চলমান সংবাদ

বজ্রপাতে জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু

-মৃত্যুর কারন নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সন্দেহ

ছবিতে দুই কন্যা সন্তান সহ নিহত শ্রমিক আব্দুল জলিলের স্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে

গতকাল  ৬ জুন ২০২১ রবিবার বিকাল ৪টায় সিতাকুন্ড উপজেলার বার আউলিয়ায় অবস্থিত প্রিমিয়াম ট্রেড কর্পোরেশন  নামক একটি শিপ ইয়ার্ডে এ কর্মরত অবস্থায় মোঃ জলিল নামে একজন শ্রমিক আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। হতভাগ্য নিহত শ্রমিকের বয়স আনুমানিক ৩০ বৎসর। তার স্ত্রী এবং দুইজন কন্যা সন্তান রয়েছে।

ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ বজ্রপাতে শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। তবে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মৃত্যুর কারন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, এতদিন কোন শ্রমিক মারা গেলে হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে বলে মালিক পক্ষ থেকে প্রচার করা হতো। এখন শ্রমিকদের মৃত্যুর জন্য নতুন কারন বজ্রপাত যুক্ত করে মালিক পক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর নতুন কোন কৌশল নিয়েছেন। তারা বলেন, প্রচন্ড বৃষ্টিপাত এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শ্রমিকদেরকে জাহাজ ভাঙ্গার কাজে নিয়োজিত রেখে মালিক পক্ষ চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই শ্রমিক মৃত্যুর দায় অবশ্যই মালিক পক্ষকে নিতে হবে।

জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত এবং যুগ্ম আহ্বায়কদ্বয় যথাক্রমে  মু. শফর আলী, এ এম নাজিম উদ্দিন এক যুক্ত বিবৃতির মাধ্যমে গতকাল জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক মোঃ জলিলের মৃত্যুর জন্য তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন ।

নেতৃবৃন্দ বলেন বিগত ২০২০ সালে ১০ জন শ্রমিক মৃত্যুবরন করেছেন এবং ৩০ জনের বেশী শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। ২০২১ সালে গতকাল নিহত মোঃ জলিল সহ মোট  ৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুর সংবাদ প্রমাণ করে যে, বারবার দাবী জানানো সত্বেও জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিকেরা চরম অনিরাপদ কর্ম পরিবেশে কাজ করছে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতি বছর জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প খাতে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর শ্রমিক আহত ও নিহত হচ্ছে অথচ সরকার, প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং মালিক পক্ষ জাহাজভাঙ্গা শিল্প খাতে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেনা-যা শ্রমিকদের জীবনের প্রতি চরম অবহেলা এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তারা  জাহাজভাঙ্গা শিল্প খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনমান রক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকার ও মালিক পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

শ্রমিক নেতৃবৃন্দ নিহত শ্রমিককে “লস অফ ইয়ার আর্নিংস, সাফারিংস এন্ড পেইন” এর ভিত্তিতে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন এবং শ্রম আইনের ৯৯ ধারা এবং জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরন আইন ২০১৮ এর ২০ ধারা অনুযায়ী গ্রুপ ইন্সুরেন্সের ২ লক্ষ প্রদানেরও দাবী জানান।

নেতৃবৃন্দ একইসাথে নিহতের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।