বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৯০): রুচির সংকট 

-বিজন সাহা

গত কয়েকদিন যাবত ফেসবুকে রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অনেক খুঁজে যে লেখার প্রেক্ষিতে পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে, হচ্ছে সেটা পেলাম। কেউ কেউ বলছেন প্রায় পাঁচ দশক আগেই তো শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন দেশে যে রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে সে কথা বলে গেছেন। তাহলে এখন মামুনুর রশীদ একই কথা বললে দোষের কী আছে? এর বিপরীতে অনেকেই বলছেন উনি নিজে যেখানে ঢাকা ক্লাবে মদ খান, নারীদের দিকে ধেয়ে আসেন তাহলে উনি একথা বলেন কি অধিকারে? আবার কেউ বলছেন, উনি নিজেই তো একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, উনি কি নিজের দোষ এড়িয়ে যেতে পারেন?

আমি বিগত অনেক বছর যাবত একটা জিনিস খেয়াল করেছি – বর্তমানে কোন কিছুর ভালমন্দ বিচার করা হয় কি করল তা দিয়ে নয়, কে করল সেটা তা দিয়ে। আমেরিকা গণতন্ত্রের নামে কোন দেশে বোমা ফেললে সেটা মহানুভবতা, রাশিয়া নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ালে, তাদের রক্ষা করতে গেলে সেটা সেটা আগ্রাসন। আমেরিকা কিন্তু গণতন্ত্রের কথা বলেই, ইরাক, লিবিয়া এসব দেশের মানুষের মুক্তির কথা বলেই সেসব দেশ আক্রমণ করেছিল। কিন্তু সেখানে মানুষের ভাগ্য কি পরিবর্তন হয়েছে? রাশিয়াও একই কথা বলে দনবাস আক্রমণ করে। এখনও যুদ্ধ চলছে। কিন্তু একই সাথে সেখানে চলছে গঠনের কাজ, ধ্বংসস্তূপের উপর মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে নতুন ঘরবাড়ি, নতুন জীবনের স্বপ্ন। তবে এটা ঠিক কোন ঘটনা পজিটিভ না নেগেটিভ সেটা নির্ভর করে কে দেখছে তার উপর। আপনি যদি হরিণকে বাঘের মুখ থেকে রক্ষা করেন তবে হরিণের চোখে আপনি তার প্রাণ রক্ষাকারী আর বাঘের চোখে আপনি হত্যাকারী, কেননা সেই বাঘের এখন অনাহারে মরার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তাহলে কি একাত্তরে ভারতের বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো অন্যায় ছিল, আগ্রাসন ছিল? আমেরিকা, চীন – এরা তাই মনে করত। পাকিস্তান ও তার দেশীয় দোসররাও। আপনারা? আমরা যদি কি বলল তারচেয়ে কে বলল সেটাকে বেশি গুরুত্ব দেই তাহলে এমন দিন আসবে – যখন কেউ আমাদের পথ দেখাতে পারবে না। সময়ের সাথে সাথে সমাজ বদলায়, বদলায় ভালো মন্দের সংজ্ঞা, কিন্তু কালজয়ী লেখা, কালজয়ী বাণী সব সময়ের জন্য একই বার্তা দিয়ে যায় – সেটা হয় মানবিক না হয় দানবিক। ফ্যাসিবাদী কথাবার্তা নিজের কুকুর শাবক বললে সেটা  মানবিক, গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না। কিন্তু আমরা যদি লোক দেখে তার কথার বিচার করি তাহলে যখন সেই লোক আর পছন্দের থাকবে না, তখন তার বাক্যও আর গ্রহণযোগ্য হবে না। বর্তমানে টেন্ডেন্সি যখন সব কিছু অস্বীকার করা তখন তো আর পবিত্র বলে কিছু থাকবে না, মানব জাতির হাজার বছরের অর্জন সবই তো ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। তখন?

মুখে যতই বড় বড় কথা বলি না কেন, আজকাল অধিকাংশ মানুষ নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ, নিজেদের এগোর কাছে এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা যে সে অভারঅল চিত্রটা দেখতে পায় না, শুধুমাত্র নিজের পছন্দের অংশ দেখেই সে ক্যামেরার শাটার টেপে, ফলে যে ছবি সে পায় তা না যায় নিজের ঘরে ঝোলানো, না যায় কাউকে দেখানো।

