চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম বন্দরে সরিষা দানার ঘোষণায় পপি বীজ আমদানি

 নিজস্ব প্রতিবেদক : সরিষা বীজের ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা নিষিদ্ধ পপি বীজের একটি চালান আটক করেছে চট্টগ্রামের শুল্ক বিভাগ। মালয়েশিয়া থেকে দুটি কনটেইন্টারে আমদানি করা ৪২ মেট্রিক টন নিষিদ্ধ পপি বীজের এই চালান আটক করা হয়। গত সোমবার (৩১ মে) রাতে আফিমের কাঁচামালের এই বড় চালানটি চট্টগ্রাম শুল্ক বিভাগের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা জব্দ করে। সরিষা বীজ ঘোষণা দিয়ে আফিমের কাঁচামাল আনার সঙ্গে অর্থ পাচারের বিষয়টি জড়িত বলে সন্দেহ করছে সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, সরিষা বীজের ঘোষণা দিয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পুরান ঢাকার আজমিন ট্রেড সেন্টার মালয়েশিয়া থেকে ২ কনটেইনার পণ্য আমদানি করে। তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনাল এক লাখ ৪২ হাজার ৪৯৭ টাকা শুল্ক পরিশোধের পর পণ্যের চালান খালাসের কার্যক্রম শুরু করে। তবে তার আগেই খবর পেয়ে যায় কাস্টম হাউস। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানটির খালাস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরে সরেজমিন পরীক্ষায় দেখা যায় আমদানিকারকের ঘোষিত সরিষা বীজের স্থলে সরিষা বীজ মাত্র ১২ টন আর ৪২ টনই আমদানি নিষিদ্ধ পপি বীজ। পণ্যের নমুনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাসায়নিক ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষায় তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ৪২ টন পপি বীজের বিক্রয় মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা হলেও সরিষা বীজের মূল্য বাবদ এলসির মাধ্যমে ২২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। ফলে পণ্যের বাকি মূল্য অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে পরিশোধ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি ও বিদেশে অর্থপাচার কারা করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কাস্টম হাউস। এআইআর শাখার সহকারী কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, পপি বীজ দিয়ে নিষিদ্ধ মাদক আফিম তৈরি হয়। পপি বীজ আমদানি আমাদের দেশে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। মাদকের কাঁচামালের চালান দেশে আনার সঙ্গে সংঘবদ্ধ কোনো চক্র জড়িত বলে আমাদের ধারণা। পপি বীজের বাকি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে পরিশোধ করেছে বলে ধারণা আমাদের। তিনি বলেন, আজমিন ট্রেড সেন্টার নামে একটি কোম্পানি সরিষা বীজ ঘোষণা দিয়ে মালয়েশিয়া থেকে এসব বীজ আমদানি করেছে। সরিষা ও পপি বীজ দেখতে অনেকটা একইরকম। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কনটেইনারের সামনে সরিষা রেখে পেছনে পপি বীজ আমদানি করেছে। গত ২২ এপ্রিল কায়িক পরীক্ষায় আমরা পপি বীজের উপস্থিতি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই বীজের নমুনা চট্টগ্রামে কয়েকটি পরীক্ষাগারে এবং পরে ঢাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। সোমবার প্রতিবেদনে পেলে নিশ্চিত হওয়ার পর এসব জব্দ করা হয়। পপি বীজ আটকের এ ঘটনায় শুল্ক আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আসামি করে মামলার প্রস্তুতি চলছে। উল্লেখ্য, পপি গাছের তিনশ প্রজাতির মধ্যে ওপিয়াম পপির ফল থেকে যে নির্যাস পাওয়া যায়, তা দিয়ে তৈরি হয় আফিম। সেখান থেকে হেরোইন ও মরফিনের মত মাদকও তৈরি করা হয়। বীজ থেকেই চাষ করা যায় পপি। প্রতিবছরই দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আফিম ক্ষেত ধ্বংস করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার আফিম চাষ নিষিদ্ধ করে। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে নিষিদ্ধ তরল কোকেনের একটি চালান আটক হয়েছিল, যা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। # ০১.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #