চলমান সংবাদ

আজ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ৮৬তম জন্মদিন

“ আমাদের রাষ্ট্র জনগণের স্বার্থ দেখে না, স্বার্থ দেখে কতিপয়ের। এ রাষ্ট্র জনমতের তোয়াক্কা করে না। আর সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মানে যে উন্নতি ঘটছে না সেটা বাস্তবিক সত্য। পরিমাণ যেভাবে বেড়েছে, গুণ সেভাবে বাড়েনি। অল্পকিছু শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে যারা ভালো মানের। আগের তুলনাতেও উচ্চ মানের। কিন্তু, গড়পড়তা শিক্ষার্থীর জ্ঞান বাড়ছে না। তারা খবর রাখে। কিন্তু, খবর তো জ্ঞান নয়, খবর তখনই জ্ঞান হয় যখন সে সুগঠিত হয়, প্রাণবন্ত থাকে এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়, সেই সঙ্গে প্রযুক্তও হয়।” ডেইলি স্টার পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলছিলেন এদেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাকস্বাধীনতা, মানবিক অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ক আন্দোলনেরও তিনি পুরোধা। এসবের পাশাপাশি তিনি লেখক হিসেবেও সুপরিচিত। আজ তার জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরেই কখনো লিখে, কখনো সম্পাদনা করে ও বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বদলানোর লক্ষে মানুষের সামাজিক মুক্তির চিন্তায় প্রশ্ন ও চিন্তাকে এগিয়ে নেয়ার কাজ করে গেছেন। দীর্ঘকাল তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর লিখনীতে সমৃদ্ধ করেছেন স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যকে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সত্তর দশকের মাঝামাঝি সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ‘উপর কাঠামোর ভেতরই’ নামে সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিয়ে নিয়মিত কলাম লিখতেন। তিনি আরেকটি কলাম লিখতেন ‘গাছপাথর’ নামে দৈনিক সংবাদে। বাংলা-ইংরেজি মিলে শতাধিক বই লিখেছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি গল্প-উপন্যাসও লিখেছেন। তবে প্রধানত গবেষণামূলক কাজের প্রতি তার আগ্রহ বেশি।আজীবন বামপ্ন্হার প্রতি আস্হাশীল বিশ্ববিদ্যালয়ের অসম্ভব জনপ্রিয় এই শিক্ষক তাঁর কর্মতৎপরতার মাধ্যমে পুঁজিবাদী সমাজের অমানবিক, নিষ্ঠুর, বৈষম্যমূলক, সহিংস চরিত্রগুলোর মুখোশ উন্মোচিত করে মানুষের মুক্তির পথ অনুসন্ধান করেছেন। সমাজে পরিবর্তন আনতে মানুষের রুচিতে, মানুষের চেতনায়, মানুষের অনুভবে প্রভাব বিস্তারের কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, “রুচিই তো ধারন করবে মানুষের চেতনাকে, মানুষের বিচক্ষণতা এবং মানুষের বিচার ক্ষমতাকে। এইটা তৈরী করা তো জরুরী।” উনার উল্লেখযোগ্য গ্রন্হগুলো হচ্ছে অন্বেষা, দ্বিতীয় ভুবন, উপরকাঠামোর ভেতরই, বেকনের মৌমাছিরা, হোমারের ওডেসি(অনুবাদ), জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি, পুঁজিবাদের দুঃশাসন ইত্যাদি। শিক্ষায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক ভূষিত হন। এছাড়াও ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে লেখক সংঘ পুরস্কার সহ বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন তিনি। শুভ জন্মদিন এদেশের গণমানুষের বুদ্ধিজীবি ও মানবিক চিন্তার বাতিঘর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। — প্রগতির যাত্রী ডেস্ক