চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে একযোগে বদলি করা হয়েছে ১৫৬ জন চিকিৎসককে

বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রধান সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে একযোগে বদলি করা হয়েছে ১৫৬ জন চিকিৎসককে। যাদের বেশিরভাগই নিজ নিজে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসক। এই গণবদলিকে স্বাস্থ্য বিভাগের আমলাদের খেয়ালখুশি হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এমন গণবদলি চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এতে বিপুলসংখ্যক রোগী ছাড়াও প্রতিদিন আসা আরও বিপুল রোগী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বদলিকৃত বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসকদের বিভিন্ন হাসপাতালের করোনা ইউনিট ছাড়াও জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। শুধুমাত্র চমেক হাসপাতালেই এই মুহূর্তে বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে দুই হাজারেরও বেশি রোগী- যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া গণবদলির আদেশটিতে অনেকগুলো অস্বাভাবিক বিষয় রয়েছে। আদেশে সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে এই গণবদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। অথচ বদলি করা হয়েছে- মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক, প্যাথলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট, নিউরোসার্জন, জেনারেল সার্জন, দন্তরোগ, চক্ষুরোগ, নাক-কান ও গলা রোগ, শিশুরোগ ইত্যাদি সব বিশেষজ্ঞদের। তাদের প্রায় সকলেই স্ব- স্ব বিভাগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ। প্রশ্ন উঠেছে, কোভিড চিকিৎসা দিতে উপজেলা বা সদর হাসপাতালে এসব বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-চিকিৎসকের ভূমিকা কী? চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, চমেক হাসপতালের যেসব চিকিৎসককে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কোভিড ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসকের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আছেন। এতে চমেক হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সারাদেশেই চিকিৎসকদের বদলি করা হয়েছে। সে হিসেবে চট্টগ্রামেও হয়েছে। তবে আমাদের এখনও রিপ্লেসমেন্ট দেওয়া হয়নি। বদলির বিষয়ে আমি সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে কোভিড ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী আছেন। এতগুলো ডাক্তারকে একযোগে বদলি করা যে হলো, এতে এতগুলো নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা কে দেবে? চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে ডাক্তার নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসা ব্যাহত হবে। তাছাড়া সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলমান লকডাউনের মধ্যে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়াও কঠিন হবে। গণবদলির এই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ডা. মিনহাজ বলেন, ‘এ গণবদলির কারণে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটে পড়ে যাবে, এ বিভাগগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে তা পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিতে পারে। এমন গণবদলিতে সমস্যার সমাধান তো হবেই না, সংকটই বাড়তে পারে শুধু।’ চমেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক বদলির আদেশে চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকট তৈরি হবে বলে শংকা প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। হটকারী এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহবান জানিয়ে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, কোন রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া এই জরুরি অবস্থায় হঠাৎ এই বদলি করোনা আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীদের মাঝে জরুরি সেবা প্রদানে সংকট তৈরি করবে। জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতে বিঢম্বনার শিকার হবেন রোগীরা। এছাড়া লকডাউনের এই সময়ে বদলিকৃত চিকিৎসকদের বদলিকৃত স্থানে স্থানান্তর ও যোগদান স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কঠিন হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘এটা একটি অপরিকল্পিত বদলি। স্বাচিপ, বিএমএ সবার সাথে পরামর্শ না করে মন্ত্রনালয় নিজেদের ইচ্ছামত মত হুটহাট বদলি করে দিল। এতে করে পুরো স্বাস্থ্য সেবার উপর প্রভাব পড়বে। কোভিড ছাড়াও অন্য রোগীদেরও চিকিৎসা দিতে হয় ডাক্তারদের। চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সহকারী অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, ‘আমি নিউরোসার্জারির ডাক্তার। মস্তিষ্কের অপারেশন, জটিল ক্রিয়াকলাপের চিকিৎসার সাথে যুক্ত। করোনা একটি বিশেষায়িত রোগ। আমাকে দিয়ে আসলে করোনার কী বিশেষ চিকিৎসা মিলবে, আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, কিছু বিবেচনা না করেই গণহারে এ বদলি করা হয়েছে। নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে সপ্তাহে তিনদিন জটিল অপারেশন থাকে। প্রতিদিন থাকে নতুন রোগী ভর্তি হয়। চমেক হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে কর্মরত ডা. শাহানাকে বদলি করা হয়েছে ফেনীর দাগনভুঁইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনি বলেন, এমনিতেই গাইনী ওয়ার্ডে অনেক আগে থেকে চিকিৎসক সংকট। নির্ধারিত সিটের বিপরীতে প্রায় ৩ গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল বর্তমানে ডাক্তারের সংখ্যা তুলনামূলক পর্যাপ্ত থাকলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) থেকে সেখানে বদলি করা হয়েছে ৬০ জন ডাক্তারকে। অন্যদিকে চমেক হাসপাতাল থেকে ফেনীর দাগনভুঁইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জনকে, ফেনী জেলা হাসপাতালে ২৪ জনকে, ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আটজনকে, খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে ১৮ জনকে, ফৌজদারহাটের ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস-বিআইটিআইডি হাসপাতালে ১৬ জনকে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে ৩০ জন ডাক্তারকে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে, ‘কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করার কথা বলা হয়েছে। বুধবারের মধ্যে বদলি হওয়া চিকিৎসকদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে পপ্রাপনে বলা হয়েছে, সেখানে তারা কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন। # ০৬.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #