চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও পাহাড়ধসে জানমাল রক্ষার দাবিতে চট্টগ্রামে সিপিবি’র সমাবেশ।


চট্টগ্রাম শহরের প্রধানতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা বর্ষাকালে জীবনমরণ সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে শহরের অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মানুষের চলাচল থমকে যায়। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার এ সমস্যা থাকলেও এ থেকে মুক্তি মিলছে না। জনপ্রতিনিধিরা আসে যায়। আশ্বাসও মেলে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা মেলা ভার! প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বরাদ্দ হয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু বৃষ্টি কিংবা বর্ষায় মানুষকে ঠিকই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জলাবদ্ধতার এ সমস্যা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নাই।

গতকাল ৭ আগস্ট  ২০২৩ বিকাল ৫ টায়, সিনেমা প্যালেস চত্ত্বরে  সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি  কমরেড অশোক সাহা’র  সভাপতিত্বে  বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর,  সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের এ জলাবদ্ধতা মানবসৃষ্ট, অপরিকল্পিত উন্নয়নই মূলত এ জন্য দায়ী। গত ছয় বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা খরচ হলেও চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন তো হয়নি; বরং প্রকট হয়েছে। এখন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবার বেশি সময় ধরে পানি জমে থাকছে। ভারী বৃষ্টিতে বছরে অন্তত ৮ থেকে ১০ বার ডুবছে নগর। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন ও সিডিএ পরস্পরকে দায়ী করছে।

বক্তরা আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। দেশের ৯০ ভাগ আমদানী-রপ্তানী এ বন্দরের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। গত কয়েকদিনের জলাবদ্ধতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষ করে গার্মেন্ট রপ্তানীকে হুমকীর মুখে ফেলে দিয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিতে গভীর সংকট সৃষ্টি করবে। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ প্যানেল করে তাদের পরামর্শ নিয়ে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে উপযুক্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর খালগুলো উদ্ধার করে পানি চলাচলের উপযোগী করতে হবে। নালা-নর্দমা ভরাট করে বিল্ডিং নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রভাবশালী এবং পেশিশক্তির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।

চট্টগ্রামের পাহাড়ধস  সম্পর্কে বক্তারা বলেন, বর্ষা মৌসুম এলে প্রতিবছরই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ না থাকায় প্রতিবছরই এই ঘটনা ঘটছে।  পাহাড়ধসে  মানুষের মুত্যু হলেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। টানা ভারী বৃষ্টিতেও পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অনেক পরিবার। তাদের সরানো হয় শুধু বর্ষা মৌসুমে। তবে বর্ষা শেষে তেমন কোনো তদারকি দেখা যায় না। যদি স্থায়ী কোনো সমাধান না হয়, তাহলে প্রাণহানি আরও বাড়বে। নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ। অর্থের লোভে নিম্ন-আয়ের পরিবারদের সেখানে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। আগে সেইসব প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড়ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। সর্বোপরি, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনে সরকারের শীর্ষ মহলকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এর কোনো বিকল্প নেই।