যেহেতু দেশের সাথে যোগাযোগ মূলত ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দেখে তাই কি মামুনুর রশীদ, কী হিরো আলম এদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে খুব বেশি জানি বললে ভুল হবে। তবে সত্তর ও আশির দশকে যখন যোগাযোগটা বেশি ছিল তখন মামুনুর রশীদ সম্পর্কে জানতাম, তাঁর নাটক দেখতাম। বিগত অনেক বছর মূলত রাজনৈতিক কারণে বা বলতে গেলে রাজনীতি ব্যবসায়ীদের দাপটে দেশের বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সবাই এতটাই বিতর্কিত রূপ ধারণ করেছেন যে এদের সম্পর্কে জানতে বা শুনতে তেমন আর আগ্রহ জাগে না। নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম আছে। তবে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখা হয় না। এটা একান্তই আমার নিজের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা।

মনে পড়ে পেরেস্ট্রইকার সময়ের কথা। গরবাচেভ সুখোই জাকন ঘোষণা করলেন, মানে বলতে গেলে মদ্যপান নিষিদ্ধ করলেন। কথায় আছে পবিত্র স্থান শূন্য থাকে না। ফলে ভোদকার জায়গায় এলো চোলাই মদ। মানুষ সেই মদ খেয়ে অসুস্থ হতে শুরু করল। মারাও গেল অনেকেই। একই অবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। যদি সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে না দেয়া হয় সেখানে অসুস্থ সংস্কৃতি আসবে সেটাই তো স্বাভাবিক। যে কবি গান, জারি গান, বাউলের গান, লালনের গান, রামমঙ্গল, কৃষ্ণলীলা, যাত্রা পালা ইত্যাদি ছিল হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বাঙ্গালীর বিশেষ করে গ্রাম বাংলার প্রাণ, বিনোদনের একমাত্র উপায়, আজ সেসবই বিভিন্ন অজুহাতে হয় নিষিদ্ধ, নয় তো সীমাবদ্ধ। এর স্থান দখল করেছে ওয়াজ যা তার আগের চরিত্র হারিয়ে ফেলে হয়েছে যেকোনো ধরণের নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার, ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির প্রোপ্যাগান্ডার মেশিন। এই সুযোগ নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে হিরো আলমরা। হিরো আলম আজ বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রতিনিধি – এটা তার দোষ নয়, এই দোষ সরকারের, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের, বুদ্ধিজীবীদের। এরা সমাজের চাহিদা মেটাতে পারেনি বলেই সমাজ হিরো আলমদের গ্রহণ করেছে। তাহলে এটা কি রুচির সমস্যা? নাকি রুচিসম্মত জিনিসের অভাব? মানুষ ভেজাল খেতে চায় না, কিন্তু বাজারে যখন ভেজাল ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না অথবা ভালো জিনিসের মূল্য যখন মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে তখন মানুষ করবে কি? মানুষ তখন ভেজাল খেতে শুরু করে। এক সময় তাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর একদিন সেটাই হয় কালেক্টিভ রুচি।  মামুনুর রশীদের লেখা দেখে মনে হয়েছে তিনি যে হিরো আলমের কথা বলেছেন সেটা ব্যক্তি হিরো আলম নয়, এটা কালেক্টিভ হিরো আলম যা আমাদের শুধু সংস্কৃতি নয়, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংবাদ মাধ্যম সব নিয়ন্ত্রণ করে।

পৃথিবীতে পারফেক্ট মানুষ বলে কিছু নেই। সবাই বিভিন্ন দোষে দোষী। একদল মানুষ সমাজতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিচ্ছে, অন্য দল গণতন্ত্রের জন্য। মহাত্মা গান্ধী কারও কাছে দেবতুল্য, কারও চোখে ঘৃণ্য। তাছাড়া সব মানুষই মুখোসধারী। তাকে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন মুখোস পরে থাকতে হয়। সে বাসায় স্বামী বা স্ত্রী, বাবা বা মা, আবার অফিসে বস বা কর্মচারী। আর এই কাজের সাথে তাল মিলিয়ে সে যদি নিজেকে উপস্থাপন করত না পারে তাহলে না অফিসে, না ঘরে কোথাও সে সফল হতে পারবে না। বাড়িতে কেউ বস হতে চাইলে সেটা যেমন সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করবে, অফিসে বাবা মা বা সন্তানের মত ব্যবহার করলে ব্যবসা লাটে উঠবে। এক কথায় মানুষকে সফল হতে হলে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। কিন্তু এর মানে তেল মারা নয়, নিজেকে বা অন্যকে ছোট করা নয়। তাই যারা মামুনুর রশীদের এই বক্তব্যের সাথে তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে আসেন তারা মনে হয় পারত পক্ষে যারা সংস্কৃতিকে দূষিত করছে তাদের পক্ষেই কাজ করছেন।

