চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে ২৪ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টিই বন্ধ

চট্টগ্রামে ছোট–বড় ২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। বেশিরভাগই গ্যাস ও জ্বালানি তেলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। এর মাঝে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির অভাবে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।

বর্তমানে চালু রয়েছে ১১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫৮ মেগাওয়াট। কিন্তু এসব কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর মধ্যে খুঁড়িয়ে চলছে ৬টি। অপরদিকে উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদনে চলছে ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এদিকে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে পুরো চট্টগ্রাম। একদিকে রমজান মাস, তার ওপর গরমের তীব্রতা। এর সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং ওয়াসার পানির সংকটে চট্টগ্রামবাসীর জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। গত শনিবার সেহেরির সময় লোডশেডিং ছিল। অনেকে মোবাইলের আলোয় খাবার খেয়েছেন। এছাড়া গতকাল দিনের বেলায় বেশ কয়েকবার লোডশেডিং হয়েছে। রাতেও একই অবস্থা। এতে করে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। জানা যায়, চট্টগ্রামে এখন চলমান তাপদাহে দিনের বেলায় (সকাল ১১টায়) বিদ্যুতের চাহিদা ১৩৫৪ মেগাওয়াট। উৎপাদন হচ্ছে ৬৪৫ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকেসহ চট্টগ্রামে দিনের বেলায় পাওয়া যাচ্ছে ১১০১ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করা হয় ২৫৩ মেগাওয়াট। অপরদিকে বিকাল ৫টা থেকে চট্টগ্রামের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪১৪ মেগাওয়াটে। এখন জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যায় ১২৩৯ মেগাওয়াট। তখন লোডশেডিং করা হয় ১৭৭ মেগাওয়াট।

বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তালিকা : পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উৎপাদন তালিকার তথ্য মতে, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এখন মাত্র ১ নম্বর ইউনিটে (৪৬ মেগাওয়াট) ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াটের ২টি (প্রতিটি ২১০ মেগাওয়াট করে) বিদ্যুৎ কেন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। শিকলবাহা ২২৫ মেগওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে অনেক দিন ধরে। একই সাথে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটিও অনেক দিন থেকে বন্ধ। ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক বন্ধ। এদিকে বছরের পর বছর ধরে টেকনাফ সোলার প্ল্যান্ট ও কাপ্তাই সোলার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে।

চালু বিদ্যুৎ কেন্দ্র : চালু আছে কাপ্তাই ১ নম্বর ইউনিট। এটির উৎপাদন ক্ষমতা ৪৬ মেগাওয়াট। কিন্তু এখন উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট। এদিকে শিকলবাহা জুডিয়াক পাওয়ার প্ল্যান্টে ৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে ৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে নামমাত্র ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ৩০০ মেগাওয়াটের জুলধা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৭৭ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ২৬ মেগাওয়াটের আরপিসিএল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

এদিকে ৫০ মেগাওয়াটের বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে নামমাত্র ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ১০৫ মেগাওয়াটের শিকলবাহা বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ১১০ মেগাওয়াটের বারাকা কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নামমাত্র ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ৩০০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে অর্ধেকেরও কম মাত্র ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ১১৬ মেগাওয়াটের আনলিমা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুধুমাত্র ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, আমাদের কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। এ কারণে আমরা প্রয়োজনীয় লোড পাচ্ছি না। এর ফলে বিদ্যুতের কিছু ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এদিকে বৈশাখের শুরুতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের জনজীবন। বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। প্রচণ্ড তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং ওয়াসার পানির সংকটের মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।