বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (২০৪) শত বর্ষী আরতেক

– বিজন সাহা

বছর দুয়েক আগে প্রগতির যাত্রীর এক পাঠক আমাকে আরতেক সম্পর্কে লিখতে বলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তখন লেখা হয়ে ওঠেনি। তবে এ বছর আরতেক তার শত বর্ষ পূর্তি উৎসব পালন করছে। তাই মনে হল এখনই লেখার সময়। বর্তমানের কথা বলতে পারব না, তবে সোভিয়েত আমলে আমার পরিচিত কয়েকজন খেলাঘরের পক্ষ থেকে আরতেক এসেছে। ওদের কথা মাথায় রেখেই আজকের লেখা।

আরতেক – ক্রিমিয়ার দক্ষিণ উপকূলে আন্তর্জাতিক শিশু ক্যাম্প যা সোভিয়েত আমলে ছিল দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত পাইওনিয়ার ক্যাম্প এবং পাওইনিয়ার অর্গানাইজেশনের ভিজিট কার্ড। এই ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৫ সালে রাশিয়ার রেড ক্রস সোসাইটির সভাপতি জিনভেই পেত্রভিচ সলোভিয়েভের উদ্যোগে। তখন এর নাম ছিল আরতেক ক্যাম্প কাম স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর প্রথম প্রধান ছিলেন ডাক্তার ফিওদর ফিওদরোভিচ শিশমারেভ। এখানে প্রথম শিশুরা আসে ১৯২৫ সালের ১৬ জুন। ধীরে ধীরে ছোট এক টেন্ট ক্যাম্প থেকে আরতেক বিশ্বের বৃহত্তম শিশু অবকাশ যাপন কেন্দ্রের একটিতে পরিণত হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে এখানে স্থপতি আনাতোলি পলিয়ানস্কির বৃহৎ আরতেক নামক প্রজেক্টের বাস্তবায়ন শুরু হয়।

 আরতেক নামক নদীর তীরে অবস্থিত বলে ক্যাম্পের নামকরণ করা হয় আরতেক। ক্রিমিয়ার অনেক ভৌগলিক নামের মতই আরতেক নাম তুর্ক অথবা গ্রীক শব্দের সাথে জড়িত। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও যৌক্তিক ভার্সন হল গ্রীক শব্দ আরকতস বা ভালুক, যেহেতু ক্যাম্পটি আইউ-দাগা বা ভালুক পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এছাড়াও গ্রীক শব্দ আরতিকিয়া (কোয়েল), আরতস (গম) এবং তুর্ক শব্দ আরতীক (বাইসন) থেকেও আরতেকের নামকরণ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তবে ক্যাম্পে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভার্সন হল কোয়েল। সেখানে বলা হয় আরতেক – কোয়েলের দ্বীপ।  উনবিংশ শতকে পোলিশ কবি গুস্তাভ অলিজার ক্রিমিয়ায় আসেন এবং স্থানীয় তাতারদের কাছ থেকে দুটি রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে আইউ-দাগ বা ভালুক পাহাড়ের পাদদেশে এক খণ্ড ভূমি কেনেন। সেখানে তিনি আঙ্গুর ও জলপাই গাছ লাগান। ধীরে ধীরে এর পরিসর বৃদ্ধি পায়। গুস্তাভ অলিজার কাউন্ট উপাধি পান। তার বাড়ি গোরনি বা পাহাড়ি নামক ক্যাম্পে সংরক্ষিত ছিল। উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে এখানে তাতিয়ানা পাতমকিনার এস্টেট অবস্থিত ছিল। জন্ম সূত্রে তিনি ছিলেন গলিৎসিন পরিবারের সাথে যুক্ত। ১৮৩৬ সালে রুশ কবি আলেক্সান্দর পুশকিন তাতিয়ানার ভাই, মিউজিশিয়ান ও অনুবাদক নিকোলাই গলিৎসিনের কাছে আরতেকে একটি চিঠি পাঠান।