সব মানুষের বিভিন্ন পরিচয় থাকে। যারা পাবলিক ফিগার তাদের আমরা চিনি তাদের ব্যক্তি জীবন দিয়ে নয়, তাদের পাবলিক পারফর্মেন্স দিয়ে। একজন কবিকে আমরা পছন্দ করি তার কবিতার জন্য, লেখককে লেখার জন্য, অভিনেতাকে অভিনয়ের জন্য। এদের সাথে আমাদের সম্পর্ক শুধু তাদের কাজের মধ্য দিয়ে – দূর থেকে। একজন ডাক্তারের ক্ষেত্রে সেটা বলা যাবে না, কারণ ডাক্তারের সাথে আমার সরাসরি কন্টাক্টের সুযোগ বা প্রয়োজন আছে। সেক্ষেত্রে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে তাঁকে বিচার করতে পারি লোক হিসেবেও। কিন্তু একজন শিল্পীর সৃষ্টি আমার ভালো লাগতেও পারে বা না লাগতেও পারে যার উপর ভিত্তি করে আমি তার কাজের সমালোচনা করতে পারি, কিন্তু তার ব্যক্তি জীবন টেনে আনা কতখানি সুরুচির পরিচয় সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

রুচির দুর্ভিক্ষের মূল কথা সংস্কৃতি। এখানে ব্যক্তি মামুনুর রশীদ বা হিরো আলমকে নিয়ে কথা বলা অর্থহীন। দেখা দরকার বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের অবদান। এমনকি যদি সেটা অতীত অবদানও হয়। এ প্রসঙ্গে রাশিয়ার বর্তমান কিছু ঘটনার কথা উল্লখে করা যায়। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অনেক খ্যাতিমান শিল্পী, কবি, লেখক, অভিনেতা দেশত্যাগ করেছে। এদের কেউ কেউ এমনকি ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধ করছে বা সেদেশের সেনাদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছে, করছে। ফলে দেশের অনেকেই চাইছে যারা এই কঠিন সময়ে দেশের পাশে দাঁড়ায় নাই তাদের লেখা, সিনেমা এসব বাতিল ঘোষণা করা হোক। এদের যুক্তি, দেশে সরকার বদলায়, এমনকি রাষ্ট্র কাঠামো বদলায়, কিন্তু জন্মভূমি থেকে যায়। তাই যারা দুর্দিনে জন্মভূমিকে ত্যাগ করে তাদের প্রতি সহানুভূতি কেন? কিন্তু যারা এ ধরণের পদক্ষেপের বিপক্ষে তাদের যুক্তি একজন মানুষ হাওয়া থেকে কবিতা উপন্যাস লেখে না, সে দেশের আলো হাওয়াতে বড় হয়, দেশের বাতাসে নিঃশ্বাস নেয় – তাই তাদের সৃষ্টি, বিশেষ করে যদি সেটা হয় কালজয়ী, তবে তা দেশের সম্পদ, জাতির সম্পদ। আজ তারা যে কারণেই হোক, বিরোধী শিবিরে গেলেও, আমরা জাতীয় সম্পদ ত্যাগ করতে পারি না। একই ভাবে যদি কোন কাজ হয় সমষ্টিগত শ্রম, যেমন সিনেমা, তাহলে কেন একজনের অপরাধে একটা কালেক্টিভ শাস্তি পাবে? কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ভেবে দেখার বিষয়। আমাদের দেশে অনেকেই পরবর্তী জীবনে ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় কবি আল মাহমুদের বিরোধিতা করে। বিরোধিতা করে তাঁর কবিতার। কিন্তু তিনি কি তাঁর শেষ জীবনের আদর্শের ভিত্তিতে প্রথম জীবনের কালজয়ী সোনালী কাবিন বা অন্যান্য কবিতা লিখতে পারতেন? তাঁর কবিতা বাতিল হলে তা কি বাংলা সাহিত্যকেও ক্ষতিগ্রস্থ করবে না? বাংলা ভাষা কি কিছুই হারাবে না? তাই মামুনুর রশীদের আলোচনা করতে গেলে আমরা যেন “ওরা কদম আলী” সহ তাঁর বিভিন্ন নাটকের কথা মাথায় রাখি, ঢাকা ক্লাবে তিনি কি করেছেন তারচেয়ে বেশি করে স্মরণ করি বাংলা নাটকে তাঁর অবদানের কথা। তিনি তাঁর জায়গা থেকেই বর্তমান সাংস্কৃতিক অবক্ষয় দেখছেন, দেখেছেন। সমাজের অবহেলিত অংশ থেকে উঠে আসার কারণে হিরো আলমের প্রতি আমাদের সমবেদনা থাকবে, থাকতেই পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি বাংলা সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করবেন। করতে পারেন, তবে সেজন্যে তাকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। কেন, আমাদের দেশে অতি সাধারণ ব্যাক গ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা কোন কবি, সাহিত্যিক কি