বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৩৭)

– বিজন সাহা  

বসন্তের সতেরোটি মুহূর্ত – ইউলিয়ান সিমিওনভের বিখ্যাত উপন্যাসের ভিত্তিতে তৈরি সিনেমার কথা মনে পড়ছে। মনে আছে যখন এই সিরিয়াল চলত তখন সবাই জড়ো হত টিভির সামনে আর স্টিরলিৎস-এর ভুমিকার তিখোনভ সবাইকে চুম্বকের মত টানতেন। শুধু কি তিখোনভ? প্রতিটি অভিনেতা অভিনেত্রী তা সে সোভিয়েত চরিত্রেই হোক অথবা জার্মান চরিত্রে – এত সুন্দর অভিনয় করেছেন যে এমনকি খল চরিত্রকেও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন। সেখানে কেট নামে এক মহিলা যিনি আসলে রুশ গুপ্তচর ও স্টিরলিৎসের সহযোগী প্রসবের সময় মামা বলে চিৎকার করে ওঠে আর তখনই প্রকাশ পায় তার আসল পরিচয়। মানুষ নাকি এরকম কঠিন মুহূর্তে নিজের অজান্তেই মুখোশ খুলে নিজের আসল রূপটা প্রকাশ করে।

১৯৮৩ সালে যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নে আসি তখন সোভিয়েত সমাজ সম্পর্কে একেবারেই অন্য রকম ধারণা ছিল, তার কিছুটা গড়ে উঠেছিল সোভিয়েত ক্ল্যাসিক সাহিত্য পড়ে। আর ছিল সোভিয়েত প্রোপ্যাগান্ডা। নিজে তখন সমাজতন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। তাই সোভিয়েত পত্রপত্রিকায় যত না লেখে তার চেয়ে বড় চিত্র মনে মনে তৈরি করে নেই। তবে আসার কয়েকদিন পরেই যখন সেই ছবিতে বিভিন্ন রকমের অসঙ্গতি দেখতে পাই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে থাকি এই বলে যে সেটা তো আমারই দোষ, নিজেই তো এই ছবি এঁকেছি। আসলে মানুষকে আর যাই হোক জোর করে ভালবাসতে শেখানো যায় না। সোভিয়েত সমাজে অন্তত ডক্ট্রিনাল পর্যায়ে অনেক কিছুই করার আহ্বান জানানো হত যা আদতে মানুষের প্রকৃতি বিরুদ্ধ। মানুষের বর্তমান পর্যায়ে আসার পেছনে রয়েছে তার অন্যদের ছাড়িয়ে যাবার, অন্যের চেয়ে ভাল থাকার প্রবনতা। লোভ, ক্রোধ এসব রিপু যত খারাপই হোক না কেন তা মানুষকে উপরে উঠতে উদ্বুদ্ধ করে। রিপু মানুষ পেয়েছে প্রকৃতির কাছ থেকে, তাই একে  আইন করে নিষিদ্ধ করা যায় কিন্তু দমন করা যায় না।

বাড়িতে আমরা বড় হয়েছি খুবই স্বাধীন পরিবেশে। বড়দের শাসন থাকলেও যেকোনো ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করার সুযোগ ছিল। ছোটবেলায় ঠাকুর দেবতার প্রতি ভক্তি থাকলেও প্রাইমারি স্কুলের শেষের দিকেই তাতে ভাটা পড়ে আর দেবতাদের প্রতি সেই বিদ্রোহ বেশ জোরেশোরেই ঘোষণা করি। এক কথায় প্রতিটি বিষয়ে নিজের মতামত জানাতে কখনই কোন সমস্যা হয়নি। বরং বাবা মা সেটা শিখিয়েছেন। তাই এদেশে এসে যখন দেখলাম এমনকি সামরিক শাসন আমলে আমরা যতটা স্বাধীন ভাবে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারতাম এদেশের ছেলেমেয়েরা সেটা করে না বা পারে না – অবাক হতাম। ফলে এক সময় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের অভাবটা প্রচণ্ড অনুভব করতাম।

আসলে মানুষ সব সময়ই শুধু ভালোটাই চায় ফলে দু একটা খারাপের মধ্যে অনেক ভালোই ঢাকা পড়ে যায়। সোভিয়েত সমাজ আর দশটা সমাজের মতই ভালোমন্দ মিলেমিশে থাকতো। আমরা যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতাম তারা শুধু ভালোটাই দেখতাম বা দেখতে চাইতাম, অন্যদিকে যারা সোভিয়েত বিরোধী তারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খারাপ দিকটা বের করত। সব কিছুর মতই প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও  সাবজেক্টিভ। এতে করে সেই সমাজের খুব বেশি কিছু যেত আসত বলে মনে হয় না। তবে যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়নকে যারা ভালোবাসতো তারা প্রায়ই অন্ধের মত এর দুর্বলতাগুলো এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করত ফলে ভুল সংশোধনের চেষ্টা তেমন ছিল না, বরং আরও জোরেশোরে ভুলগুলো করে যাওয়া হত। এটা মনে হয় সব ক্ষেত্রেই হয়। কোন কাজ যখন ঠিক মত না হয় মানুষ তখন তার পদ্ধতি পরিবর্তনের আগে আরও বেশি শক্তি প্রয়োগ করে একই ভাবে কাজটি করার চেষ্টা করে। কারণ? কারণ পদ্ধতি পরিবর্তন মানে নিজের ভুল স্বীকার করা। সেটা খুব কম মানুষই করতে পারে।

সোভিয়েত আমলে এ দেশে ভাল জিনিসের অভাব ছিল না। বাচ্চাদের ছিল আনন্দময় শৈশব। ছাত্রদের ছিল পড়াশুনার আদর্শ পরিবেশ। সেটা অবশ্য আমার দৃষ্টিতে যারা বাংলাদেশে অনবরত সেশন জটের মধ্যে দিয়ে গেছে। হয়তো পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোয় পড়াশুনা আরও অনেক ভাল হয়েছে, অন্তত অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হাভার্ড, ক্যালটেক ইত্যাদি বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। কিন্তু সাধারণ স্কুল কলেজে সেটা ছিল কিনা বলতে পারব না। ঠিক তেমনি ছিল চিকিৎসা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে। অন্তত একটা ষ্ট্যাণ্ডার্ড বজায় ছিল সব মানুষের জন্য। এরকম বহু ভালোর মধ্যে খারাপ ছিল অনেক। শ্রেণিহীন, শোষণমুক্ত সমাজের কথা বললেও পার্টির লোকজন বিশেষ করে নেতারা একটু বেশি রকম সমান ছিল, পরোক্ষ ভাবে তারাই শোষণ করত দেশটা। কারণ প্রশাসনের পাশাপাশি যে পার্টি নমেক্লাতুরা ছিল সেটা কোন মতেই উৎপাদনশীল খাত ছিল না, কিন্তু ভোগের বেলায় এরা ছিল সবার আগে।

সোভিয়েত আমলে দেখেছি ভিন্নমতাবলম্বীদের এখানে একেবারেই সহ্য করা হত না। তাদের বিভিন্ন ভাবে হেয় করা হত। তা সে স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইওনিয়ার বা কমসোমলের মিটিঙেই হোক আর কল কারখানায় পার্টি মিটিঙেই হোক। যেহেতু সমস্ত কিছুতে ছিল পার্টি তথা রাষ্ট্রের একচ্ছত্র অধিকার তাই ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ সেখানে পাত্তা পেত না। রাষ্ট্রের একপেশে প্রচার তাই যে সত্যকে সামনে নিয়ে আসত সেটা ছিল অপূর্ণ, কখনও কখনও বা বিকৃত। ভাবখানা এই যে “যুদ্ধে সমস্ত মাধ্যমই ভালো” অথবা “লক্ষ্য মাধ্যমের ন্যায্যতা প্রমাণ করে।”  আর গণতন্ত্রের অভাব, পরমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা, যেকোনো মূল্যে লক্ষ্য অর্জন  করা – এসব কারণেই মুক্ত বিশ্ব সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সমালোচনা করত। এবং এই সমালোচনাগুলো সঙ্গত ছিল। তাই সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্ব ভিন্ন পথে যাবে সেটাই আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সেটা হচ্ছে না, বরং সোভিয়েত সমাজের খারাপ দিকগুলিই অনেক পশ্চিমা দেশ নিজেদের মত করে ব্যবহার করছে। এটা অনেকটা আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মত – ক্ষমতার বাইরে থাকাকালীন বিভিন্ন আইনের সমালোচনা করে, অথচ একবার ক্ষমতায় গেলে সেই সব কালা কানুন দ্বিগুণ উৎসাহে ব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মানে নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী করার জন্য।

