বাংলাদেশের মানুষকে অপমান ও গণতন্ত্রে অনাস্থার ছায়া-ফজলুল কবির মিন্টু
সম্প্রতি চ্যথাম হাউসে একটি সাক্ষাৎকারে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে মন্তব্য করেছেন, তা শুধু হতাশাজনক নয়, বরং দেশের জনগণের প্রতি চরম অবমাননাকর বলেই বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের মানুষ টাকা খেয়ে ভোট দেয়।” এমন বক্তব্য নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় মর্যাদাকে আঘাত করেছে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে।
অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন, কথার মাঝখানে ভুলবশত এমন কথা বের হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ড. ইউনূস একজন চতুর ও অভিজ্ঞ মানুষ। তিনি জীবনে বহুবার আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং তিনি খুব ভালো করেই জানেন কোন প্রসঙ্গে কী বলা যায় আর কী বলা যায় না। বিশেষ করে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে ভুল করে কিছু বলা তাঁর পক্ষ থেকে প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয়।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে শুধু জনগণকে নয়, প্রকৃতপক্ষে তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং তার প্রতি আস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি কেবল মুখ ফসকে কথা বলেছেন, নাকি এর পেছনে কোনো সুপরিকল্পিত উদ্দেশ্য রয়েছে? আমাদের এখন খুব সতর্কভাবে খতিয়ে দেখা দরকার, নির্বাচন নিয়ে তাঁর কোনো সুক্ষ্ম কৌশল বা পরিকল্পনা রয়েছে কিনা।
উল্লেখযোগ্য যে, ড. ইউনূস শুরুতে বলেছিলেন, কম সংস্কার হলে ডিসেম্বর, আর বেশি সংস্কার হলে জুনে নির্বাচন হবে। পরে আবার বললেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। তার এই বারবার তারিখ পরিবর্তনের মধ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌশল রয়েছে কি না, সেটি প্রশ্নের উদ্রেক করে। কারণ, এপ্রিল মাস বাংলাদেশের আবহাওয়া, সামাজিক ও শিক্ষাব্যবস্থার দিক থেকে মোটেও নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়। ঠিক ওই সময়েই পবিত্র রমজান মাস শেষে ঈদুল ফিতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব এবং এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এমন একটি সময়ে নির্বাচন আয়োজন মানে সরাসরি জনগণের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা।
এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, “বাংলাদেশের মানুষ টাকা খেয়ে ভোট দেয়” বক্তব্য এবং নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা নিয়ে বর্তমান সরকারের দ্বিধান্বিত অবস্থান—দু’টি বিষয়ই একসূত্রে গাঁথা। এগুলোর পেছনে এমন এক কৌশল থাকতে পারে, যা গণতন্ত্রকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে।
এখন সময় এসেছে জনগণের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর, এবং নির্বাচন নিয়ে যেকোনো ধরনের অনৈতিক কৌশলের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার। দেশের জনগণকে হেয় করে কোনো কৌশল বাস্তবায়ন হতে দেয়া যাবে না।
(লেখকঃ সংগঠক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় কমিটি)