নেই? আছে, প্রচুর আছে। বর্তমান বাংলাদেশের অধিকাংশ সফল মানুষই খুব সাধারণ ব্যাক গ্রাউন্ড থেকে উঠে এসেছেন। এমনকি অনেকের ছোটবেলা কেটেছে হিরো আলমের চেয়েও অনেক কঠিন পরিবেশে। কিন্তু তারা উঠে এসেছেন তাদের শিল্প, সাহিত্য দিয়ে, শিল্প সাহিত্যকে দূষিত করে নয়। ফ্লয়েডের প্রতি আমাদের সহানুভূতি থাকবে, তার মানে এই নয় যে আমরা আমাদের সন্তানদের ফ্লয়েডের মত করে গড়ে তুলব। তাই এই সাংস্কৃতিক বিতর্কে যখন হিরো আলমের পাশে দাঁড়াবেন একটু ভেবে দেখবেন আপনি চান কিনা আপনার সন্তান একজন হিরো আলম হয়ে গড়ে উঠুক। কেননা আমার কেন যেন মনে হয়, যারা হিরো আলমের পক্ষ নিয়ে মামুনুর রশীদের মুন্ডুপাত করছে তাদের অধিকাংশই হিরো আলমের শিল্প কর্ম পছন্দ করে না। অনেকেই হয়তো হিরো আলমের শিল্পের সাথে পরিচিত নন, হতে চান না। যদি হন নিজেদের মধ্যে হিরো আলমের শিল্পকে অনেকেই সমালচনাও করে। নিজের মতামতকে সম্মান করুন, হাওয়া বুঝে আজ এদিকে কাল ওদিকে ছাতা ধরবেন না, সেটা সুবিধাবাদের জন্ম দেয়। আগেই বলেছি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আজ অশুভ শক্তির আনাগোনা। তারা ওঁত পেতে বসে আছে কীভাবে বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলার আবহমান সংস্কৃতিকে বিতর্কিত করে তোলা যায় আর সেই সুযোগ ব্যবহার করে এর উপর মরণ আঘাত হানা যায়। দেশ ভাগের পর একবার সেই চেষ্টা হয়েছিল যার সূত্র ধরে আমরা পেয়েছি বাহান্ন, পেয়েছি একাত্তর, পেয়েছি বাংলাদেশ। শত্রু আজ অনেক বেশি সংঘবদ্ধ, আমরা বিচ্ছিন্ন। আজ নিজেদের মধ্যে হানাহানির সময় নেই, যারা এই সংস্কৃতির জন্য লড়াই করতে চান, তাদের এক হয়ে যুদ্ধ করতে হবে, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হবে। আসলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ যা হচ্ছে সেটাই প্রমাণ করে মামুনুর রশীদের আশঙ্কা – আমরা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সভ্যতার যে সংকট রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন আমরা সেই সংকট থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারিনি, পারছি না।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে বাংলাদেশের কোন ক্ষেত্রেই কোন অবদান রাখিনি, রাখতে পারিনি। তাই এসব নিয়ে হয়তো কথা বলার অধিকার অনেকের চেয়েই কম। যা বলি, সেটা শুধুমাত্র দেশের প্রতি ভালবাসা থেকেই। তবে একটা কথা জানি, ইন্টারনেট ঘেঁটে ওষুধ পাওয়া গেলেও অসুস্থ হলে সর্বোত্তম উপায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। অনেকেই মামুনুর রশীদ বা তাঁর পক্ষে বলা নাট্য কর্মীদের কুলীন অপবাদ দেবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন তারা নিজেরাও কিছু অনেক ব্যাপারেই খুবই সিলেক্টিভ। এমনকি যারা সবার সাথে অনায়াসে মেলামেশা করে বলে দাবি করে তারাও কাউকে না কাউকে এড়িয়ে যায়। তাছাড়া মামুনুর রশীদ হিরো আলমের ব্যাক গ্রাউন্ডের জন্য কিছু বলছেন না, বলছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে যেটা বাংলা সংস্কৃতির মুখ উজ্জ্বল করে না বলে অনেকেই বিশ্বাস করে, তবে মুখ খুলে বলে না। মামুনুর রশীদ নিজের সারা জীবনের কর্ম দিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে কথা বলার অধিকার অর্জন করেছেন, তাই তিনি যখন বলেন আমাদের সংস্কৃতি অসুস্থ সেটা একটু গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করলে ক্ষতি কিছু হবে না, কিন্তু তাকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করলে সেটা এক সময় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা
শিক্ষক, গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া