শুরুতে আরতেক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত শিশুদের স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সালের ৫ নভেম্বর মস্কো পাইওনিয়ার অর্গানাইজেশনের এক অনুষ্ঠানে আরতেকে একটি পাইওনিয়ার ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করার কথা জানানো হয়। এই ক্যাম্প প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে রাশিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি, কমসোমল ও পাইওনিয়ার অর্গানাইজেশনের কেন্দ্রীয় কমিটি। ১৯২৫ সালের ১৬ জুন চারটি মাত্র ক্যানভাসের তাঁবু নিয়ে ক্যাম্পের উদ্বোধন করা হয়। সে বছর ১৬ জুলাই মস্কো, ইভানো-ভজনেসেনস্ক ও ক্রিমিয়া থেকে ৮০ জন শিশুর প্রথম দল এখানে আসে। ১৯২৬ সালে সেরগেই মারগো ক্যাম্পের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। সেই বছর প্রথম জার্মানি থেকে একদল শিশু আরতেকে আসে, এটাই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক দল। প্রথম দিকে আরতেকের শিশুরা ক্যানভাসের তাঁবুতে বাস করত। তবে বছর দুয়েক পরে কৃষ্ণ সাগরের তীরে হালকা প্লাইউডের ঘর তৈরি করা হয়। ১৯৩০ এর দশকে সেখানে শীত কালে বাসযোগ্য বাড়ি তৈরি করা হলে আরতেক বার মাস কাজ করতে শুরু করে। ১৯৩৭ সালে আরতেক গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত স্পেনের শিশুদের গ্রহণ করে। ১৯২৫ থেকে ১৯৪১ সালে পর্যন্ত আরতেকে ৩৫ হাজার শিশু বিশ্রাম গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আরতেক মস্কো হয়ে স্তালিনগ্রাদ (পরবর্তীতে ভোলগাগ্রাদ) ও পরে সেরেব্রিয়ান্নিয়ে প্রুদি (সিলভার পুকুর) স্থানান্তরিত হয়। স্তালিনগ্রাদ জার্মান বাহিনীর আক্রমণের শিকার হলে ক্যাম্প আরতেক আলতাই পাহাড়ের পাদদেশে বেলোকুরিখা নামক জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়। যুদ্ধের শুরুতে আরতেকে সাইবেরিয়ার শিশুরা অবসরে ছিল। ক্রিমিয়া শত্রু মুক্ত হবার পর ১৯৪৪ সালের এপ্রিল মাসে  আরতেকের পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যুদ্ধও পরবর্তী প্রথম দল আসে আগস্ট মাসে। বছর খানেকের মধ্যে আরতেকের সীমানা বাড়িয়ে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। ১৯৪৫ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারি আরতেকের শিশুরা ইয়াল্টা কনফারেন্সের অংশগ্রহণকারীদের অভ্যর্থনা জানায়। ১৯৪৭ সালে আরতেকে ৪ হাজার শিশুর মধ্যে মাত্র ৫০ জন ছিল পোল্যান্ড ও চেকোস্লোভাকিয়া থেকে আসা বিদেশী। ১৯৫৮ সালে আরতেক কমসোমলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৬০ এর দশকে আরতেক পুনর্নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের মধ্যে সেখানে ১৫০ বিল্ডিং, তিনটি মেডিক্যাল সেন্টার, স্কুল, সিনেমা স্টুডিও আরতেক ফিল্ম, তিনটি সুইমিং পুল, সাত হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম ও অনেক শিশুদের খেলাধুলা করার কেন্দ্র তৈরি করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য পাইওনিয়ার ক্যাম্প ছিল গ্রীষ্মকালীন। কিন্তু আরতেক সারা বছর কাজ করায় সেখানে ছিল পরিপূর্ণ স্কুলিং ব্যবস্থা, যেখানে আরতেকের শিশুরা পড়াশুনা চালিয়ে যেত। প্রথম দিকে আরতেকের নামকরণ করা হয়েছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সলোভিয়েভের নামানুসারে। ১৯৪০ সালে সুপ্রিম সোভিয়েত আরতেকের নামকরণ করে সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আরতেকের কিউরেটর মলতভের নামানুসারে। ১৯৫৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আরতেকের নামকরণ করা হয় ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের নামানুসারে।

