালিক জামাল উদ্দিনকে বারবার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। কারখানার আশপাশের মানুষ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছে। কারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্য সরাসরি কৃষি জমিতে পড়ছে। ফসলী জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে কারখানাটির মালিক এলাকায় বিত্তশালী ও প্রভাবশালী হওয়ায় নানা জায়গায় অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি বলে জানান সালাউদ্দিন নামে এক যুবক। তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে বছরের বছর চলছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কারখানাটি। বিএসটিআই’র সিএম শাখার সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, লুব্রিকেন্ট এক ধরনের ইঞ্জিন অয়েল। আর এটি প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণে লাগে বিএসটিআই এর অনুমোদন। লুবস্টার নামক কোন লুব্রিকেন্ট ব্র্যান্ডের অনুমোদন বিএসটিআই দেয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন এই কর্মকর্তা। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামে জেলার উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্র ব্যাতিত কোন লুব্রিকেন্ট কারখানা পরিচালনার সুযোগ নেই। লুবস্টার নামক কারখানাটির কোন অনুমোদন না থাকলে এবং পরিবেশ দূষণের কোন প্রমান যদি ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়, তাহলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা পর্যালোচনা করে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার ইন্সক্টের নূর হোসেন বলেন, লুব স্টার লুব্রিকেন্ট নামে কোন প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ব্যতিরেকে এই ধরনের কারখানা পরিচালনা করা হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে কারখানার মালিক জামাল উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। এই কারখানার অনুমোদন আছে বলে দাবি করা হলেও জামাল উদ্দিন অনুমোদনের কোন কপি দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমার সব অনুমোদন আছে। কিন্তু দেখাবো না। আপনি কী করতে পারেন করেন .. …।’

# ০৯.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #