চলমান সংবাদ

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হাত হারানো শিশু শ্রমিক পেল ক্ষতিপূরণ

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হাত হারানো শিশু শ্রমিক ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পেল বিচারপতির চকলেট। বিনা ফি’তে আদালতে লড়া আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় বাবা-মায়ের চোখে তখন আনন্দাশ্রু।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে ডান হাত কাটা পড়া স্কুল ছাত্র নাহিদকে ৩০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া নাহিদকে তার এইচএসসি পাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এখানেই শেষ নয়, ছোট্ট নাহিদকে এজলাসের সামনে ডেকে নিয়ে তার কথা শুনলেন। দুষ্টমি না করে ভালো করে লেখাপড়া করতে বলার পাশাপাশি নাহিদের হাতে দুটি চকোলেট তুলে দিলেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাইমা হায়দার।

এসময় বিচারপতি নাইমা হায়দার ছোট্ট নাহিদকে বলেন, অনেক বড় হও। আমি তো একদিন অবসরে যাবো, বুড়ো হয়ে যাবো। তখন এসে দেখা করো। তখন হয়ত তুমি অনেক বড় অফিসার হবে, সেই দোয়া করি।

একপর্যায়ে ছোট্ট নাহিদ তার বাবা-মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে আদালত কক্ষ থেকে বের হলে আবেগঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নাহিদের বাবা-মা তাদের পক্ষে বিনা ফিতে হাইকোর্টে লড়া আইনজীবীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। যে কান্না ছিল বিজয়ের।

আদালতে আজ নাহিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক ও মো. বাকির উদ্দিন ভূইয়া। ওয়ার্কশপ মালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো: কামরুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।

আজকের রায়ের বিষয়ে ব্যারিস্টার অনিক আর হক বলেন, ‘হাইকোর্ট নাহিদকে ১৫ লক্ষ টাকা করে ১০ বছর মেয়াদি দুটি ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে একটি ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরেকটি ফিক্সড ডিপোজিট ইসলামী ব্যংক যাত্রাবাড়ী শাখায় নাহিদের অ্যাকাউন্টে করে দিতে বলা হয়েছে। সেই সাথে নাহিদের এইচএসসি পাস করা পর্যন্ত প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতি তিন মাস পর পর এবিষয়ে আদালতকে জানাতে বলে নাহিদের বিষয়টি চলমান বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে।’

ঘটনার শুরু ২০২০ সালে করোনাকালে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া নাহিদের বয়স তখন ১০ বছর। সংসারের চাপ সামলাতে ছোট্ট নাঈমকে তার মা–বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের নূর ইঞ্জিনিয়ারি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। ওই ওয়ার্কশপেই ভারি কাজ করতে বাধ্য হয়ে ছোট্ট নাহিদের ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়। অস্ত্রোপচার শেষে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় নাহিদের ডান হাতটি। এঘটনায় ক্ষতিপূরন চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।