সোভিয়েত আমলে আরতেকের ভ্রমণের আমন্ত্রণ পত্র পাওয়া সোভিয়েত ও বিদেশী শিশুদের জন্য মর্যাদার ব্যাপার ছিল। এই আমন্ত্রণ পত্র পেত বিভিন্ন মানদণ্ডের বিচারে সোভিয়েত পাইওনিয়ারদের শ্রেষ্ঠ সদস্যরা। আরতেকের স্বর্ণ যুগে প্রতি বছর এখানে ২৭ হাজার শিশু অবসর যাপন করত। তবে অবসর মানে বিশ্রাম নয়, বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা ও শিক্ষা মূলক কাজে নিজদের ব্যস্ত রাখা অ স্বাস্থ্যোদ্ধার করা। ১৯২৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত আরতেকে তিন লাখ শিশু অবসর যাপন করেছে যাদের মধ্যে ছিল ১৭ দেশের ১৩ হাজার বিদেশী শিশু। অধিকাংশ বিদেশী শিশুরা আরতেকে আসত গ্রীষ্মের ছুটিতে, এটাকে তাই বলা হত ইন্টারন্যাশনাল শিফট। এদের খরচ বহন করত সোভিয়েত ইউনিয়ন। এসব শিশুরা মূলত ছিল ইউরোপের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকারী, এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি লয়াল বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীদের সন্তান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সোভিয়েত ভেটেরানদের কমিটি নিজেদের খরচায় প্রতি বছর ইউরোপ থেকে কয়েক গ্রুপ শিশুদের আমন্ত্রণ জানাত। ১৯৮০ দশকের দ্বিতীয়ার্ধে অন্যান্য পদ্ধতিতেও আরতেকের জন্য বিদেশী শিশুদের বাছাই করা হত। ১৯৮৮ সালে আমেরিকার ২০ টি স্টেট থেকে ১০০ জন শিশু আসে “কেন আমি আরতেকে যেতে চাই” বিষয়ের উপর রচনা প্রতিযোগিতার ফলফলের উপর নির্ভর করে। “সব সময় সূর্যের আলো থাকুক” নামে ১৯৭৭ সালে আয়োজিত শিশুদের আন্তর্জাতিক উৎসবে ১০৩ দেশের ১৫০০ শিশু ও ৫০০ সম্মানিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে লিওনিদ ব্রেঝনেভ, ইন্দিরা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, ইউরি গাগারিন, হো চি মিন, মিখাইল তাল, ভালেন্তিনা তেরেশকভা, লেভ ইয়াশিন ও অন্যান্যরা আরতেক ভ্রমণ করেন। ১৯৮৩ সালে এখানে আসে আমেরিকার সামান্থা স্মিথ। ১৯৪৫ সালে আরতেককে রেড ফ্ল্যাগ ও ১৯৭৫ সালে পিপলস ফ্রেন্ডশিপ অর্ডার প্রদান করা হয়। ১৯৯১ সালের জুন মাসে আরতেক আন্তর্জাতিক শিশু কেন্দ্রে পরিণত হয়। পরবর্তীতে আরতেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসব – যেমন আন্তর্জাতিক শিশু সিনেমা উৎসব (১৯৯৩ সাল থেকে), আন্তর্জাতিক এয়ারোকসমিক উৎসব (১৯৯৪ সাল থেকে) ইত্যাদি পালিত হতে শুরু করে। ১৯৯৫ সালে আরতেক আন্তর্জাতিক শিশু ক্যাম্পের সদস্য হয়।  ১৯৯৬ সালে এখানে বাইওলোজির উপর আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালের ৬ জুন আরতেক ক্রিমিয়া অটোনোমাস রিপাবলিকের পার্লামেন্ট রাদার পক্ষ থেকে সম্মানিত হয়। ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আরতেক ইউক্রেনের যুব মন্ত্রণালয়ের আর ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আডমিনিস্ট্রেশনের অধীনে ছিল। ২০০৮ সালে ইউক্রেন অলিম্পিক কমিটির প্রধান সেরগেই বুবকা আরতেকে জাতীয় অলিম্পিক দলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গঠনের কথা ঘোষণা করেন, যদিও সেটা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৯ সালে প্রথম বারের মত অর্থাভাবে আরতেকের কাজকর্ম সাময়িক ভাবে স্থগিত হয়ে যায়। আরতেকের ডাইরেক্টর বরিস নভঝিলভ বলেন ২০০৯ সাল হতে পারে আরতেকের শেষ বছর। শুরু হয় প্রতিবাদ। তখন রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির যুব সংগঠন আরতেক রক্ষায় মুভমেন্ট তৈরি করে। ২০১৩ সালে আরতেকে ৬৭ রাষ্ট্রের শিশুরা অবকাশ যাপন করে।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (২০৫) নতুন বোতলে পুরানো মদ-বিজন সাহা

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হলে আরতেক রুশ সরকারের বাজেটের অধীনে চলে আসে। আরতেকের দেখাশোনার ভার রাশিয়ার শিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত করা হয়। আরতেক আর শুধু অবকাশ যাপনের ক্যাম্প থাকে না, একে আধুনিক শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে যখন ক্রিমিয়া তথা  আরতেক ইউক্রেনের অধীনে ছিল তখন কৃষ্ণ সাগরের তীরে সচি শহরে আকাশের সবচেয়ে উজ্বল নক্ষত্র সিরিয়াস নামে একটি আধুনিক ইয়ুথ সেন্টার গড়ে তোলা হয় যেখানে বিভিন্ন দেশের ছেলেমেয়েরা অবকাশ যাপনের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে।  ক্রিমিয়া রাশিয়ার অধীনে আসার পর আরতেককে নতুন করে সাজানো হয়। দীর্ঘদিন আর্থিক সংকটের পর রাশিয়া সরকার নতুন করে একে ঢেলে সাজায়। ২০১৪ সালের হেমন্তে শুরু হয় পুনর্নির্মাণ কাজ। সে সময় রাশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে ৫ বিলিয়ন রুবল অনুদান দেয়া হয়। অসমাপ্ত স্থাপনার কাজ সম্পন্ন করা হয়, তৈরি হয় নতুন নতুন স্থাপনা। ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৪ টি নতুন স্থাপনা নিয়ে লাজুরনি নামক ক্যাম্প কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে মার্চ মাসে রুশ সরকার ২০২০ সাল পর্যন্ত আরতেক পুনর্গঠনের কর্মসূচী হাতে নেয়। ২০১৫ সালে আরতেকের ডাইরেক্টর আলেক্সেই কাস্পরঝাক আরতেকের আমন্ত্রণ পত্র পাবার নতুন পদ্ধতির কথা ঘোষণা করেন। তখন থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুদের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো শুরু হয়। ২০১৫ সালে এখানে ২০ হাজার শিশু অবকাশ যাপন করে। ২০১৯ সালের হেমন্ত পর্যন্ত রুশ সরকার আরতেকের পেছনে ৩৪ বিলিয়ন রুবল খরচ করে। ২০১৬ সালে রাশিয়ান ন্যাশনাল গার্ড আরতেকের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

