un

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা, বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনার ঝড়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের গোপন পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে একযোগে বিমান হামলার নির্দেশ দিয়ে বিশ্বজুড়ে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছেন। দূরপাল্লার স্টিলথ বোমারু বিমানে চালানো এই হামলায় ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস।

হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই অভিযানকে “অসাধারণ সামরিক সাফল্য” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও হুমকি দিয়ে জানান, “এখনো অনেক টার্গেট বাকি রয়েছে। শান্তি না এলে সেগুলোতেও আঘাত আসবে নিখুঁতভাবে, দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে একটি নাটকীয় মোড় আনবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যত রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণ করবে। তবে প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প কি নিজের রাজনৈতিক বক্তব্য ও অবস্থান থেকে সরে গেলেন?

এক দশক আগে ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক পরিচিতি গড়া ট্রাম্প এবার নিজেই মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে ফেললেন। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতেও বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর জ্যাক রিড বলেন, “ট্রাম্প এক বিশাল জুয়া খেলেছেন। এর ফল কী হবে, তা কেউ জানে না।” একইসঙ্গে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই হামলা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকেই ঠেলে দিতে পারে।

ইরানের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, সেখানে প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইরানের জনসংখ্যা ও আঞ্চলিক প্রভাব বিবেচনায় অনেকেই বলছেন, সংঘাত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অবহিত করেছিল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই হামলাকে “ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া” পদক্ষেপ বলে স্বাগত জানান। ট্রাম্পও জানান, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একটি দল।”

তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ডানপন্থী সমর্থকদের অনেকেই এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন না। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ আন্দোলনের প্রবক্তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। স্টিফেন ব্যানন ও চার্লি কার্ক সতর্ক করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্তে মার্কিন স্বার্থ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

কার্ক বলেন, “এটা কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে? আমরা জানি না। এখন কত মার্কিন নাগরিক বা সেনা পাল্টা হামলার শিকার হবেন?”

জনগণের মধ্যেও প্রশ্ন জেগেছে—“আমাদের নিজেদের সমস্যাগুলো না মিটিয়ে কেন অন্য দেশের জন্য এত কিছু?” যুবসমর্থকদের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে।

এত কিছুর পরও ট্রাম্প আত্মবিশ্বাসী। শান্তিচুক্তির জন্য ইরানকে চাপ দিতে এ হামলা অত্যাবশ্যক ছিল বলে মনে করেন তিনি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চাপ আদৌ ফলপ্রসূ হবে কিনা, নাকি যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে—তা নির্ভর করছে পরবর্তী কয়েক দিনের উত্তাপের ওপর।