চলমান সংবাদ

মহাকাশে হার্ট শেপের দুই গ্যালাক্সি

-অপর্ণা চক্রবর্তী

মহাকাশে রয়েছে সেই দুর্দান্ত হার্ট শেপের দুই গ্যালাক্সি। ওদের নাম NGC 4038 এবং NGC 4039!
নামদুটো বিজ্ঞানীদের দেয়া। হাবল টেলিস্কোপের তোলা ছবি।
এই ভালোবাসা ময় গ্যালাক্সি দুটো, ভালবাসায় ভরা জানো?
কেন বলছি, শোনো তাহলে।
ওরা আলাদা ছিল বহু কোটি কোটি বছর ধরে। ছিল পড়শি গ্যালাক্সি!
গ্যালাক্সি রা ক্রমপ্রসারমান মহাবিশ্বে এক জন থেকে আরেকজন দূরে সরে যাচ্ছে দূরত্বের অনুপাতে, আবার মাধ্যাকর্ষণের টানে কাছে আসছে। দুই দিকের টানে জয়ী হয়ে যাচ্ছে মহাকর্ষ। আর তার ফলেই ৪০৩৮ আর ৪০৩৯ মিলিত হয়েছে। ওরা অবস্থান করছে পৃথিবী থেকে ৬০ মিলিয়ন বা ৬ কোটি আলোকবর্ষ দূরে।
এখন ওদের এই মহামিলনে কোনো সংঘাত হয়নি কিন্তু। সংঘাত হবার কথাও নয়। একেক টি নক্ষত্র আরেকটি থেকে বহু বহু দূরে অবস্থান করে। কিন্তু গ্যাসীয় প্রভাবে প্রভাবিত হয় নক্ষত্রের আবহ।
আর এই দুই গ্যালাক্সিতেই রয়েছে আন্ত আনবিক গ্যাসীয় মেঘ। যা শত সহস্র আলোকবর্ষ ব্যাপি বিস্তৃত। যাদের বলি নেবিউলা। এইসব নেবিউলাতে যখন এক কুচি ধুলো বালি এসে পড়ে, ব্যস শুরু হয় আলোড়ন। আর সেই আলোড়ন থেকেই ঘূর্ণন।প্রচন্ড চাপ আর ঘর্ষণে ঘূর্ণন বাড়তে বাড়তে বাড়ে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা যখন নূন্যতম দেড়কোটি ডিগ্রি কেলভিনে পৌঁছয়, শুরু হয় সেই বিখ্যাত ফিউশন বিক্রিয়া। এরপর ফিউশনে গামা রে থেকে দৃশ্যমান আলোয় পৌঁছুতে লক্ষ থেকে কোটি বছর লাগে। দপ করে জ্বলে ওঠে ভ্রূণ সূর্য।
এই দুই গ্যালাক্সির মিলনে তৈরি হয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন সূর্য।
হাবল যা ক্যাপচার করেছে, আমরা যা দেখছি তা ৬ কোটি বছর আগের আলো। এখন হয়ত অনেক পালটে গ্যাছে এর আকার, প্রকার। ভ্রূণ সূর্যরা পরিণত হয়ে গ্যাছে। সেসব দেখার জন্য আবার ৬ কোটি বছর অপেক্ষা করতে হবে।
তবুও আজ যা দেখছি তা অনন্যসুন্দর দুটো ভালবাসাময় গ্যালাক্সি।
সাড়ে তিনশ থেকে চারশ কোটি বছর পর আমাদের মিল্কিওয়ে আর এন্ড্রোমিডা মিশে যাবে এভাবে। পৃথিবীতে সভ্যতা টিকে থাকলে তারা হয়ত উপলব্ধি করতেও পারে, নাও পারে, আমাদের সূর্য যদি ততদিন জ্বালানী না ফুরিয়ে ফ্যালে।
নক্ষত্র নক্ষত্র, গ্যালাক্সি গ্যালাক্সি, ব্ল্যাকহোল ব্ল্যাকহোল সব্বাই সব্বার সাথে মিশে যায় আর এটাই মহাকর্ষের ধর্ম।
আমি সংঘর্ষ বলিনি। মিশে যাওয়া বলেছি।
ভালবাসা ময় মহাবিশ্ব। সবকিছু সবকিছুকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ নির্ভর করে বস্তুর ভর আর দূরত্বের ওপর।
এটুক ই থাক আজ।
লেখক পরিচিতি  – অপর্ণা চক্রবর্তী ১৯৮৫ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য কিশিনেভ স্টেট ইউনিভার্সিটি যান। পিওর কেমিস্ট্রিতে ১৯৯১ সালে মাস্টার্স কমপ্লিট করেন। পরে একটি বেসরকারি সংস্থায় কেমিস্ট হিসেবে তিনবছর কাজ করেন। ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত একটি বেসরকারি স্কুলে প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেঁচে থাকার জন্য বহু কিছু ভালবাসেন। তার মধ্যে বাগান করা, গান শোনা, বেড়ানো, ছবি তোলা, রান্না করা অপর্ণার বিশেষ শখ।