২০১৪ সালের ১ জুনের রিপোর্ট অনুযায়ী আরতেকে ৪০০ এর বেশি স্থাপনা ছিল। জল, তাপ ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ছিল জটিল ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লেক্স, টেলিফোন লাইন ইত্যাদি যার বেশিরভাগ ব্যবহারের অযোগ্য। ২০১৪ সালের হেমন্তে ১০ টি ক্যাম্পের মধ্যে মাত্র ৫ টি ছিল কর্মক্ষম, যার মধ্যে ২ টি ছিল সাময়িক ভাবে ব্যবহারের জন্য। ফলে শুরু হয় বিশাল কর্ম যজ্ঞ। বর্তমানে ১০ ক্যাম্পের মধ্যে ৯ টি পুরোপুরি কর্মক্ষম। ইতিমধ্যে ২৮০ হাজার বর্গমিটার স্থাপনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে যার ৯৬,৫ বর্গমিটার ৯ টি ক্যাম্পে, ২৩ কিলোমিটার রাস্তা, ১৯ কিলোমিটার ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন, ৬ টি ক্যান্টিন, ৯ টি স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও ৩ টি টেনিস কোর্ট, ২ টি সুইমিং পুল, মেডিক্যাল সেন্টার, টেকনিক্যাল সেন্টার, বায়োস্ফেয়ার স্টেশন, পার্ক, রিক্রিয়েশন এরিয়া, বিচ ইত্যাদি। এছাড়াও আধুনিক আরোহণ প্রাচীর ও দড়ি পার্ক এবং ৬ হাজার বর্গমিটারের এক্সট্রা কারিকুলাম শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ২০১৭ সালে নির্মিত হয় সাড়ে ৪ হাজার সীট বিশিষ্ট কনসার্ট হল আরতেক-আরেনা। বর্তমানে আরতেক প্রতি বছর ৫০ হাজার শিশু গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আরতেকে অনেক কিছুই বদলে গেছে। বর্তমানে ৯০ টি সংগঠন আরতেকের সাথে কাজ করে। তাদের সক্রিয় সহযোগিতায় এখানে কারিগরি, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক ও শিক্ষাগত, শিল্প, পর্যটন, স্থানীয় ইতিহাস, শরীর চর্চা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে ১২০ টির বেশি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষামুলক কর্মসূচী তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেন্দ্র আরতেক নেটওয়ার্ক এডুকেশনাল মডিউল নামে এক নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষামুলক ব্যবহার শুরু করে যা পরবর্তীতে ডিস্ট্যান্ট এডুকেশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  ২০১৪ সাল থেকে এখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গঠন করা হয়েছে যার ফলে ইতিমধ্যে ২১৮ জন প্রতিবন্ধী শিশু এখানে অবকাশ যাপন করেছে। বিদেশ থেকে শিশুরা যাতে এখানে এসে অবকাশ যাপন করতে পারে সে জন্যে ২০১৭ সালে থেকে এখানে ইংরেজি, এরাবিয়ান, গ্রীক, স্প্যানিশ, চাইনিজ, মঙ্গোলিয়ান, জার্মান, সারবিয়ান, ফ্রেন্স ও চেখ ভাষায় ২৩ জন ইন্টারপ্রেটর কাজ করে। যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রিমিয়ায় যাওয়া অনেকেই আগের মত নিরাপদ মনে করে না, তারপরেও আরতেক আগের মতই সরব। দনবাসের অনেক শিশু যুদ্ধের ডামাডোল থেকে এখানেই শান্তি ফিরে পায়। বিগত ১০০ বছরের মত আরতেক ভবিষ্যতেও দেশ বিদেশের শিশুদের হাতছানি দিয়ে ডাকবে। অপেক্ষা শুধু শান্তি ফিরে আসার – ক্রিমিয়ায়, ইউক্রেনে, রাশিয়ায়, পৃথিবীতে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো