চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড: ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে দন্ডিত কর্মকর্তাকে ফলাফল প্রস্তুত করতে চুক্তিতে নিয়োগ, সচিবের বিরুদ্ধে তদন্তের আলামত নষ্টের অভিযোগ

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড (ফাইল ছবি)

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিভাগীয় শাস্তি ভোগ করেছিলেন সিনিয়র কম্পিউটার এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান। সম্প্রতি তিনি প্রাক অবসর ছুটিতে যান। তবে সাজা ভোগ করা সেই কম্পিউটার এনালিস্টকে দৈনিক ২০০০টাকা বেতনে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুতের দায়িত্ব দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। গত ৩১ মার্চ, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্রধানদের এক মিটিংয়ে এ নিয়োগ অনুমোদন করা হয় ।  কম্পিউটার প্রোগ্রামার মোহাম্মদ আব্দুল মালেকের সন্তান ২০২৪ এ এসএসসি পরীক্ষার্থি হওয়ায় তাকে ফলাফল প্রস্তুত প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখা ও জনবল সংকটের কারনে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

পরে, ৪ এপ্রিল এক চিঠির মাধ্যমে কিবরিয়া মাসুদ খানকে ১৫ এপ্রিল থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত দৈনিক ২০০০ টাকা বেতনে চুড়ান্ত ভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, নিজের ছেলের এইচএসচি পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করতে বর্তমান সচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র নাথ তার অপকর্মের দোসর কিবরিয়া মাসুদ খানকে আবারো কৌশলে কম্পিউটার সার্ভার রুমে প্রবেশ করিয়েছেন। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ বিষয়টিকে রহস্যজনক বলেও মন্তব্য করেছেন। তাদের দাবি তাকে বরখাস্ত না করে তদন্ত করা না করা সমান কথা। এতে তার তদন্তে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু বোর্ডের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সার্ভার থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ডিলিট করা হয়েছে। ওএমআর নষ্ট করার চেষ্টা করছে। সচিব নারায়ণ চন্দ্রের ছেলের খাতাগুলো আনিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টায় আছে তারা। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রিতা এবং সচিবকে ওএসডি না করায় আলামত নষ্টের কাজ জোরেশোরে করে যাচ্ছে। সাজা প্রাপ্ত কিবরিয়া মাসুদ খানকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে অবৈধ প্রক্রিয়ায়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে আন্তঃবোর্ড এর পরামর্শ নিয়েছে। তদবির করতে বারবার ঢাকা যাচ্ছেন সচিব। এর আগে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ফলাফলে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। সেসময় সিনিয়র সিস্টেম এনালিষ্ট কিবরিয়া মাসুদ খান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়। তাদের ওই কর্মকাণ্ডে বোর্ডের সুনাম ক্ষুন্ন হয় এবং তারা সরকারি কর্মচারী চাকুরী বিধিমালা অনুসারে অসদাচারণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অপরাধে সাব্যস্থ হয়েছেন বলে জানানো হয়।

২০২২ সালের জুলাইয়ে শাস্তিস্বরূপ কিবরিয়া মাসুদ খানের বেতন এক বছরের জন্য বিদ্যমান গ্রেডের নিম্নতর গ্রেডে অবনমিত করা হলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে তিনি সচিব পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। এরিমধ্য, ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় নিজের ছেলেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জিপিএ ৫ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কে বা কারা তার ছেলে সব বিষয়ের খাতা পুনঃ নিরীক্ষণের আবেদন করলে বিপাকে পড়েন তিনি। সেই পুনঃ নিরীক্ষণ থামাতে তার স্ত্রী থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করার পর সাবেক বোর্ড সচিব ও এক শিক্ষাবিদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছেন।

ইতোমধ্য, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার অবসরে গেলে নারায়ন চন্দ্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্ব পান। আর দায়িত্ব পেয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাতিল করেন পুনঃ নিরীক্ষণের আবেদন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি নারায়ণ চন্দ্রের। গত ১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক চিঠিতে তার বিরুদ্ধে ওঠা ফলাফল কেলেঙ্কারির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে উপযুক্ত কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে। তবে বোর্ডের সাবেক এই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে স্বপদে বহাল রেখে অভিযোগের তদন্ত চালাতে বলায় বোর্ডজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সেই আলোচনা-সমালোচনা রেশ কাটতে না কাটতেই ইতিপূর্বে জালিয়াতিতে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আবারও গোপনীয় কাজে সমালোচনার মুখে নিয়োগ দেওয়াকে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ও তদন্ত প্রভাবিত করতেই করা হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।