চলমান সংবাদ

সুস্বাদু আমের নতুন ঠিকানা খাগড়াছড়ি!!

-প্রিয়দর্শী চাকমা

এক সময় সারা দেশের মানুষের ধারণা ছিল রাজশাহীতেই কেবল আমের ফলন ভালো হয়। মনে করা হতো রাজশাহীর আমই কেবল সুস্বাধু। কিন্তু মানুষের দীর্ঘ দিনের সে ধারনা খাগড়াছড়ির আম চাষীরা ভুল প্রমাণ করেছে । উল্লেখ্য, পাহাড়ের মাটি কিছুটা অম্লীয় হওয়ায় এবং পাহাড়ের ঢালু অংশে চাষাবাদ করা হয় বিধায় এখানকার গাছগুলো সূর্যের আলো বেশি পায়। এখানে যে আম হয় তা আকারে বড় হয় আবার সুস্বাদু এবং মিষ্টতাও অনেক বেশি হয় বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। নতুন করে নজরে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে দামী আম “মিয়াজাকি” বা “রেড ম্যাঙ্গো” বা “এগ অব দ্য সান” বাংলাদেশে পরিচিত সূর্যডিম আম নামে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি এসব আম বিক্রি হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে। অনেকে এখন খাগড়াছড়িকে আমের রাজধানী হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। সরকারি কোনো উল্লেখযোগ্য সাহায্য-সহযোহগিতা ছাড়াই নিজেদের কঠোর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় পাহাড়ের অনাবাদি টিলায় উন্নত জাতের আম চাষে অত্র অঞ্চলের মানুষেরা ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। বর্তমান মৌসুমে বাগান থেকে ১৫ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন আসাদ গাজী নামের স্থানীয় একজন সফল আম চাষী। রামগড় উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে হাফছড়ি ইউনিয়নের বড়পিলাক এলাকায় ১৫ একর টিলাভূমিতে তিনি আম বাগান গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় আড়াই হাজার আমগাছ আছে। খাগড়াছড়ি গাছবান এলাকায় আম চাষী প্রকান্তি চাকমার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ২০১২ সাল হতে আম বাগান করছেন। বর্তমানে তার বাগানের পরিমান ৫ একর এবং এবছর তিনি ১৭ টন আমের ফলন আশা করছেন। দীঘিনালার তুতুল চাকমার  আম বাগানের চিত্র দেখে খুশীতে মন ভরে যায়। তার বাগানে প্রায় দেশী-বিদেশী ৫০ জাতের আম গাছ রয়েছে। নয় মাইল, দীঘিনালার চাষী সুগতদর্শী চাকমাও  একজন সফল আম চাষী। তিনিও এবছর আমের বাম্পার ফলন  ফলিয়েছেন যা দেখে তিনি নিজেও ভীষণ খুশী।

দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, পানিছড়ি, খাগড়াছড়ি সদরসহ সর্বত্র আম চাষাবাদ হচ্ছে। পুরো খাগড়াছড়ি আমে সয়লাব। আম চাষীদের ঘরে ঘরে খুশীর বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তারা  আর্থিকভাবেও প্রচুর লাভবান হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে আম চাষের ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তারা এখন জুম চাষের উপর নির্ভরশীল না হয়ে ফলজ বাগানের দিকে নজর দিচ্ছে।। বর্তমানে খাগড়াছড়িতে আম্রপালি, লেংড়া, বারি-৮, বারি-৪, রুপালি, মল্লিকা এবং সুর্যডিম চাষাবাদ হচ্ছে।। আম ছাড়াও খাগড়াছড়িতে ড্রাগন ফল, উন্নতমানের পেপে (রেড লিডি), পেয়ারা, আপেল কুল, বল সুন্দরী চাষ করছে স্থানীয় অধিবাসীরা। ১৯৯৮ সাল থেকে এখানে মূলত আম চাষ শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। প্রতি বছর মোট প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন আম ফলন হয়, যার আর্থিক মুল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ব্যাঙ্ক ঋন, উন্নতমানের চারা ও কীট নাশক সরবরাহ, , কারিগরি প্রশিক্ষণ, আম গাছ পরিচর্যার বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে আম চাষে আরো সফলতা আসবে বলে স্থানীয় আম চাষীদের অভিমত। স্থানীয় বাজারে আম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি সরঞ্জামের পরিমান খুবই অপ্রতুল। এই ব্যাপারেও সরকারীভাবে নজর দেয়া উচিৎ বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা।