চলমান সংবাদ

শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ফাইল ছবি)

লর্ড লিটনের মতে, এটা ছিল ‘স্প্লেনডিড ইম্পিরিয়াল কমপেনসেশন।’ ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ আদেশ কার্যকর করা হয়। কিন্তু ১৯১১ সালে প্রচণ্ড গণআন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বঙ্গভঙ্গ রদ করা  হয়। এর দশ বছর পরে ১৯২১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে পিছিয়ে পড়া পূর্ববংগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ববাংলার মানুষের  দীর্ঘদিনের দাবী এই অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হোক। নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায়  ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি দেবার আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে রূপ নেয়।  ১৯২১ সালের ১ জুলাই ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্ক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে এ আইনের বাস্তবায়ন করা হয়। শুরুতে এই ৮৪৭ জনের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ছিলেন মাত্র একজন।

ঢাকার রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির উপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের পরিত্যক্ত ভবনাদি এবং ঢাকা কলেজের ভবনসমূহের সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়নরত ছাত্ররাই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পূর্ব বাঙলা, পূর্ব পাকিস্তান ও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুথান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ এদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

২০১৮-২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ৪৬১৫০ জন শিক্ষার্থীর এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে  ১৯৯২ জন শিক্ষক ও ৪৪১৭ জন প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ  নানা দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১২টি ইনস্টিটিউট, ৫৬টি গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র, ২০টি আবাসিক হল ও ৩টি ছাত্রাবাস,এবং ৭টি স্নাতক পর্যায়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজসহ মোট ১০৫টি অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন- জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, প্রবাসী সরকারের অস্হায়ী রাস্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, নোবেল বিজয়ী ড: মুহম্মদ ইউনুস, শক্তিমান কবি ও সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু, ঔপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহীদ জননী জাহনারা ইমাম, কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ সহ এদেশের অসংখ্য কৃতি সন্তানেরা।

আর প্রথিতযশা শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিদ সত্যেন বসু, নোবেল কমিটির সদস্য পদার্থবিজ্ঞানী গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা, শহীদ অধ্যাপক ড. জোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, শহীদ অধ্যাপক ড: মুনীর চৌধুরী, শহীদ অধ্যাপক ড: গোবিন্দ চন্দ্র দেব,  ড: মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড: আনিসুজ্জামান, ড: হুমায়ুন আজাদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড: অজয় রায়, ড: রেহমান সোবহান সহ আরো অনেকে।

# ১ জুলাই ২০২১, প্রগতির যাত্রী ডেস্ক #