কর্মবিরতি প্রত্যাহার, লোড-আনলোড শুরু প্রাণ ফিরেছে খাতুনগঞ্জে
দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ছুরিকাঘাতে এক শ্রমিকের মৃত্যুর জের ধরে বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি রাতে প্রত্যাহার করে নেয় লোড-আনলোড শ্রমিকরা। বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৮টার পর থেকে শ্রমিকরা কাজে ফিরেন। এতে স্থবির হয়ে পড়া খাতুনগঞ্জে আবারো প্রাণ ফিরে এসেছে।
এদিকে হত্যকান্ডে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে বুধবার সকাল ৬টায় আহত শ্রমিক মো. মাসুদ (৪১) চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যুর খবরে খাতুনগঞ্জের শ্রমিকেরা লোড-আনলোডের কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভে নামেন। এদিকে, মাসুদকে ছুরিকাঘাত ঘটনার পর থেকে খাতুনগঞ্জে কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন তারা।
কিন্তু পরে বুধবার সকালে মাসুদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে পুনরায় কর্মবিরতি শুরু করেন লোড-আনলোড শ্রমিকরা। এতে খাতুনগঞ্জে সব ধরনের পণ্য উঠানামার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যায় বেচাবিক্রি। খাতুনগঞ্জের সরবরাহ চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। কিন্তু বিক্ষোভের কারণে বুধবার কোন বেচাকেনা হয়নি। এতে করে কয়েকশ কোটি টাকার লোকসান হয়।
পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যবসায়ী, শ্রমিকদের নিয়ে একটি বৈঠকে হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে শ্রমিকরা কাজে ফিরে যেতে রাজি হন। প্রাথমিকভাবে খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, চাক্তাই ও কোরবানিগঞ্জ এলাকায় ট্রাকসহ সবধরনের বড় গাড়ি চলাচল করতে পারলেও এখানে কোন ধরনের পিকআপ প্রবেশ করতে পারবে না- বলে সিদ্ধান্ত হয়।
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, মাসুদ নামে এক শ্রমিককে হত্যার প্রতিবাদে শ্রমিকরা সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে দেয়। এতে পুরো খাতুনগঞ্জ স্থবির হয়ে যায়। শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বলতে গেলে গত দুদিন খাতুনগঞ্জ কোনো পণ্য বেচাকেনা হয়নি। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনেছে।
তিনি বলেন, একজন শ্রমিককের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা খুবই নিন্দনীয়। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, দ্রুত সময়ে নিহত শ্রমিকের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রাত থেকে লোড-আনলোড শুরু হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি জাহেদুল কবির বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় খাতুনগঞ্জের ওসমানিয়া গলির মেসার্স সামিরা ট্রেডিংয়ের সামনে শ্রমিক মাসুদকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নিহত মো. মাসুদ চাক্তাই রাজখালী রোডের মো. বেলায়েত হোসেন বেপারির ছেলে।
# ২০.১০.২০২২ চট্টগ্রাম #