ঈদ উল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে, দুই বৃহৎ ঈদগাহে লাখ লাখ মুসল্লি
বাংলাদেশে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতর।
দিনের শুরুতেই ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া করেছেন মুসল্লিরা।
তবে প্রায় দু সপ্তাহের বেশি সময়ের দাবদাহের পর গত দুদিন বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি বা ঝড়ো বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে আসায় ঈদগাহ গুলো ছিলো মুসল্লিতে পরিপূর্ণ।
দেশের দুটি বৃহত্তম ঈদগাহ ময়দান- কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া এবং দিনাজপুরের গোর এ শহীদ ময়দানে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছে লাখ লাখ মুসল্লি।
আর ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ছাড়াও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বেশ কয়েকটি জামাতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, তিন বছর পর এবারই কোনো ধরণের বিধি নিষেধ ছাড়াই ঈদের নামাজে অংশ নিলো বাংলাদেশের মুসল্লিরা। করোনা ভাইরাসের কারণেও গত বছর ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলিতেও নিষেধাজ্ঞা ছিলো কর্তৃপক্ষের।
এর আগে শুক্রবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলার কিছু এলাকার মুসল্লিরা ঈদ উদযাপন করেছে।
যেভাবে উদযাপিত হচ্ছে ঈদ
ঈদের নামাজে অংশ নিতে ভোর থেকেই নতুন পোশাক পরিধান করে মুসল্লিরা দলে দলে সমবেত হতে থাকেন দেশের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতে। তবে দেশের সবচেয়ে বড় দুটি ময়দানে নামাজে অংশ নিয়েছে কয়েক লাখ মুসল্লি।
এর মধ্যে শোলাকিয়ায় দীর্ঘকালের প্রথা অনুযায়ী বন্দুকের ফাঁকা গুলির পর সকাল দশটায় ঈদের জামাত শুরু হয়। এর আগে সকালেই পুরো ময়দান ও আশেপাশের এলাকা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে শোলাকিয়ার জামাতে অংশ নেয়ার সুবিধার্থে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
২০১৬ সালে এ ময়দানে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিলো। সে কারণে ঈদের জামাতকে ঘিরে ছিলো কড়া নিরাপত্তা আয়োজন। ১৮২৮ সালে এ মাঠে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
অন্যদিকে দেশের আরেক বৃহৎ ঈদগাহ মাঠ দিনাজপুরের গোর এ শহীদ ময়দানেও উপস্থিত ছিলেন লাখো মুসল্লি। কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী ২২ একর জায়গার এ মাঠে প্রায় দশ লাখ মানুষ এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারে।
এছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় ঈদগাহগুলোতে ঈদের নামাজে অংশ নিয়ে দেশের মঙ্গল কামনায় দোয়ায় অংশ নিয়েছে মানুষ।
নামাজের পর একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে মুসল্লিদের।
এছাড়া বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঢাকাসহ দেশের সর্বত্রই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছে মানুষ।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও গণভবনে প্রধানমন্ত্রী
গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের মানুষকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেছেন অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্ব হিমশিম খেলেও জনগণের সহযোগিতায় বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থানেই আছে।
অন্যদিকে বঙ্গভবনে বিশিষ্ট জনদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
এ সময় তিনি ঈদ আনন্দ ধনী ও গরীবদের ভাগাভাগি করে নেয়া এবং দেশের বিত্তবানদের দরিদ্র জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন।
আগামী সোমবার আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার মেয়াদ সম্পন্ন করবেন। ওই দিন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ নেয়ার কথা।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মি. হামিদ শেষ বারের মতো ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছেন জাতীয় ঈদগাহে।
ওদিকে বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন এবারের ঈদ ‘বেদনাদায়ক ও কষ্টকর’ কারণ অনেক তার দলের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে আর সাধারণ মানুষ নিত্য পণ্যেই কিনতে পারেনি নজিরবিহীন দামের কারণে।
দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান সরকারের পদত্যাগের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।