পঁচা পেয়াজ

আমদানি করা পেঁয়াজ পঁচে যাচ্ছে – অভিযোগ আমদানিকারকদের ।

ভারত থেকে আমদানি করা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পেঁয়াজ তীব্র তাপদাহে পচে নষ্ট হয়ে যাবার অভিযোগ করেছেন আমদানিকারক ও আড়তদাররা। পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক দীর্ঘদিন সীমান্তে আটকে থাকার কারণে এমনটা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।

দিনাজপুরে হিলি স্থল বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি শাহিনুর রেজা বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলেও কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমোদন বা আইপি দিতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মত দেরি করে।

এই দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার কারণে ট্রাকে পড়ে থেকে পেঁয়াজগুলো পচে গেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মি. রেজা বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজ আমদানির কথা বলার পরপরই বন্দরের আমদানিকারকরা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ট্রাকে পেঁয়াজ বোঝাই করতে বলেছিলেন।

কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে বিলম্বের কারণে এই ট্রাক বোঝাই বস্তাবন্দি পেঁয়াজগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের ভেতরে দীর্ঘ দিন ধরে আটকে পড়ে ছিল।

তীব্র গরমের মধ্যে এতো লম্বা সময় ধরে আটকে থাকায় পেঁয়াজের চালানের বড় অংশ পচে নষ্ট হয়ে যায়।

আমদানিকারকদের এই দাবি কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রবিন্দ্রশ্রী বড়ুয়া।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুরোধ জানানো মানে এই নয় যে আমদানিকারকরা ট্রাক বোঝাই করতে শুরু করবেন।

“কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আইপি ইস্যু করা হলেই ব্যবসায়ীরা এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারবেন। এরপর ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে। আমদারিকারকরা আমাদের কিছু অবহিত করেনি,” বলেন মি. বড়ুয়া।

বর্তমানে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক থেকে টনের পর টন নষ্ট পেঁয়াজ বের হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হিলি স্থল বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি শাহিনুর রেজা

তিনি বলেন, “ভারতের এই পেঁয়াজগুলো নাসিক, ইন্দোর থেকে লোড হয়। সেখান থেকে হিলি বন্দর পর্যন্ত আসতে ৪/৫ দিন সময় লাগে। আবার আইপির অপেক্ষা। সব মিলিয়ে এখন পঁচা মাল ঢুকছে। একটা ট্রাকের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পেঁয়াজই নষ্ট।”

এখনও এমন আরও দুই থেকে আড়াইশ পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক দশ দিন ধরে হিলি বন্দরে আটকে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ভারত থেকে আমদানিকৃত ট্রাক ভর্তি পেঁয়াজ।
বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানির বড় উৎস ভারত – ফাইল ফটো।

ট্রাকের ওপরের কিছু পেঁয়াজ ভালো থাকলেও নিচের বস্তাবন্দি পেঁয়াজগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলে তিনি জানান।

এই অবস্থায় আমদানিকারকরা এই বিপুল পরিমাণ পচা পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় আছেন তারা।

মি. রেজা বলেন, “এসব পেঁয়াজ ভারতে পঁচলেও যেহেতু আমরা অর্ডার করে ফেলেছি এবং দ্রুত মালামাল খালাসের কথা বলেছি তাই ক্ষতির পুরো দায়ভার আমাদেরকেই নিতে হবে। পুরো লোকসান আমাদের। কারণ সিদ্ধান্তে বিলম্ব আমাদের দিক থেকে হয়েছে। এখানে আমদানিকারকরা লোকসান গুনে শেষ করতে পারবে না।”

বর্তমানে শ্রমিকরা বস্তাগুলো নামিয়ে সেখান থেকে ভালো পেয়াজ, আংশিক নষ্ট পেঁয়াজ এবং পুরোপুরি পঁচে গলে যাওয়া পেঁয়াজ আলাদা করছে।

বাছাই করা ভালো ও আংশিক ভালো পেঁয়াজগুলো হিলির গুদামগুলোয় ফ্যানের বাতাসে শুকানো হচ্ছে।

এবং পচা পেয়াজগুলো নামমাত্র দামে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। হিলির মোকামগুলোয় ৫০ কেজির পঁচা পেঁয়াজের বস্তা ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

চট্টগ্রামের হিলি বন্দর দিয়ে খাতুনগঞ্জে আসা পেঁয়াজের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, , স্থানীয় নিম্নবিত্ত মানুষ এই পচা পেঁয়াজগুলো সংগ্রহ করে আবার রাস্তার পাশে পাঁচ থেকে আট টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

আশেপাশের নিম্নমানের হোটেলগুলো রান্নার জন্য এই পঁচা পেঁয়াজগুলো কিনে নিচ্ছে।

ফলে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরে ও কিনতে পেরে এই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো দারুণ খুশি বলে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে দিনাজপুরের হিলিতে আংশিক নষ্ট পেঁয়াজগুলো পাইকারি বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মোকামগুলোয় ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫ টাকা কেজিতে। খুচরা বাজারে তা ৪০-৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আমদানি শুরুর আগে ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

পেঁয়াজ বাছাই করে আলাদা করা হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, “১৫ দিন আগে সরকার আইপি (আমদানি অনুমোদন) দিলে এমন ঝামেলা হতো না। এতদিন ট্রাকগুলো বর্ডারে আটকে ছিল। দেশে ঢুকতে ঢুকতে অর্ধেক মালই নষ্ট। ইন্ডিয়াতে থাকতেই নষ্ট হয়েছে।”

আংশিক পচন ধরা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে ২৮ থেকে ৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে ভালো পেয়াজগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৪ টাকায়। যা খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৫০ টাকায় উঠে যাওয়ার কথা।

এদিকে খাতুনগঞ্জের স্থানীয় ভ্যান চালক ও রিকশাচালকদের পুরোপুরি নষ্ট পেঁয়াজগুলো সংগ্রহ করে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

এখনও বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বন্দরের পথে আছে আরও অন্তত দুই থেকে তিনশ ট্রাক ভর্তি পেয়াজ।

এই নতুন পেঁয়াজগুলো মানে ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচামাল এবং দ্রুত পচনশীল পণ্য তাই কাস্টমসের প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত যেন এটি বন্দর থেকে আমদানিকারকরা খালাস করে নিতে পারেন বন্দর কর্তৃপক্ষ তার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে জানান মি. কাশেম।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সাধারণত প্রতিদিন ১৪ টন ধারণ ক্ষমতার ১৫ থেকে ২০ ট্রাক ভর্তি পেঁয়াজ ঢোকে। যার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার কেজি।

আমদানির অনুমতি না থাকায় সেই সাথে অভ্যন্তরিণ উৎপাদন যথেষ্ট রয়েছে এমনটা দাবি করে গত ১৬ই মার্চ থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর দেশটিতে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। আড়াই মাসের মাথায় পেঁয়াজের দাম দফায় দফায় বাড়তে বাড়তে তিন গুণ ছাড়িয়ে যায়।

অর্থাৎ খুচরা বাজারে যে পেয়াজ মার্চের শুরুতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটা কয়েক দফায় বেড়ে জুন মাসের শুরুতে কেজিতে ১১০ টাকায় দাঁড়ায়।

সে সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির আভাস দেয়। পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ও আমদানির অনুমতি দিলে ৫ই জুন ভারত থেকে পুনরায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।

# সূত্রঃ বিবিসি বাংলা