সোভিয়েত ইউনিয়নকে বা কমিউনিজমকে ঠেকানোর জন্য এক সময় পুঁজিবাদী বিশ্বেও বিভিন্ন রিফর্ম শুরু হয়, উদ্ভব ঘটে ওয়েলফেয়ার স্টেটের। এভাবেই সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনেক কিছুই পুঁজিবাদের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে স্থান করে নেয়। এরপর আসে গ্লোবালাইজেশন। ছোট হয়ে আসে পৃথিবী। মানুষ ভাবে যে অতীতের সমস্ত মান অভিমান, সমস্ত কলহ ভুলে আধুনিক বিশ্ব শান্তির পথে পা বাড়াবে। তবে সেটা হয়নি, বাধ সাধে পুঁজিবাদ। শুধু আজকের দিনেই নয় যুগ যুগ ধরে সম্পদ বৃদ্ধির প্রধান উপায় ছিল যুদ্ধ। এখনও তাই, তবে সেটা ভিন্ন পদ্ধতিতে। আগে যদি যুদ্ধ করে রাজ্য জয় করে রাজারা সম্পদের মালিক হতেন, এখন পুঁজিপতিরা যুদ্ধ লাগিয়ে অস্ত্র বিক্রি করে সেটা করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে। তাই শুরু হয় শত্রু খোঁজা। এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঠেকাতে যে তালিবান আর আল কায়েদা সৃষ্টি করেছিল আমেরিকা আজ তারাই হয় আমেরিকার বড় শত্রু। এর পরে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া। তৈরি হয় ইসলামিক স্টেট। কিন্তু তারা কখনই আমেরিকা বা ন্যাটোর যোগ্য শত্রুর স্থান দখল করতে পারে না। দরকার এমন কাউকে যে ঘুমিয়ে থাকলেও তার আকার দিয়ে অন্যদের মনে ভয় সঞ্চার করতে পারে। আর এই ভূমিকায় রাশিয়ার চেয়ে যোগ্য আর কে হতে পারে?

ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় আমেরিকা ও ন্যাটো সোভিয়েত ইউনিয়নকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামিয়ে এর অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলে। ঘর পোড়া গরু নাকি সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়, তাই এবার আর রাশিয়াকে সেই প্রতিযোগিতায় নামানো সম্ভব হয়নি। উপায়? তাকে যুদ্ধে নামানো। ঠিক যেমনটা আফগানিস্তানে হয়েছিল। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় তাদের ক্যাল্কুলেশনে ভুল ছিল। এত স্যাঙ্কশনের পরেও রাশিয়ার জনগণ বিপ্লব করতে মাঠে নামেনি। তাই শুরু হয়েছে নতুন খেলা। সে খেলাও পশ্চিমা বিশ্বের অজানা নয়। ১৯৩০ এর দশকে জার্মানি এভাবেই শুরু করেছিল। সেবার তার শিকার ছিল ইহুদিরা, এবার রুশরা।

