বাঁশখালীতে আগুনে পুড়ে মারা গেছে ভাই-বোন সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় মা-বাবা
আগুনে পুড়ে দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় মো. ইদ্রীস। আহাজারি করতে করতে প্রলাপ বকছেন তিনি। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাঁশখালীর উপজেলার সরল ইউনিয়নের চাহারঘোনা ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আগুন লেগে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছে তার দুই সন্তান। ১৬ বছরের ছেলে সন্তান মিনহাজ উদ্দিন ও ৩ বছরের মেয়ে রুহী আক্তারকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা রুবি আক্তার। শোকে স্তব্ধ তিনি। স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের ওমান থেকে চার দিন আগে দেশে ফেরেন মো. ইদ্রীস। ওমান থাকা অবস্থায়ই বাঁশখালীর বাড়িতে নতুন পাকা ঘর তৈরির কাজ শুরু করিয়েছিলেন তিনি। সে কাজ প্রায় শেষ। পুরানো ঘরের সঙ্গেই লাগোয়া নতুন সেই ঘর। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি, তার স্ত্রী রুবি আক্তার ও তাদের বড় ছেলে হেফাজুল ইসলাম নতুন ঘরে বসে কথা বলছিলেন। পুরানো ঘরে ঘুমিয়ে ছিল তাদের ছোট দুই সন্তান মিনহাজ উদ্দিন ও রুহী আক্তার। হঠাৎ বাইরে আগুন জ্বলতে দেখে বের হয়ে দেখেন, পুরোনো ঘরটি পুড়ছে। ওই ঘরটিতে তারা ঘুমিয়ে থাকায় দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে পরিবারের অন্যরা পাশের ঘরে যান। পরে পুড়ে যাওয়া ঘরের ভেতর দরজার কাছে পাওয়া যায় মিনহাজ ও রুহীর মরদেহ। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত শিশুর বাবা ইদ্রীস বলেন, ‘আমরা নতুন ঘরে কথা বলছিলাম। বাইরে চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখি পুরোনো ঘর জ্বলছে। ভেতরে যে আমার ছেলেমেয়ে রয়ে গেছে শুরুতে বুঝতে পারিনি। যখন বুঝতে পেরেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার পাসপোর্টসহ সব ডক্যুমেন্টস ঘরের ভেতরেই ছিল। সব পুড়ে গেছে। সব পুড়ে গেলেও আমার ছেলেমেয়ে বেঁচে থাকলে আমার দুঃখ লাগত না, কিন্তু তারাও নাই। আমি কীভাবে বাঁচব?’ বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইদ্রিসের কাঁচা বসতঘরে আগুন লাগে। আগুন পার্শ্ববর্তী ঘরেও ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে আসে। তবে ততক্ষণে স্থানীয়রা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ইদ্রিসের ঘরে তল্লাশি করে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করে উপস্থিত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ভাত খেয়ে ভাই-বোন ঘুমাচ্ছিল। আগুন লাগার পর পরিবারের অন্য সদস্যরা বাইরে ছিল। আগুনে পুড়ে তাদের করুণ মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার নুরুল বশর জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই বসতঘরে ভেতরে থাকা ঘুমন্ত দুই শিশু জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যায়। যে বাড়িতে আগুন লেগেছে, সেখানে আরও কয়েকটি ঘর আছে। তবে সেগুলো পাকা ঘর হওয়ায় তেমন ক্ষতি হয়নি। যে ঘরটি পুড়েছে, সেটি ছিল টিনের। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত ছাড়া নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ এরআগে ২০২১ সালের ২৩ মে উপজেলার পূর্ব পুঁইছড়ি এলাকায় বসত ঘরে লাগা আগুনে পুড়ে সাইমা নামে সাত বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।
# ০৮.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #