শিল্প সাহিত্য

হাসি

-কাওসার পারভীন

নিজেকে বোকা মনে হলো শামার। ওর মতো করে কেউ হাসছে না এখানে!  সেমিনারের চা-বিরতির সময় প্রায় শেষ।  টেবিলের চারপাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো ওরা। প্রফেসরের উচ্ছল প্রাণখোলা আলাপে অনেকে স্মিত হাসছেন।  শামার নিজের হাসি নিজের কানে প্রায় অট্টহাসির মতো শোনালো। বিব্রত হয় ও।  কি গভীর আকুলতা জমাট হয়ে আছে। নিজেকে বুঝতে চেষ্টা করে শামা, ‘এমন কাঙ্গাল হলাম কবে’!

স্বপ্ন দেখার, পরিকল্পনা করার চেষ্টা করে বার বার হেরেছে, তবুও যে কোন উপায়ে শীর্ষে যাবার চেষ্টা করেনি শামা। বোকা হতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।  কেবলই মনে হয় বিবর্ণ ঝরা পাতায় ছেয়ে আছে পথ।   ও মানে, হেরে যাওয়া মানুষকে নিয়ে উৎসব হয় না, অবহেলার দৃষ্টি সইতে হয় তাদের।  ওড়ার শক্তি সঞ্চয় করতে চেষ্টা করে চলেছে শামা – ভেঙ্গে যেতে যেতেই মানুষকে স্বপ্নের কাছে পৌঁছুতে হয়। তবে সবাই অসামান্য বীর হয়ে জন্ম নেয় না। কারো কারো স্বপ্ন-ডানা ভয়ের তুষারে ভারী হয়ে একটা সময় ওড়ার শক্তি হারায়।

শামার গবেষণায় নিবিষ্ট থাকা সময়টা বেশ দীর্ঘ ছিলো। নিবিড় হয়ে সময় দিয়েছে কাজে, পরের সময়টার জন্য ভাবার অবকাশ হয়নি। ব্যস্ততার গতি ধীরে ধীরে পাল্টায় জীবনে। তখন অবসরে গল্পের জন্য, একটু হাসির জন্য অথবা অসুস্থতায় মাথায় হাতটুকু রাখার জন্য পাশে কেউ না-থাকলে বিষন্ন হয় মানুষ। স্বল্পভাষী শামার নিজের বিবেচনায় ঘর বাঁধার সঠিক সময়টা পেরিয়ে গেছে, এ নিয়ে পরিবার বা বন্ধুদের সব রকমের পরামর্শ ও নিশ্চল স্থিরতায় এড়িয়ে গেছে সবসময়।

ওর হাসিটুকু দেখার জন্য যে মানুষটি ব্যাকুল থাকতো, কতবার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো! সুতীক্ষ্ণ দায়িত্ববোধ থেকে ব্যক্তিগত জীবনকে কাজের ওপরে প্রাধান্য দেয়নি শামা। চলার পথে সব ছন্দ মেলানো হয়নি।  ব্যস্ততা কিছুটা কমেছে ধীরে ধীরে।  মানুষ বা সময় অনাদিকাল তো অপেক্ষায় থাকে না, শামা তেমনটা আশাও করেনি।

চেনা কন্ঠস্বর, পরিচিত অভিব্যক্তি হঠাৎ আন্দোলিত করলো শামাকে। নিজেকে বুঝি আড়াল  করতে ভুলে গেল ক্ষণিকের জন্য!   একটা মূহুর্ত কাল পেরিয়ে কোথায় উড়িয়ে নিলো ওকে।

যে যার চেনা জীবন প্রবাহে ফিরে যাবে মাত্র কয়েক ঘন্টা পর তপ্ত মধ্যাহ্নে একঝলক মৃদু হাওয়ার মতো মিলিয়ে যাবে সময়টা ।  নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই এমন কাকতালীয়ভাবে আবার কখনও দেখা হবার – হলেও বা কি !