এখন ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডে নাকি ভালুক (রুশ) শিকার শুরু হয়েছে। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর যেসব জার্মান হেলমুট কোহলের ডাকে সাড়া দিয়ে জার্মানি ফিরে গিয়েছিল  তাদের উপরেও নাকি নানা রকমের বাধানিষেধ নেমে এসেছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে এসব জার্মানের অধিকাংশই এসেছিল সম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় ইয়েকাতেরিনার সময় আর হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে স্তালিন তাদের কাজাখস্তানে নির্বাসনে পাঠায়। ইউরোপে স্কুল কলেজ থেকে রাশিয়ান পাসপোর্টধারী ছাত্রছাত্রীদের বহিস্কার করা হচ্ছে। যারা অনেক আগেই এদেশ ত্যাগ করে ইউরোপ আমেরিকায় বসবাস করতে শুরু করেছে তাদের বাসা ভাড়া পেতে অসুবিধা হচ্ছে, অনেকের গাড়ি, বাড়ি নষ্ট করা হচ্ছে, অনেকের সাথে চাকরির কন্ট্রাক্ট নবায়ন করা হচ্ছে না। রুশ খেলোয়ারদের কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন কি এদেশের বিড়াল, কুকুর পর্যন্ত বেআইনি হয়ে গেছে – কোন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পারছে না। অনেক হাসপাতাল রুশদের চিকিৎসা সেবা না দেবার কথা ঘোষণা করেছে। অনেক ক্যাফে রেস্টুরেন্টে রুশদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। এক কথায় সর্বত্র শুরু হয়েছে রুশ খেদাও আন্দোলন। এটা অনেকটা গত শতকের তিরিশের দশকে জার্মানি থেকে ইহুদি তাড়ানোর মত। রুশ সব কিছুর সাথে বর্জন করা হচ্ছে রুশ সাহিত্য, রুশ মিউজিক। দস্তয়েভস্কি, চাইকভস্কি, তুরগিনেভ – এরা সবাই মনে হয় সমাধি থেকে উঠে এসে পুতিনকে সমর্থন করছেন। ইংল্যান্ড আর আমেরিকার রুশ কোটিপতিদের সাথে সাথে অনেক সাধারণ মানুষও এর শিকার হচ্ছে। পোল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে রুশ নেমপ্লেটধারী গাড়ি শিকার হচ্ছে ভান্ডালের। আর সেটা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততায়। পোল্যান্ড বেলারুশ বর্ডারে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে শত শত গাড়ি। এদের উপর আক্রমণ হচ্ছে ইউক্রেন ন্যাশনালিস্ট আর তাদের স্থানীয় দোসরদের। তারা বাধ্য হচ্ছে রাতের বেলায় এক জোট হয়ে পাহারা দিতে। এক কথায় পরমতসহিষ্ণু ইউরোপ দিন দিন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। আচ্ছা গণতন্ত্র ও ব্যক্তি সম্পদের প্রবক্তা পশ্চিমা বিশ্ব যদি রাজনৈতিক কারণে কোন দেশ বা মানুষের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তাহলে তারা নিজেদের চরিত্র হারায় না নাকি? আরও একটা কথা, পশ্চিমা বিশ্বে প্রায়ই সোভিয়েত ইউনিয়নের সবাইকে রুশ বলে ধরে নেওয়া হয় যেমনটা সেখানে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সব মানুষকেই ভারতীয় বলে মনে করা হয়। এটা অফিসিয়ালি নয়, জনমনে। আর এখন রুশদের উপর এসব খাড়া নেমে এসেছে সাধারণ মানুষদের পক্ষ থেকেই। তাতে অনেক সময় রুশদের বাইরেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। আমার যেসব বন্ধুরা সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়াশুনা করেছে এবং সোভিয়েত সার্টিফিকেট নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে কাজকর্ম করছে তারাও কি এরকম ডিসক্রিমিনেশনের শিকার হচ্ছে? প্রশ্নটা এ কারণেই করলাম যে দেশে সোভিয়েত ফেরত বিশেষজ্ঞদের অনেক সময় নাকি রাশিয়ান বলে স্থানীয় লোকজন।

সোভিয়েত আমলে, সেই পেরেস্ত্রোইকার সময় পাব্লিক ডিপ্লোম্যাসি বলে একটা পদ্ধতি চালু হয় সোভিয়েত ও আমেরিকান জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে। একদিন এই যুদ্ধ শেষ হবে, কিন্তু মানুষে মানুষে এই যে অবিশ্বাস, এই যে ঘৃণা তৈরি হল সেটা কি একদিনে যাবে? মাত্র ৫০ বছর আগেও আমেরিকা বর্ণবাদে আক্রান্ত ছিল। তাই বা কেন? সাম্প্রতিক অনেক ঘটনাই প্রমাণ করে সে এখনও বর্ণবাদের ভূত ঘাড় থেকে নামাতে পারে নি। এমনি এমনি তো আর বিএলএম আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেনি। এখন আবার এই রুশোফোবিয়া। বলছি না যে রাশিয়া গঙ্গা জলে ধোঁয়া তুলসি পাতা। তার অনেক দোষ আছে, তবে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিশেষ করে ইংল্যান্ড আর আমেরিকার প্ররোচনায়, অনেকটা বাধ্য হয়ে। এখনও পর্যন্ত আমেরিকা সবচেয়ে বড় লাভবান। ইউরোপের বাজার দখল করেছে, ন্যাটোর মধ্যে যে অন্তর্ঘাত ছিল সেটা কমেছে, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা কমেছে, মুক্তহস্তে অস্ত্র বিক্রি করছে। কিন্তু এসব করতে গিয়ে সারা বিশ্বকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ফেলেছে, ডলারের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রশ্নের সম্মুখীন। সবচেয়ে বড় কথা বর্ণবাদ আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ফ্যাসিবাদ। তাই যারা যুদ্ধের বিপক্ষে, তারা যখন শান্তির জন্য আবেদন করবেন এই বিষয়গুলো ভুলে যাবেন না, কেননা বর্ণবাদ, ফ্যাসিবাদ এসব উপাদান নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা
শিক্ষক, গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া